সশস্ত্র বাহিনীকে অন্ধকারে রাখা অনুচিত

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সঠিক কথা বলেছেন। যার যে দায়িত্ব তাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে : মে. জে. (অব.) ড. মো. নাঈম আশফাক চৌধুরী সেনাপ্রধান যে কনসার্ন ব্যক্ত করেছেন তা যথার্থ : অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ।


সশস্ত্রবাহিনীকে অন্ধকারে রেখে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উদ্যোগ অবিবেচনাপ্রসূত। রাষ্ট্রের সংস্কারের বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে অন্ধকারে রাখা হবে—এটাও কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান যে কনসার্ন ব্যক্ত করেছেন তা যথার্থ। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা দরকার।

যার যে দায়িত্ব তাকে সেই দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে। কাউকে অবজ্ঞা করা উচিত না। দেশের অগ্রগতি চাইলে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সেনাপ্রধান তাঁর বাহিনীর সদস্যদের যা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে যা বলেছেন, তাও সঠিক।

তাঁর বক্তব্য ইতিবাচকভাবে নিয়ে সংকট নিরসনে সবাইকে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে। নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই দেশ পরিচালনা হওয়া দরকার। নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণে সংকট বাড়বে।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সঠিক কথা বলেছেন। 

এসব মন্তব্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সামরিক বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের। গণমাধ্যমকে তাঁরা জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি ও বিদেশি অনেকে চায় সার্বিক সংকট থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ যেন না হয়। এ ধরনের একটি অপচেষ্টা চলমান। সেই অপচেষ্টা যেন কোনোভাবেই সফল না হতে পারে সেভাবেই সবার কাজ করা দরকার। গত বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার বাহিনীর সদস্যদের কাছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনো যুক্ত হবে না। কাউকে তা করতেও দেওয়া হবে না। তিনি সব পর্যায়ের সেনাসদস্যকে নিরপেক্ষ থাকার এবং ভবিষ্যতে নির্বাচনী দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ওই অনুষ্ঠানে নির্বাচন ছাড়াও মানবিক করিডর, বন্দর, সংস্কারসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। সেনাপ্রধান জাতীয় নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই হওয়া উচিত বলে জানান।

সেনাপ্রধান বলেন, সার্বিকভাবে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং এই পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসনসহ সব সংস্থা প্রত্যাশা অনুসারে পুনর্গঠিত হতে পারছে না। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডরসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, এটি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার না। বিষয়টি স্পর্শকাতর, ঝুঁকিপূর্ণ ও অসম্ভব।

তিনি বলেন, মানবিক করিডর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে এবং তা বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই হতে হবে। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে, যা করার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই করতে হবে। যা-ই করা হোক না কেন, পলিটিক্যাল কনসেনসাসের (রাজনৈতিক ঐকমত্য) মাধ্যমে সেটা হতে হবে।

সেনাপ্রধান বলেন, আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু মহল তাকে ও সেনাবাহিনীকে অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।

‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা আক্রমণের বিরুদ্ধেও কঠোর বার্তা দেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

সংস্কার প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা করা হয়নি। পাশাপাশি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি। সহযোগিতা করে যাব।’

এর আগেও সেনাপ্রধান ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, দেশ গঠনে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আসছেন। সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না—এটা আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে দেশ সেবায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার ব্যাপক প্রশংসা করেন।

গত ৬ অক্টোবর সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে ‘সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবারও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
টিএ/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বঙ্গোপসাগরে ফের লঘুচাপের আভাস Nov 18, 2025
img
বিএনপি নেতাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার Nov 18, 2025
img
আজ সরকারি দপ্তরগুলোতে যাচ্ছে না শেখ হাসিনা-কামালের রায়ের কপি Nov 18, 2025
img
কোচ-ম্যানেজারকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা Nov 18, 2025
img

জয়া আহসান

‘তার মতো মানুষকে বন্ধু হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার’ Nov 18, 2025
img
হাসপাতালে মারা গেলেন সংগীতশিল্পী হুমানে সাগর Nov 18, 2025
img
স্থগিতের শঙ্কায় ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ Nov 18, 2025
img

জিল্লুর রহমান

অপরাধের শাস্তি দরকার সেই বিষয়ে দেশের মানুষের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই Nov 18, 2025
img
পা হারানো মানুষদের জন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার রায়ের কপি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবে আজ Nov 18, 2025
img
পারমাণবিক সক্ষমতার পথে সৌদি, পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘খুবই উদ্বেগজনক’: শশী থারুর Nov 18, 2025
img
ছেলে দেখে না, অচেনা মানুষেরা খেতে দেয় যুবরাজের বাবাকে Nov 18, 2025
img
১৮ ডিসেম্বর মেহজাবীনের জবাব দাখিলের নির্দেশ আদালতের Nov 18, 2025
img
বুধবার ইসির সংলাপে আসছে বিএনপি ও জামায়াত Nov 18, 2025
img
সাভারে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কারখানায় লুটের চেষ্টার অভিযোগ Nov 18, 2025
img
মাদারীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মশাল মিছিল Nov 18, 2025
img
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার উত্থান ও পতন Nov 18, 2025
img
শেখ হাসিনার রায়ের পর মীর কাসেম আলীর মেয়ের আবেগঘন দীর্ঘ স্ট্যাটাস Nov 18, 2025
img
দেড় বছরে এত সাফল্য অর্জন অন্তর্বর্তী সরকারের মতো কেউ করতে পারেনি: প্রেস সচিব Nov 18, 2025