‘পর্ন ইন্ডাস্ট্রির আয় কোটি ডলার, কিন্তু অভিনেতাদের হাতে কিছুই আসে না’ — মিয়া খলিফা

মিয়া কালিস্তা মূলত পরিচিত মিয়া খলিফা নামেই। এই পরিচিতির পেছনে আছে ২০১৪ সালে মাস তিনেকের জন্যে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে তার যুক্ত থাকা। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে বিবিসি-তে প্রচারিত হার্ডটক অনুষ্ঠানে মিয়া খলিফা একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন স্টিফেন স্যাকার। এতে উঠে এসেছে তার পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার কারণ, ইন্ডাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে আসা ও তার প্রতিক্রিয়া এবং পর্ন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে নানা আঙ্গিকের আলোচনা। এই সাক্ষাৎকারে মিয়া খলিফা অনেক মিথ্যা কথা বলেছেন এমন দাবি করে বেশ কিছু ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া যায়। তবে অনুবাদক মিয়ার বক্তব্যের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের চেয়ে পর্নোগ্রাফির ভেতর-বাহির নিয়ে মিয়ার আলোচনার মূল বিষয়গুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন, আর এই সত্য-মিথ্যা যাচাই আসলে অনুবাদকের পক্ষে সম্ভবও নয়। অনুবাদের ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারটিকে পাঠোপযোগী করতে কিছুটা পরিমার্জন করা হয়েছে। মূল সাক্ষাৎকারটি পাওয়া যাবে এখানে

স্টিফেন স্যাকার: হার্ডটকে আপনাদের স্বাগতম। আমি স্টিফেন স্যাকার। সেক্সের সাথে মানুষের চিন্তাবিষ্টতা একেবারেই নতুন কিছু নয়, কিন্তু ইন্টারনেটের আগমণে কামনার প্রতিটি এলাকা আবিষ্কার ও তার নেতিবাচক ব্যবহার খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। অনলাইন পর্ন ইন্ডাস্ট্রি প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা তৈরি করলেও এসব মুনাফার ফলভোগী হলো কর্পোরেট মোড়লরা; কোনভাবেই যৌন দৃশ্যে বা যৌনকর্মে অভিনয় করা নারী বা পুরুষরা নয়। আমার আজকের অতিথি মিয়া খলিফা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে একজন পর্ন পভিনেত্রী ছিলেন। হিজাব পরে যৌন দৃশ্যে অভিনয় করে তিনি বিশ্বব্যাপী কুখ্যাত হয়েছিলেন। বছরাধিককালের হুমকি ও অনিরাপত্তাবোধের পর এখন তিনি কথা বলছেন। পর্ন ইন্ডস্ট্রি ও একবিংশ শতাব্দীর সংস্কৃতি সম্পর্কে তার গল্প আমাদের কী বলে?

মিয়া খলিফা, হার্ডটকে আপনাকে স্বাগতম।

মিয়া খলিফা: আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে ধন্যবাদ।

স্টিফেন: বিভিন্ন দিক থেকে আপনি একজন খুবই বিখ্যাত নারী। ইন্সটাগ্রামে আপনার এক কোটি ৬০ লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। তবে আপনার এই খ্যাতির মূলে রয়েছে পর্ন ইন্ডাস্ট্রির সাথে আপনার সংক্ষিপ্ত সময়ের যোগাযোগ। এই বিষয়টির সাথে মানিয়ে নেয়া কি আপনার জন্যে কঠিন?

মিয়া: নিশ্চিতভাবেই। ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ার পর আমি ডিলিট করেছিলাম…আসলে, আমি আমার ইন্সটাগ্রাম ডিলিট করিনি। ইসলামিক স্টেটের সমর্থকরা সেটি হ্যাক করে বিভিন্ন ধরনের প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দিয়েছিল। তাই ইন্সটাগ্রাম সেই অ্যাকাউন্টটি সরিয়ে দেয়। এরপর এক বছর পর্যন্ত আমি নতুন করে আরেকটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করিনি। আর এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যাকে বলা যেতে পারে একজন সাবেক ও কুখ্যাত পর্নস্টার হিসেবে আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়ে বিদ্যমান আখ্যানগুলো পরিবর্তনের চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত। আর তাই আমি আবার একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট তৈরি করি কারণ সম্ভবত আমি হতে চাচ্ছিলাম একজন ‘প্রভাবক’, আসলে সঠিক শব্দটি খুঁজে পাচ্ছি না।

স্টিফেন: হুম, কারণ যদি আপনি আপনার নাম লিখেন গুগলে, যেমনটা আমার করতে হয়েছে গবেষণার জন্যে…

মিয়া: ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে?

