মতিউর জেল থেকে বের না হতে পারলেও আলোচিত সেই ছাগল এখনও রয়েছে খামারে

কথায় আছে, “পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়।” ঠিক তেমনই একটি ছাগলকে ঘিরেই ঘটে গেছে বিস্ময়কর সব ঘটনা— যার রেশ এখনও শেষ হয়নি।

বছরখানেক আগের কথা। বিশাল আকৃতির বাদামী রঙের একটি ছাগল ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। ছাগলটি কেনেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর তৎকালীন সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান মুশফিকুর রহমান। বিক্রেতা ছিলেন সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন।

মুশফিকুর ছাগলটির সঙ্গে একটি সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় হইচই। প্রশ্ন ওঠে— একজন সরকারি কর্মকর্তার ছেলে কীভাবে এত দামী ছাগল কেনেন?

প্রথমে মতিউর দাবি করেন, ছাগলটির ক্রেতা তার ছেলে নয়। পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, মুশফিকুর তার দ্বিতীয় ঘরের সন্তান। এরপরই একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে মতিউর ও তার পরিবারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য।

ঘটনার পর মতিউর এনবিআর থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তবে বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। ২০২৪ সালের ৩ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালায় মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাদিক এগ্রোতে। উদ্ধার করা হয় পাঁচটি আমদানি নিষিদ্ধ প্রজাতির গরু। এরপর সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এরপর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুদক অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর, তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে। ১৫ জানুয়ারি গ্রেফতার হন মতিউর ও তার স্ত্রী লায়লা। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন এবং জামিন পাননি।

আর সেই আলোচিত ছাগল? যেটি ঘিরে শুরু হয়েছিল সবকিছু— তা কিন্তু এখনও সাদিক এগ্রোর মালিকানায় রয়েছে। যদিও মুশফিকুর ছাগলটি কিনেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তিনি সেটি নিতে পারেননি। পরে ছাগলটিকে সাদিক এগ্রোর সাভারের খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। খামারটি গড়ে উঠেছিল সরকারি জমিতে, যার একটি অংশ ২০২৪ সালের জুনে উচ্ছেদ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন।

সাদিক এগ্রোর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছাগলটি এখনও তাদের খামারেই আছে। তারা সেটি দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।

শেষ পর্যন্ত ছাগলটির ভবিষ্যৎ যা-ই হোক, এই ছাগলকে কেন্দ্র করে মতিউর ও তার পরিবারের দুর্নীতি ও অনিয়মের যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, তা দীর্ঘদিন মানুষের মুখে মুখে ফিরবে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
প্রতিনিধিত্ব করতে পারে—এমন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন? Jun 07, 2025
img
ফ্রেঞ্চ ওপেনে বিদায়ের ইঙ্গিত দিলেন জোকোভিচ Jun 07, 2025
img
নীল পোশাকে ঈদে মুগ্ধতা ছড়ালেন মিম Jun 07, 2025
img
ঈদে ১৩২টি হলে 'তাণ্ডব', অন্যান্য সিনেমার হলচিত্র কেমন? Jun 07, 2025
img
১০ বছরের লড়াইয়ের পর, প্রধান চরিত্রে দেবলীনা Jun 07, 2025
img
প্রবাসে ঈদ উদ্‌যাপন, নিজের গ্রামকে মিস করেন জায়েদ খান Jun 07, 2025
img
ঈদের দিনেও মুস্তাফিজের হাতে স্প্লিন্ট, কী কারণে? Jun 07, 2025
img
সাত বছর পর মেয়ের সঙ্গে ঈদ, উচ্ছ্বাসে ভাসছেন শিহাব শাহীন Jun 07, 2025
img
যে কারণে মুখের বিমা করলেন ৫৩ বছর বয়সী করণ জোহর! Jun 07, 2025
img
ক্যানসার জয়ের পর অভিনয়ে ফেরার অপেক্ষায় মিঠু চক্রবর্তী Jun 07, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাংস কাটার সময় আহত, হাসপাতালে ভর্তি শতাধিক Jun 07, 2025
img
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত, বন্দিদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা Jun 07, 2025
img
কোরবানি দিতে গিয়ে রাজধানীতে আহত ৬৫ Jun 07, 2025
img
জয়পুরহাট সীমান্তে ৫৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার Jun 07, 2025
img
এবার হিন্দি ধারাবাহিকে ফিরছেন ক্রুশল! Jun 07, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টাকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে যমুনায় নৌবাহিনী প্রধান Jun 07, 2025
মায়ের সঙ্গেই সবচেয়ে আপন, অ্যাডভোকেট টিয়ার খানের হৃদয়ছোঁয়া গল্প Jun 07, 2025
গনপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রনয়নের দাবি এনসিপির Jun 07, 2025
বহু বছর পর উন্মুক্ত পরিবেশে ঈদ কাটাবেন বেগম জিয়া Jun 07, 2025
এটা ভাড়া করা বিদেশি সরকার! ইশরাকের ক্ষোভ! Jun 07, 2025