মে মাসেই সড়কে প্রাণ হারাল ৬১৪ জন

সড়কে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। বিদায়ী মে মাসে সারাদেশে ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬১৪ জন, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১১৯৬ জন। এছাড়া রেল ও নৌপথ মিলিয়ে মে মাসে মোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১২১০ জন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সংস্থার মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ১২ জুন সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য-সংবলিত প্রতিবেদন পাঠান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়কে প্রাণহানির প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যানবাহনের বেপরোয়া গতি, সড়কে শৃঙ্খলার অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা।

দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৯৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬১৪ জন নিহত ও ১১৯৬ জন আহত হয়েছেন। এই মাসে রেলপথে ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথের ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৬৫২টি দুর্ঘটনায় ৬৫৮ জন নিহত এবং ১২১০ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ২৩৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৬ জন নিহত ও ২০১ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৯.০২ শতাংশ, নিহতের ৪১.৬৯ শতাংশ ও আহতের ১৬.৮০ শতাংশ।

এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। সেখানে ১৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। সেখানে ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ১০৩ জন পথচারী, ৬৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৯২ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন শিক্ষক, ৮৮ জন নারী, ৫৮ জন শিশু, ৩৭ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- ২ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনী সদস্য, ১ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ২ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১৪২ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯৫ জন পথচারী, ৫৯ জন নারী, ৫৪ জন শিশু, ৬৬ জন শিক্ষার্থী, ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এই সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৯৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৯.৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২২.৫৩ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১২.৪৮ শতাংশ বাস, ১৪.১৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৬.৬৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৯.৩১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.৩৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৯.০৭ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৯৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০.১০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়া, ৫.০২ শতাংশ বিবিধ কারণে, চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ০.৩৩ শতাংশ, এবং ০.৫০ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটেছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে- দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যানের চালকদের রাতে এসব জাতীয় সড়কে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালানো; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকদের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন এবং অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো ও একজন চালকের অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে- জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা; জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান; ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা;

সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা; মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা; উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।
 
এসএম/টিকে    

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পাকিস্তানের সংবিধান পরিবর্তন, সেনাপ্রধান পেলেন গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন মুক্তি Nov 15, 2025
img

মঞ্জুরুল আলম পান্না

সাংবাদিকতার পুরস্কার হিসেবে পেলাম ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ Nov 15, 2025
img
জীবনের চ্যালেঞ্জ থেকে শিখেছি বিনয় : ইমরান হাশমি Nov 15, 2025
img

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ৯ দিনের জন্য বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামবে Nov 15, 2025
img
নারী কাবাডি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ Nov 15, 2025
img
দাদুর জীবনী পড়ে জেনেছি, কত পরিশ্রম করলে 'ফ্লপ মাস্টার জেনারেল' তকমা সরিয়ে মহানায়ক হওয়া যায় Nov 15, 2025
img
শেহনাজ গিলের স্বামীর জন্য মিউজিক্যাল শর্ত Nov 15, 2025
img
নিরাপত্তা উপদেষ্টার ভারত সফর আঞ্চলিক শান্তির প্রয়াস: মুশফিকুর রহমান Nov 15, 2025
img
জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন থেকে একদম বাইরে রাখা সমীচীন নয়: জিএম কাদের Nov 15, 2025
img
স্থগিত নয়, বাতিল জেমস-আজমতের কনসার্ট Nov 15, 2025
img
সোহানের রেকর্ডগড়া সেঞ্চুরিতে হংকংকে ৮ উইকেটে হারাল টাইগাররা Nov 15, 2025
img
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ব্যর্থ হলে দক্ষ জনশক্তি তৈরিও বাধাগ্রস্ত হবে: বিআরটিএ চেয়ারম্যান Nov 15, 2025
img
ফি জমা দিতে পারিনি- কারিশমার সন্তানদের আকুতিকে ‘নাটক’ বলে আখ্যা হাইকোর্টের Nov 15, 2025
img
আল্লাহ যখন কিছু লিখে রেখেছেন, সেটা ঘটবেই: বাবর আজম Nov 15, 2025
img
নওগাঁয় বিএনপি নেতা বহিষ্কার Nov 15, 2025
img
‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র অভিনেত্রী ভদ্রা আর নেই Nov 15, 2025
img
স্ত্রীর মামলায় গ্রেপ্তার হলেন হিরো আলম Nov 15, 2025
img
ভালোবাসা আর মানবতাই মানুষকে মহান করে: মিঠুন চক্রবর্তী Nov 15, 2025
img
ছেলেবন্ধুদের দেখেছি বাবার সঙ্গে খুব একটা বনিবনা নেই : সোহিনী Nov 15, 2025
img
নাগরিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব : ডিএসসিসি প্রশাসক Nov 15, 2025