স্টিফেন: হ্যা। আসলে এটি আমার কাজের অংশ ছিল। কিন্তু আসল কথা হলো, এটি করা হলে অসংখ্য ভিডিওর লিংক চলে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে ‘পর্নস্টার’ শব্দটি দেখা যায়। এটি এমন এক বিষয় যা থেকে আপনি কখনোই বেরিয়ে আসতে পারবেন না…

মিয়া: প্রথমত আমি বলতে চাই পুরো বিষয়টা খুব রূঢ় শোনাচ্ছে। তবে আমি (বেরিয়ে আসার) চেষ্টা করছি।

স্টিফেন: হ্যাঁ, এখন আমি বুঝতে পারছি।

মিয়া: আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি।

স্টিফেন: আমি আসলে এটি বলতে চাই নি যে আপনি চান ইন্টারনেটে আপনাকে এভাবে দেখা যাক। কিন্তু প্রযুক্তি আসলে এভাবেই কাজ করে, মানে ইন্টারনেটের কাজ করার এটিই পদ্ধতি।

মিয়া: হ্যাঁ। গুগুলে আমাকে নিয়ে ইতিবাচক আধেয় খুব বেশি নেই আর আমরা এটি পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। একমাত্র বা অনেকগুলো বিষয়ের প্রথম বিষয় হলো এসব সাইটের উপর আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু এসব সাইটের হোমপেইজে এমন ভাবে অনেক কিছু লেখা থাকে যেন আমিই আসলে এই সাইটগুলো চালাচ্ছি। এমনকি উইকিপিডিয়ায় আমার পেইজে তারা লিখে দিয়েছে যে ঐ সাইট আমার আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইট। আর আইনি পদক্ষেপসহ আমরা অসংখ্যবার চেষ্টা করেছি এগুলো ইন্টারনেট থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু তারা কিছুই শুনেনি। আমরা অসংখ্য প্রস্তাব দিয়েছি।

স্টিফেন: এই বিষয়গুলো নিয়ে একে একে আলোচনা করা যাক। একজন বালিকা যাকে তার জন্মভূমি লেবানন থেকে তার অভিভাবকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছিল; যে বিদ্যালয়ের শিক্ষা পেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ছিল স্পষ্টভাবেই বুদ্ধিমান; যে ইতিহাস বিষয়ে পড়েছে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে; কিভাবে জড়িয়ে গেলেন সেক্স বা পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে?

মিয়া: আমি মনে করি না আত্মসম্মানের স্বল্পতা কারও সাথে বৈষম্য করে। আপনি একটি দারুণ পরিবার থেকেই আসুন কিংবা আসুন তেমন কোন পরিচয়হীন এক পরিবার থেকে। আমার পুরো বাল্যকাল আমি অতিরিক্ত শারীরিক ওজন নিয়ে কাটিয়েছি আর আমি কখনোই ছিলাম না পুরুষদের মনোযোগ পাওয়ার মতো আকর্ষণীয় বা তেমন উল্লেখযোগ্য। আর কলেজে থাকার প্রথম বছরে হঠাৎ করেই আমি এই ওজন কমাতে সক্ষম হলাম, ছোট ছোট কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে। আর যখন আমি পাশ করে বের হলাম তখন একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধনের জন্যে আমি তৈরি ছিলাম। আমি অত্যন্ত সচেতন ছিলাম আমার স্তন নিয়ে কারণ ওজন কমার প্রথম প্রভাব এর উপরই পড়েছিল। আমার ওজন প্রায় ৫০ পাউন্ড কমে গিয়েছিল, আমি জানি না সেটি আসলে কত কেজি বা অন্য কিছু!

