মাস্ক চাইলে রাশিয়ায় পাবেন রাজনৈতিক আশ্রয়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক যদি কখনও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে রাশিয়ায় এসে থাকতে চান, তাহলে তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত আছে মস্কো। রাশিয়ার এমপি এবং পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান দিমিত্রি নোভিকভ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রুশ সংবাদমাধ্যম তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোভিকভ বলেন, “আমার মনে হয় মাস্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা খেলা খেলছেন, সম্ভবত তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রয়োজন পড়বে না, তবে তারপরও যদি তিনি কখনও রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রয়োজন বোধ করেন, তাহলে রাশিয়া তা দিতে প্রস্তুত আছে।”

দিমিত্রি নোভিকভ এই মন্তব্য করার পরের দিন শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা এ ইস্যুটি উত্থাপন করলে ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ তা বাতিল করে দেন।

পেসকভ বলেন, “এটা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যু এবং এখানে নাক গলানোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমাদের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিজেই এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন এবং দেবেন।”

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের উত্তেজনা গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ কেন্দ্রে রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের স্বাক্ষরিত একটি সরকারি বিল এবং তা নিয়ে মতানৈক্যের জেরে ট্রাম্পের উপদেষ্টার পদ থেকে মাস্ক সরে যাওয়া থেকে এই উত্তেজনার সূত্রপাত।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে। সে সময় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলছিল। রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রচারণা সভায় তখন মাস্ককে নিয়মিত দেখা গেছে। এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলে কমপক্ষে ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার চাঁদা দিয়েছেন মাস্ক।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার পর সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা ডজ নামের একটি দপ্তর খোলে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।

মাস্ক ডজের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশি সহায়তা প্রদান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদান স্থগিত করায় দেশের ভেতরেও সমালোচনায় বিদ্ধ হতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন।

মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।

এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে।

সরকারি বিল নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে বর্তমান ডজ তথা মার্কিন প্রশাসন থেকে বিদায় নেন মাস্ক। ট্রাম্প এই বিদায়কে স্বাগত জানান।

এদিকে সরকারি পদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর বিলটি বাতিলের জন্য আরও তৎপর হয়ে উঠেছেন মাস্ক। আটকানোর জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জনগণকে মাঠে নামার আহ্বানও জানিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী এই ব্যবসায়ী-শিল্পপতি।

মাস্কের এ আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে ট্রাম্প বলেন, “আমার মনে হয় তিনি ব্যক্তিগত কারণে এ বিলের বিরোধিতা করছেন। কারণ পর্যায়ক্রমে কর সংস্কারের এ বিলের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে তার মালিকানাধীন কোম্পানি টেসলার ওপর।”

এদিকে মার্কিন সংবাদামাধ্যমগুলো জানিয়েছে যে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তেজনা শুরুর পর থেকে মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি টেসলার শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশ কমে গেছে।

সূত্র : মস্কো টাইমস

টিকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র আইভীকে আরও ৫ মামলায় গ্রেপ্তার Nov 18, 2025
img
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি পেলেন বাবর Nov 18, 2025
img
আমজনতার দলসহ ৭টি দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার বিষয়ে আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে ইসি Nov 18, 2025
img

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ

ভোট দিতে পারবেন ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন Nov 18, 2025
img
ইউনিসেফ থেকে ৪২০ কোটি টাকার ভ্যাকসিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত Nov 18, 2025
img
জুলাইয়ের আবহ ফেরাতে কনসার্ট, থাকবেন আতিফ আসলাম Nov 18, 2025
img
একদিনে ডেঙ্গুতে ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২০ জন Nov 18, 2025
img
জীতু-দিতিপ্রিয়ার দ্বন্দ্বে অনিশ্চয়তায় জনপ্রিয় ধারাবাহিক Nov 18, 2025
img
'সোলজার'-এর ফার্স্ট লুকে ভিন্ন এক তিশা Nov 18, 2025
img
৭ দিনের মধ্যে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের নির্দেশ ডিএনসিসির Nov 18, 2025
img
হামজার ওভারহেড কিকে গোলকে অবিশ্বাস্য বললেন টেক্টর Nov 18, 2025
img
ঠকানোর চেয়ে ঠকে যাওয়াই ভালো: জিতু Nov 18, 2025
img
মুশফিকের ১০০তম টেস্টে তামিমের বিশেষ শুভেচ্ছা ! Nov 18, 2025
img
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, আশা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার Nov 18, 2025
img
কঠোর পরিশ্রমেই সাফল্যের চাবিকাঠি: শ্রেয়া ঘোষাল Nov 18, 2025
img
সিঙ্গাপুর থেকে ৪৯০ কোটি টাকায় দেশে আসছে এক কার্গো এলএনজি Nov 18, 2025
img
অল্প সময়ে ঢালিউডে শক্ত অবস্থান গড়লেন শরিফুল রাজ Nov 18, 2025
img
মাঝে মাঝে ভাবি মুশফিক খুবই একঘেয়ে জীবন যাপন করেন: মুমিনুল হক Nov 18, 2025
img
পরীমনির সঙ্গে তুলনা করায় ডাকসু নেত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ Nov 18, 2025
img
নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না: আলিয়া ভাট Nov 18, 2025