বর্তমান ভারতীয় সিনেমায় প্রাসঙ্গিকতা মানে শুধু নান্দনিক সাফল্য নয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে থাকা চাই বক্স অফিসের পরিসংখ্যানেও। এই বাস্তবতায় টিকে থাকার জন্য দরকার নিজেকে পুনরাবিষ্কার করার ক্ষমতা। আর এই কঠিন সমীকরণে যাঁরা সবচেয়ে সফলভাবে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন, তারা হলেন এস এস রাজামৌলি ও সুকুমার।
যখন অনেক কিংবদন্তি নির্মাতা তাদের গৌরবময় অতীতের স্মৃতিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তখন রাজামৌলি ও সুকুমার সময়ের চাহিদা অনুযায়ী নিজেদের রূপান্তরিত করেছেন, সৃষ্টি করেছেন এমন সব ছবি যা শুধু ভারত নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তের দর্শকের মন জয় করেছে।
একসময় দক্ষিণ ভারতের ছবি মানেই আঞ্চলিক আবেগে ঘেরা একগুচ্ছ কাহিনি। কিন্তু এই দুই নির্মাতা প্রমাণ করেছেন, ভাষা বা সংস্কৃতি কোনো বাধা নয়—যদি ছবির মধ্যে থাকে শক্তিশালী আবেগ, দর্শনীয় ভিজ্যুয়াল, আর সময়োপযোগী গল্প বলার কৌশল।
রাজামৌলির 'আরআরআর' যেমন বিশ্বজুড়ে এক হাজার দুইশ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে, তেমনি সুকুমারের 'পুষ্পা' হয়ে উঠেছে এক সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক আলোড়ন। এই সাফল্য শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়; এই ছবিগুলো হয়ে উঠেছে সময়ের প্রতিচ্ছবি, নতুন ভারতের জনমনস্তত্ত্বের অনুবাদক।
অন্যদিকে, শঙ্কর কিংবা মণি রত্নমের মতো এক সময়ের পথিকৃৎ পরিচালকরা এখনো সম্মানিত নাম হলেও, তাদের সাম্প্রতিক ছবি যেমন ‘ইন্ডিয়ান ২’ কিংবা ‘পন্নিয়িন সেলভান’ সমসাময়িক দর্শকের সঙ্গে ততটা সংযোগ স্থাপন করতে পারেনি।
রাজামৌলি ও সুকুমারের সাফল্যের মূল রহস্য তাদের সময়চেতনা। তারা জানেন কাকে বলবেন, কিভাবে বলবেন এবং ঠিক কোন মেজাজে বলবেন। তারা একদিকে যেমন গণমানুষের আবেগ বুঝতে পারেন, তেমনি আন্তর্জাতিক দর্শকের মনেও ঢুকে যেতে পারেন এক অভিনব ভাষায়।
তারা শুধু পরিচালক নন, বরং হয়ে উঠেছেন একেকটি প্রতিষ্ঠান, যারা নিজেদের প্রতিটি ছবিতে নতুন করে গড়ে তোলেন। তারা বারবার নিজেদের পুনর্নির্মাণ করেন, কিন্তু কখনোই পুরনো সূত্রে আটকে থাকেন না।
এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পে কেবল প্রতিভা নয়, চাই নেতৃত্বের দক্ষতা, চাই ট্রেন্ড বোঝার প্রবণতা, চাই নির্মাণের মৌলিকতা। রাজামৌলি ও সুকুমার সেই জায়গাগুলোতে নিঃসন্দেহে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তারা কেবল সফল নির্মাতা নন, তারা ভবিষ্যতের চলচ্চিত্র ধারার রচয়িতা।
এসএম/টিকে