স্টিফেন: এটি আসলেই উল্লেখ করার মতো পরিমাণ…

মিয়া: হ্যাঁ।

স্টিফেন: এটি আপনার শরীর, আপনার শারীরিক গঠনকে বদলে দিয়েছিল।

মিয়া: পুরোপুরি। তখন আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল আমার স্তন নিয়ে। তাই আমি চাচ্ছিলাম এগুলো আগে যেমন ছিল, কম-বেশি সেই অবস্থায় ফিরে যেতে। আর একবার যখন আমি তা করে ফেললাম, তখন আমি পুরুষদের মনোযোগ পেতে শুরু করলাম। আর আমি এর সাথে পরিচিত ছিলাম না। আর আমি ভাবতাম এগুলো চলে যাবে যদি না আমি একে ধরে রাখি এবং যা আমাকে করতে বলা হয়েছিল বা আমার কাছ আশা করা হয়েছিল তা না করি। তাছাড়া আমি যখন প্রথমবারের মতো একে অনুভব করি, অর্থাৎ প্রশংসা বা এর বৈধকরণ, আমি চাই নি এটি চলে যাক।

স্টিফেন: হুম। আমার মনে হয় আসলেই আপনার পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান ছিল। আপনি ছিলেন একজন তরুণ স্নাতক, খুঁজে নিতে চাচ্ছিলান কোন একটা চাকরি। আর আপনি রাস্তায় নজরে পড়েছিলেন কোন এক লোকের যে বলেছিল, “আমি তোমার সাথে কাজ করতে পারি।” আর এরপর সে খোলামেলাভাবেই বলেছিল এটি পর্ন ব্যবসা। আপনার ভেতর এমন কী কাজ করেছিল যা আপনাকে ঐ অবস্থা থেকে দৌড়ে না পালিয়ে এতে যুক্ত করেছিল?

মিয়া: না…এটি আসলে এমন ছিল না। এটা শুধুমাত্র এমন ছিল না যে, “আচ্ছা তুমি কি পর্নে অভিনয় করতে চাও?” এটি এর চেয়েও বেশি ছিল। “ওহ, তুমি খুব সুন্দর!”, অথবা, “তুমি কি মডেলিং করতে চাও?” “ওহ, তুমি কি জানো তোমার একটি দারুণ শরীর আছে?”, অথবা, “আমার মনে হয়ে তুমি ন্যুড মডেলিং করলে ভালো করতে পারবে।” অনেকটা এমন ছিল। আর আমি যখন স্টুডিওতে গিয়েছিলাম, সেটি ছিল খুবই সম্মানজনক একটি জায়গা। মায়ামির ডোরাল ফ্লোরিডায় দারুণ এক লোকেশনে ছিল সেটি। এটি ছল খুব পরিচ্ছন্ন। সেখানে যারা কাজ করতো সবাই ছিল ভালো। সেখানকার সবগুলো শয়নকক্ষ সাজানো ছিল পারিবারিক ছবি দিয়ে। মানে সেখানে এমন কিছু ছিল না যা ছিল কৌশলী কিংবা আমাকে অস্বস্তিতে ফেলার মতো। আর সেখানে…প্রথমবার যখন আমি প্রবেশ করি, সেটা পর্ন চলচ্চিত্রে আমার প্রথম অভিনয় ছিল না। এটি ছিল দ্বিতীয়বারের সময়। প্রথমবারে মূলত সেই “তুমি কি এটা করতে চাও?” আর চুক্তিস্বাক্ষর জাতীয় বিষয়গুলো বেশি ছিল।

স্টিফেন: আপনি কথা বলছিলেন এমন মানুষদের সম্পর্কে যারা অনভিজ্ঞ তরুণ নারীদের ব্যবহার করে। আমি খুব অবাক হচ্ছি, সেটি নিয়ে এখন আমরা কথা বলবো। আপনার কি কখনো ধোঁকায় পড়ার মতো অনুভূতি হয়েছে? যখন আপনি আপনার কমবয়সী নিজের দিকে ফিরে তাকান, এখন আপনার বয়স ২৬, তখন আপনি ছিলেন ২১ বছরের; আপনি যখন সেই ২১ বছর বয়সীর দিকে তাকান তখন কি আপনার মনে হয় যে তাকে ব্যবহার করা হয়েছিল? সে ছিল অবস্থার শিকার?
আমি শুধু পৃথিবী থেকেই নয়, আমার পরিবার ও আমার আশেপাশের মানুষের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। আর এটি ছিল বিশেষভাবে ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে আসার পর, তখনও আমি ছিলাম একাকী। আর আমি জানি কিছু ভুল আসলে কোনভাবেই ক্ষমা করা যায় না। কিন্তু সময় সব ক্ষত পূরণ করে দেয় আর বিষয়গুলো এখন ভালো হয়ে উঠছে।

