রোহিঙ্গা সংকটে মূল প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কবে ফিরবে: মুহাম্মদ ইউনূস

বুধবার লন্ডনের প্রভাবশালী নীতিগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত এক সংলাপে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি সাধারণত শুধু তখনই আলোচিত হয় যখন তাদের খাবার বা শিক্ষার খরচ কারা বহন করছে—আর এটাই মূল আলোচনা সীমা। কিন্তু আসল প্রশ্ন কেউ তোলে না—তারা কবে ফিরে যাবে? তাদের ভবিষ্যৎ কী? আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রশ্নটি তুলেছি এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাতা দেশগুলোর বিশেষ বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।”

তিনি জানান, মিয়ানমারে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। এর ফলে নতুন করে আরও ২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের দিকে আসছে, পূর্বের ১২ লাখের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এ সংখ্যা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়টি যা আমি তুলে ধরেছি তা হলো—রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে এসেছিল, তাদের সঙ্গে তাদের বাচ্চারাও এসেছিল। অনেক শিশু তখন দু-মাস থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ছিল। সময় পেরিয়ে গেছে, সেই পাঁচ বছরের শিশুটি এখন ১২ বছর হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ৩৫,০০০ শিশুর জন্ম হচ্ছে। তাই এখন একটি নতুন প্রজন্ম বড় হচ্ছে, যারা কোনো আশা ছাড়াই বন্দী জীবন যাপন করছে। তারা জানে না তারা কারা, তাদের জীবন কী হওয়া উচিত। তারা যেন এক ধরনের কারাগারে আছে। তাদের কাছে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার আছে, তারা বিশ্বের সবকিছু দেখতে পারে, কিন্তু নিজেদের জীবন দেখতে পায় না।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের পরিকল্পনা এখনও রোহিঙ্গাদের অবশেষে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা। সেটাই একমাত্র সমাধান। তাদের বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়, কারণ আশেপাশের মানুষেরা ইতিমধ্যেই তাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। কারণ, রোহিঙ্গারা সবকিছু বিনামূল্যে পাচ্ছে, আর স্থানীয়রা সংগ্রাম করে জীবন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, “তোমরা কেন নিজের দেশে ফিরে যাচ্ছো না? আমাদের জীবন নিয়ে কেন হস্তক্ষেপ করো?”

রোহিঙ্গাদের সন্তানরা সেখানে খেলাধুলা করছে, মজা করছে, আর স্থানীয়দের সন্তানরা কঠোর পরিশ্রম করেও জীবনযাপন করতে পারছে না। প্রধান উপদেষ্টা চান রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুক।

এফপি/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
যুদ্ধের সময় সীমান্ত দিয়ে অনেকে পালিয়েছেন কিন্তু জিয়াউর রহমান যান নাই: ডা. জাহিদ Nov 14, 2025
img
নতুন মুখে সাজিদ আলীর ‘হীর রাঞ্জা’ Nov 14, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও রেললাইনে আগুন Nov 14, 2025
img
বরিশালে থেমে থাকা ট্রাকে দুর্বৃত্তদের আগুন Nov 14, 2025
img
একইদিনে গণভোট-জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি ৮ দলের Nov 14, 2025
img
বিমানবন্দর এলাকার ২ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ Nov 14, 2025
img
৭০ বছর পর নতুন নামে রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী হোম ভেন্যু Nov 14, 2025
img
মিস ইউনিভার্স’ প্রতিযোগিতার ভোটে শীর্ষে মিথিলা Nov 14, 2025
img
নিজেদের তৈরি প্রথম হাইব্রিড কার্গো বিমান উদ্বোধন করল আমিরাত Nov 14, 2025
img
রাজশাহীতে আ.লীগ ও যুবলীগের ৩ জনসহ গ্রেপ্তার ২৬ Nov 14, 2025
img
এস.এস. রাজামৌলির পরিচালনায় ‘গ্লোবট্রটার’ ছবিতে অভিনয় করছেন প্রিয়াঙ্কা Nov 14, 2025
img
মিরপুরে বাসে অগ্নিসংযোগের পর পালাতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু Nov 14, 2025
img
দক্ষিণ কোরিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে চান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল Nov 14, 2025
img
গণভোট ও নির্বাচন একসঙ্গে হওয়া প্রসঙ্গের ব্যাখ্যা দিলেন মির্জা গালিব Nov 14, 2025
img
'যে সৎ কাজটা তোমাকে ভয় দেখায়, সেটাই করো' Nov 14, 2025
img
“যে বিষয়ে কিছুই জানি না, সেখানে যাব না। অন্তত লোক হাসাতে চাই না” Nov 14, 2025
img
কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকেই নির্বাচন করব: হাসনাত আবদুল্লাহ Nov 14, 2025
img
নোয়াখালীতে জামায়াত প্রার্থীর গণসংযোগ, যুবদলের হামলার অভিযোগ Nov 14, 2025
img
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আটক Nov 14, 2025
img
আর্জেন্টিনার অনুশীলনে স্পেনে বিশাল জনসমাগম, মেসির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ Nov 14, 2025