বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) পরিচালক হতে হলে কাউন্সিলরশিপ প্রয়োজন। কাউন্সিলর না হলে কেউই বিসিবির পরিচালক হতে পারবেন না। সাম্প্রতিক সময়ে গুঞ্জন, বিসিবি সভাপতি হতে যাচ্ছেন সাবেক জাতীয় অধিনায়ক এবং বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। কিন্তু তিনি বিসিবির কাউন্সিলর তালিকায় নেই, সেখানে সভাপতি কীভাবে হবেন এ নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে গঠনতান্ত্রিকভাবেই বুলবুলের বিসিবিতে আসার সুযোগ রয়েছে।
বুলবুলকে বিসিবির পরিচালক হতে হলে আগে তাকে কাউন্সিলর হতে হবে। বিসিবিতে বিভিন্ন স্তরের ক্লাব, জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রতিনিধির পাশাপাশি সাবেক জাতীয় খেলোয়াড়, সাবেক জাতীয় অধিনায়ক, মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, আম্পায়ার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পাঁচ জন ব্যক্তিকে কাউন্সিলর মনোনীত করতে পারে।
বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১২.৭ অনুচ্ছেদে রয়েছে, 'কোনো কাউন্সিলর, পদত্যাগ, স্থায়ীভাবে প্রবাসী, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, সংস্থার ক্ষেত্রে বদলী বা অবসর হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ক্লাব বা সমিতি কাউন্সিলর পরিবর্তন আবেদন জানাইতে পারে যাহা পরিচালা পরিষদে অনুমোদিত হইবে।’ এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বিসিবিতে কাউন্সিলরশিপ রদবদলের সুযোগ রয়েছে। বিসিবির বিদ্যমান কোনো কাউন্সিলর পদত্যাগ করলে সেখানে ঐ সংস্থা/প্রতিষ্ঠান নতুন কারো নাম বিসিবিতে পাঠাতে পারে সেটা পরিচালনা পর্ষদে গৃহীত হলে তিনি কাউন্সিলর হিসেবে যোগ্য হবেন।
বিসিবির গঠনতন্ত্রের ১২.৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'কোনো কাউন্সিলর, পদত্যাগ, স্থায়ীভাবে প্রবাসী, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, সংস্থার ক্ষেত্রে বদলী বা অবসর হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ক্লাব বা সমিতি কাউন্সিলর পরিবর্তন আবেদন জানাইতে পারে যাহা পরিচালা পরিষদে অনুমোদিত হইবে।’ এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বিসিবিতে কাউন্সিলরশিপ রদবদলের সুযোগ রয়েছে।
২০২১ সালের বিসিবি নির্বাচনে নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিকেএসপির কাউন্সিলর ছিলেন। এরপর তিনি বিকেএসপির চাকুরিতে না থাকায় তার কাউন্সিলরশিপ চলে যায়। বিসিবির সর্বশেষ এজিএমে বিকেএসপির কাউন্সিলর ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোতাহের হোসেন। ফলে নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কোনো কাউন্সিলরশিপ ছিল না। বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস পরিচালকের পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলর থেকেও পদত্যাগ করেন। তখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফাহিমকে কাউন্সিলর করে।
২০২১ সালের নির্বাচনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দুই মনোনীত পরিচালক ছিলেন জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। জালাল ইউনুস স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও ববি করেননি। এনএসসি ববিকে পরিচালক থেকে সরিয়ে দেন। শূন্য দুই পরিচালক পদে ফাহিম ও ফারুককে পরিচালক মনোনীত করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ফারুক আহমেদ সাবেক জাতীয় অধিনায়ক হিসেবে আগে থেকেই কাউন্সিলর ছিলেন। ফলে তার আর নতুন কাউন্সিলরশিপ লাগেনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাকে সরাসরি পরিচালক মনোনীত করেছে। ফাহিমকে আগে কাউন্সিলর করে এরপর পরিচালক মনোনীত করতে হয়েছে ক্রীড়া পরিষদকে।
বুলবুলের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। নাজমুল আবেদীন ফাহিমের ক্ষেত্রে একই সভায় তার কাউন্সিলরশিপ অনুমোদন এবং সেই সভায় তিনি পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত দুই জন ছাড়া অন্য ক্যাটাগরিতে বিসিবির পরিচালক হতে হলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। শুধু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দুই পরিচালক সরাসরি মনোনীত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বুলবুলকে পরিচালক করতে হলে বর্তমান দুই এনএসসি পরিচালক ফারুক এবং ফাহিমের মধ্যে একজনকে সরতে বা সরাতে হবে।
বিসিবিতে পরিচালকদের মধ্যে থেকে সভাপতি নির্বাচিত হন। সভাপতি পদত্যাগ বা কোনো কারণে পদশূন্য হলে অন্য পরিচালকদের মধ্যে সভাপতি নির্বাচিত করার বিধান রয়েছে। বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ পদত্যাগ বা যে কোনো কারণে সরলে তখন সেখানে নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসবে। তখন পরিচালকদের মধ্যে যদি একজনই শুধু সভাপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সকলে সম্মতি দেন তখন আর ভোটাভুটি প্রয়োজন পড়ে না। দ্বি স্তর বিশিষ্ট নির্বাচন ব্যবস্থা হলেও বিসিবিতে সভাপতি পদে নির্বাচনের জন্য কোনো প্রজ্ঞাপন, ব্যালট বা কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। সাধারণ মিটিংয়ে শুধু মৌখিক প্রস্তাব ও সম্মতিতেই হয়। যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের শীর্ষ সংগঠনের একটি বড় দুর্বলতা।
এফপি/এস এন