মিয়া: আমি মনে করি তার কাছে তখন এমন কোন উপায় ছিল না যার মাধ্যমে সে বুঝতে পারতো যে তার অবস্থানের সুযোগ নেয়া হচ্ছে। আর সে বুঝে নি যে তাকে যা যা বলা হয়েছে তা আসলে ছিল মিথ্যা। হয়তো খুব বেশি মিথ্যা ছিল না। কিন্তু তারা আসলে চাচ্ছিলো আমাকে বিভ্রান্ত করে তাই করাতে যা তারা চায় যে আমি করি। আমি আসলে নিজেকে একজন ‘অবস্থার শিকার’ হিসেবে দেখি না। আমি এই শব্দটা পছন্দ করি না। আমিই আমার নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যদিও সেগুলো ছিল ভয়াবহ সব সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি নারীদের যদি প্রস্তাব দেয়াও হয় তাহলে সেই প্রস্তাব দেয়ার কৌশল বা উপায়ে পরিবর্তন আসা প্রয়োজন।

স্টিফেন: এটি একটি ইন্ডাস্ট্রি এবং হাজার কোটি ডলারের একটি ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্রীয় উপাদান হলো তরুণ মানুষেরা, নারী ও পুরুষরা যাদেরকে ক্যামেরার সামনে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয় আর তারা তাতে রাজি হয়। আপনার এসব ভিডিও—যেগুলো হাজার হাজার বার ভিউ হয়েছে—তৈরি করার প্রক্রিয়ায় আপনার নিজের আসলে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব ছিল?মিয়া: কিছুই না। খুবই অল্প। অনেকটা এক পোষাক থেকে আরেক পোষাক পরার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র “হ্যা” বা “না” বলার মতো। ক্যামেরায় কী রেকর্ড করা হচ্ছে, এর মূলভাব, বিষয়, কোথায় ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে এসব বিষয়ে খুব অল্পই নিয়ন্ত্রণ থাকতো। এই বিষয়গুলো আসলে আপনার হাতে নেই।

স্টিফেন: কিন্তু আমার কাছে একজন বহিরাগত ও মৌলিক বিষয় হিসেবে অবশ্যই সম্মতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। যদি তারা আপনাকে এমন ধরনের সেক্সে অভিনয় করতে বলে যা আপনি কোনভাবেই করতে চান না…

মিয়া: না, তারা আপনাকে জোর করতে পারবে না। কোনভাবেই না।

স্টিফেন: নিকট অতীতে আপনি সেক্স ভিডিওতে অভিনয় করার সময় আপনার নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে আগ্রহদ্দীপক আলোচনা করেছেন। আপনি বলেছেন যে আপনার এক ধরনের ব্ল্যাক আউট হতো আর এখন যখন আপনি পেছনে ফিরে তাকান তখন অনেক কিছুই স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন না। আপনি কি আমার কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবেন যে, আপনার মাথার ভেতর কী চলছিল, যখন আপনি এই ইন্ডাস্ট্রির গভীরে প্রবেশ করেছিলেন?

মিয়া: আমার মনে হয় যখন আমি এই কথা বলেছিলাম তখন আসলে যে শব্দটি আমি খুঁজে পাই নি তা হলো অ্যাড্রেনালিন। আমার মনে হয় আমার অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ ছিল খুব বেশি। কারণ আমি জানতাম আমি যা করছি তা ছিল আমি যা যা করবো বলে ভেবেছিলাম সেগুলোর সীমার চেয়ে একেবারে বাইরের বিষয়। অথবা এমন কিছু যা আমি করবো বলে ভাবতে পারতাম তার চেয়েও ভিন্ন। তাই অ্যাড্রেনালিন নিঃসরণ ছিল সর্বোচ্চ। যা পেছনে ফিরে তাকিয়ে যা যা ঘটেছিল তার সবকিছু স্মরণ করা কঠিন করে তুলে।

স্টিফেন: আপনার কি এখন এ ব্যাপারে কথা বলা কঠিন মনে হচ্ছে?

