'বিচার বিভাগের প্রধান জায়গাগুলো বিএনপি'র দখলে থাকায় জুলাই গণহত্যার বিচার অনিশ্চিত'

বিচার বিভাগের প্রধান প্রধান জায়গাগুলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির দখলে থাকায় জুলাই গণহত্যার বিচার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির যুব উইং জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম।
 
আজ বুধবার (২১মে) রাতে তার ফেসবুক অ্যাকউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তারিকুল লেখেন, “আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অধস্তন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ, সকল বিচারকের বদলী, হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ কিভাবে হয়েছে। তখন দেশ একটি কেয়োটিক সিচুয়েশনে থাকার কারনে এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেকের কাছেই অজানা।”

অ্যাটর্নি জেনারেল পদে বিএনপির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে তারিকুল লেখেন, “রাষ্ট্রের আইন অঙ্গনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন অ্যাটর্নি জেনারেল। যিনি সরকারপক্ষ হয়ে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করেন। বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭ই আগস্ট যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিতও হয়নি তখন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আসাদুজ্জামান ছিলেন বিএনপির তৎকালীন রানিং কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একজন ব্যক্তিগত উপদেষ্টা। শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলই নন বরং গোটা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে যারা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডিপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের ৯৫% বিএনপিপন্থী আইনজীবী এবং স্বল্প পরিমান জামায়াত ও অন্যান্য দল পন্থী আইনজীবীরা। সমীকরণ টা চোখছানাবড়া হওয়ার মতো হলেও সত্য। ফলত সুপ্রিম কোর্টের সকল বিষয়াদি সরকারপক্ষ হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে এককভাবে নিয়ন্ত্রন করছে বিএনপি।”
 
একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে এই যুবনেতা লেখেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টে প্রথম দফায় যে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার পুরোটাই বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মিলে নিয়োগ দিয়েছেন। যেটি আইন অঙ্গনের ওপেন সিক্রেট। ফলত নিয়োগকৃত ২৩ জন বিচার পুরোটাই বিএনপির হাতেই হয়েছে এবং এই বিচারপতিদের মধ্যে যারা বিএনপি পন্থী নন তাদের নিয়োগও বিএনপি সম্মতি নিয়েই দেয়া হয়েছে।”

পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার অধস্তন আদালত সরকারে আইনজীবী হিসেবে পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং পাবলিক প্রসিকিউটরদের সাথে এডিশনাল ও এসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটররা মূলত সরকারের পক্ষ হয়ে আদালতে মামলা পরিচালনা করেন। আইনজীবী পাড়ায় আওয়ামী আইনজীবীদের অবস্থান না থাকায় পুরোটা তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দখলে ছিলো।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে এতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনগুলোতে সারাদেশে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিএনপি ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রযোজনায় । এটা আদালত পাড়ার একটা ওপেন সিক্রেট। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পাবলিক প্রসিকিউটর হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের যত নেতাকর্মী , দোসররা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের জামিন দিয়েছেন এবং একইসাথে স্থানীয় পর্যায়ে সকল ধরনের শেল্টার বর্তমানেও দিয়ে যাচ্ছেন। ফলত দেখা যাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন দলীয় সরকার না হওয়ায় অধস্তন আদালতগুলোতে বিএনপির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানেও সেটি পুরোদস্তুর চলছে।”
 
যুবনেতা ও আইনজীবি তারিকুল ইসলামের লেখায় বাদ যায়নি বিচারক বদলীর বিষয়টিও। তিনি লেখেন, “বিচারবিভাগ স্বাধীন না হওয়ায় অধস্তন আদালতের বদলী ক্ষমতা এখনো আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনেই রয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যত বিচারক যত জায়গায় বদলী হয়েছেন তার পুরোটাই আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেছে বিএনপি। ফলত দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর ও জেলার চীফ ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট, চীফ জুডিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ সহ সকল জায়গা গুলো বিএনপি তাদের ইচ্ছানুযায়ী নিয়োগ প্রদান করেছেন যার দরুন সারাদেশের আইন আদালতগুলো পুরোটাই বিএনপির নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে।”

নজিরবিহীন এই আধিপত্য বিস্তার প্রক্রিয়ার ফলে জুলাই গণহত্যার বিচার প্রশ্নের মুখে এমন অভিযোগ করে অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম লেখেন, “কার্যত জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্গান যেটি রাষ্ট্রের মূল ভারসাম্য রক্ষা করে এবং রাষ্ট্রের সকল নাগরিককে জবাবদিহির মধ্যে রাখে সেই বিচার বিভাগকে বিএনপি এভাবে একচ্ছত্রভাবে দলীয়করন করেছে যা বিচারবিভাগে আওয়ামী লীগেরও নগ্ন হস্তক্ষেপকে হার মানায়। ফলত বর্তমান বিচার না চেয়ে নির্বাচন চাওয়া বিএনপি নিয়ন্ত্রিত বিচার বিভাগের অধীনে জুলাই গণহত্যার বিচার দেখতে পাবো কিনা বা সম্ভব কিনা সেটি সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রশ্ন।”

এমআর/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মূল ঝামেলা বেঁধেছে মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে : রাশেদ খান May 23, 2025
img
মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে, কমেছে ডিমের দাম May 23, 2025
img
গুজবে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : আইএসপিআর May 23, 2025
img
ইংল্যান্ড সফর : ভারতের নেতৃত্বে কে? May 23, 2025
img
‘ভারত এই পরাজয় কখনোই ভুলতে পারবে না’ May 23, 2025
img
তেলের ট্যাংকার ছিনতাইয়ের অভিযোগ ইরানের বিরুদ্ধে May 23, 2025
img
জঙ্গলের আইনে পাকিস্তান পরিচালিত হচ্ছে : ইমরান খান May 23, 2025
img
উত্তর সিটিকেও সহযোগিতার আশ্বাস ইশরাকের May 23, 2025
img
রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে গেছে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই : উমামা ফাতেমা May 23, 2025
img
সশস্ত্র বাহিনীকে অন্ধকারে রাখা অনুচিত May 23, 2025
img
জনতার মেয়র হয়ে ঈদে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ইশরাকের May 23, 2025
img
ভারতের সার্বভৌমত্বে চীনের সরাসরি আঘাত, উদ্বিগ্ন ভারত May 23, 2025
img
এনসিপিকে বিএনপির মতো হতে ২৫ বছর রাজনীতি করতে হবে : ইশরাক May 23, 2025
img
কিন্তু হায়! এখন প্রতিটি শক্তিই পরস্পরকে বেইমান, গাদ্দার মনে করে : উমামা ফাতেমা May 23, 2025
আসতে পারে বড় সিদ্ধান্ত, চলছে জাতির উদ্দেশে ভাষণের প্রস্তুতি! May 23, 2025
img
জুলাইয়ের বিদ্রোহের পর গত রাতটি ছিল সবচেয়ে কঠিন : তাসনিম জারা May 23, 2025
লন্ডনে সালমানপুত্র সায়ানের সম্পত্তি জব্দ May 23, 2025
img
আগামী ৫-১০ বছর আমাদেরকে আওয়ামী লীগের কাফফারা দিতে হবে : ফাহাম আব্দুস সালাম May 23, 2025
img
সাগর-রুনি হত্যা : ফেসবুকে ছড়াল মূলহোতার নাম May 23, 2025
জাহান্নাম থেকে বাঁচার ৩ টি আমল | ইসলামিক টিপস May 23, 2025