মিয়া: হ্যাঁ। কিছুটা।

স্টিফেন: আচ্ছা। এখন আমি বুঝতে পারছি। আর আপনি কি মনে করেন এটি কোন পার্থক্য তৈরি করে—আমি আসলে আপনার কাছে শুধু জানতে চাচ্ছি, আপনি একজন আরব বংশোদ্ভূত, আপনার অভিভাবকরা এসেছেন লেবানন থেকে—…

মিয়া: হ্যাঁ, আমি লেবানন থেকে এসেছি। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই।

স্টিফেন: ঠিক তাই। আপনি একজন আরব আর আরব সংস্কৃতি সামগ্রিকভাবে খুবই রক্ষণশীল। আপনি কি মনে করেন যে এটি ছিল আরেকটি স্তর যা আপনাকে খুলে ফেলতে হয়েছিল এই ব্যবসায় আসার জন্যে?

মিয়া: সম্ভবত। আমার মনে হয় এর একটি অংশ ছিল বিদ্রোহ করা। আর এর পেছনে ছিল সীমা ও চরিত্রের চেয়ে অনেক বাইরের এমন কিছু করতে চাওয়া যা এমনকি আমাকেও চমকে দিয়েছিল।
স্টিফেন: আমার মনে হয় এটি খুব বোকার মতো প্রশ্ন হবে, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আপনার পরিবার আপনি কী করছেন সে ব্যাপারে কিছুই জানতো না।

মিয়া: না। আর যখন তারা এই বিষয়ে জানতে পেরেছিল তারা আমাকে তাদের অংশ হিসেবে অস্বীকার করেছিল।

স্টিফেন: তাই?

মিয়া: হ্যাঁ।

স্টিফেন: এটা অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন ছিল।

মিয়া: হ্যাঁ। আমি শুধু পৃথিবী থেকেই নয়, আমার পরিবার ও আমার আশেপাশের মানুষের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। আর এটি ছিল বিশেষভাবে ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে আসার পর, তখনও আমি ছিলাম একাকী। আর আমি জানি কিছু ভুল আসলে কোনভাবেই ক্ষমা করা যায় না। কিন্তু সময় সব ক্ষত পূরণ করে দেয় আর বিষয়গুলো এখন ভালো হয়ে উঠছে।

স্টিফেন: বিষয়গুলো পরিবর্তিত হচ্ছে?

মিয়া: হ্যাঁ।

স্টিফেন: আমি আপনাকে এই ইন্ডাস্ট্রির গতি-প্রকৃতির আরেকটি দিক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে চাই আর তা হলো ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও টাকা। প্রথমেই, আমরা এ নিয়ে বলেছি, নারী ও পুরুষরা হলো এই ব্যবসার মূল পরিবেশক (তাদের অভিনয়ই এখানে আসল)। কিন্তু আপনি যাদের সাথে কাজ করেছেন সেখানে কি কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অবস্থানে কোন নারীকে দেখেছেন?

মিয়া: হ্যাঁ, অবশ্যই। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার ও অন্য যারা কাজ করতেন তাদের খুব কাছের মানুষ ছিল একজন নারী। সে ছিল খুব ভালো, সম্মানীয়, পেশাদার। এখানে অনেক নারী কর্মী আছে। পেছনে অর্থাৎ সেলস এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলোতে তারা কাজ করে। তাই, অফিসগুলোতে নারী দিয়ে পূর্ণ থাকে। আর আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কিভাবে তুমি এই চাকরি খুঁজে পেলে? মানে কিভাবে এমন একটি চাকরিতে তুমি আবেদন করেছো?” আর সে বলেছিল একজন বন্ধুর মাধ্যমে।

স্টিফেন: হুম। এর আর্থিক দিকটিও খুব অন্যরকম। যখন আপনি একটি ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন হিজাব পরে—আমি এর ব্যাপারে একটু পরই কথা বলবো—এটি কিছু সময়ের জন্যে আপনাকে পর্নহাবে—যেটি হলো পর্নোগ্রাফির অ্যাগ্রেগেটর সাইট—সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্ন অভিনেত্রীতে পরিণত করেছিল। আর আপনি জানেন এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিল আর আপনি পেয়েছিলেন লাখ লাখ ভিউ। কিন্তু পর্ন দুনিয়ায় এমন তারকাখ্যাতি অর্জনের পরও আপনার অভিনয় করা ১২টি ভিডিও থেকে আপনি সব মিলে পেয়েছেন ১২ হাজার মার্কিন ডলার। আর এখনও আপনার কাজ করা কোম্পানি ব্যাংব্রোস ও অ্যাগ্রেগেটর সাইট পর্নহাবের জন্যে আপনি লাখ লাখ ডলার উপার্জন করে দিচ্ছেন। এটি কিভাবে সম্ভব?

মিয়া: আসলে এটি এরকমই। আমিই একমাত্র নই যার সাথে এমন হয়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে আমার সাথে করা চুক্তিটি ছিল বাজে বা আমার ম্যানেজার দক্ষ ছিল না। এমন নয়। আমার কোন ম্যানেজার বা এজেন্ট ছিল না।

স্টিফেন: একদমই না?

মিয়া: না।

স্টিফেন: কোন উপদেষ্টা নয়, কিছুই না?

মিয়া: না।

স্টিফেন: আর আপনার বয়স ছিল ২১। আপনি মাত্র আপনার শৈশব থেকে বের হয়েছিলেন!

মিয়া: হ্যাঁ। মানে মানুষের মস্তিষ্ক ২৫ বছরের আগ পর্যন্ত পুরোপুরি বিকশিত হয় না। তার মানে আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের অংশটির আরও গড়ে ওঠার প্রয়োজন ছিল।

স্টিফেন: আর আপনি যদি ২১ বছর বয়সী মিয়া খলিফার সাথে কথা বলতে পারতেন যে কিনা ফ্লোরিডার রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো আর একজন পুরুষ তাকে থামিয়ে বলা শুরু করেছে, “তুমি সুন্দর, খুব সুন্দর, আমি তোমার সাথে কাজ করতে পারি”। আপনি আজকে তাকে কী করতে বলতেন?

মিয়া: তোমার পার্সে পিপার স্প্রে থাকার পেছনে কারণ আছে। সেটি ব্যবহার করো। দৌড়াও।

স্টিফেন: মিয়া খলিফা, আপনাকে হার্ডটকে পাওয়াটা ছিল প্রীতিময়। অসংখ্য ধন্যবাদ।

মিয়া: ধন্যবাদ আমাকে ডাকার জন্যে।

এফপি/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হামলা বন্ধে চাপ বাড়ছে নেতানিয়াহুর ওপর May 18, 2025
img
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন নীতিমালা জারি May 18, 2025
দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানালেন সালমান মুক্তাদির May 18, 2025
img
নুসরাতকে এভাবে গ্রেফতার পুরো বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে :এনসিপি নেতা May 18, 2025
img
প্রতিভা আর অদম্য মনোবল ছাড়া পেছনে কেউ ছিল না: হুমা কোরেশি May 18, 2025
তিন আসামীর খালাসে ক্ষুব্ধ আছিয়ার মা May 18, 2025
img
যখনই পাকিস্তানে আসি, উপভোগ করি: সাকিব May 18, 2025
img
তখন অন্যরকম একটা অবস্থা ছিল, আমাদের সবার: জয়া May 18, 2025
img
পর্দার শেখ হাসিনা থাইল্যান্ড পালাচ্ছিলেন! May 18, 2025
‘১০ মাস গড়ায় গেল, এখনও মায়ের পেটের বাচ্চা হইল না’ May 18, 2025
img
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বুন্দেসলিগার টপ স্কোরার কেইন May 18, 2025
img
নির্বাচন বিলম্বিত হলে অস্থিরতা বাড়বে: আমির খসরু May 18, 2025
img
কানে বাঙালি সাজে বর্ষার প্রশংসা করেছেন ভিনদেশিরা May 18, 2025
img
বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল ২ জনের May 18, 2025
img
নারী কমিশনের প্রস্তাব পতিত স্বৈরাচারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের দলিল : মহিলা ফোরাম May 18, 2025
যে কারণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রেসক্লাবে অবস্থান May 18, 2025
কোতোয়ালী থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ May 18, 2025
img
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ সংস্কারের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোট চায় জামায়াত May 18, 2025
img
বাংলাদেশ-জাপানের বিমান ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত May 18, 2025
img
ফেসবুকে স্যাড রিয়্যাক্ট দেওয়ায় শোকজ, অবিশ্বাস্য: আশফাক নিপুণ May 18, 2025