ইরানের উপকূলঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন পথ হরমুজ প্রণালিতে মঙ্গলবার তেলবাহী দুটি জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে।
ব্রিটিশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান অ্যামব্রে জানিয়েছে, মঙ্গলবার আদালিন ও ফ্রন্ট ঈগল নামের দুই জাহাজের সংঘর্ষ “নিরাপত্তা-সম্পর্কিত নয়”। যদিও এই দুর্ঘটনা এমন এক এলাকায় ঘটেছে যেখানে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নৌ-চলাচল নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।
শিপিং কম্পানি ফ্রন্টলাইন জানিয়েছে, ফ্রন্ট ঈগল ট্যাংকারে লাগা আগুন নেভানো হয়েছে, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওমান উপসাগর উপকূল থেকে ১৫ নটিক্যাল মাইল (২৮ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।
এই ঘটনায় কোনো ধরনের পরিবেশদূষণ শনাক্ত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেছে তারা।
অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, তারা আদালিন ট্যাংকার থেকে ২৪ জনকে সরিয়ে নিয়েছে।
ট্যাংকার ট্র্যাকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ট্যাংকারট্র্যাকার্সডটকম জানিয়েছে, ফ্রন্ট ঈগল ট্যাংকারে ২০ লাখ ব্যারেল ইরাকি অপরিশোধিত তেল ছিল এবং এটি চীনের ঝোউশান বন্দরের দিকে যাত্রা করছিল। অন্যদিকে আদালিন একটি সুয়েজম্যাক্স-শ্রেণির ট্যাংকার, যার মালিক ভারতভিত্তিক গ্লোবাল শিপিং হোল্ডিং লিমিটেড।
এটি কোনো তেল বহন করছিল না এবং মিসরের সুয়েজ খাল অভিমুখে যাচ্ছিল বলে জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) তথ্য অনুসারে, হরমুজ প্রণাল হলো উপসাগরে প্রবেশের কৌশলগত সমুদ্রপথ, যেখানে বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়। তবে যখন ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে পঞ্চম দিনের মতো, তখন সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাহাজমালিকরা এই জলপথ ব্যবহার নিয়ে ক্রমশ সতর্ক হয়ে উঠছেন, কেউ কেউ নিরাপত্তা জোরদার করছেন, আবার কেউ কেউ বিকল্প রুটে যাত্রা করছেন।
নৌ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালি ও আশপাশের উপসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক জাহাজের নেভিগেশন সিস্টেমে ইলেকট্রনিক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক কম্বাইন্ড মেরিটাইম ফোর্সের তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, এই সপ্তাহে তারা ইরানের বন্দর আব্বাস শহরের আশপাশের অঞ্চল থেকে উদ্ভূত ইলেকট্রনিক বিঘ্নসংক্রান্ত রিপোর্ট পেয়েছে।
তেহরান অতীতে পশ্চিমা চাপের প্রতিক্রিয়ায় এই প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইরানি কর্মকর্তারা পুনরায় সেই সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। ২০১৯ সাল থেকে অঞ্চলটিতে জাহাজগুলোর ওপর একের পর এক হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করা হচ্ছে। এসব হামলা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা সিদ্ধান্তে ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর।
হরমুজ প্রণাল বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলবে। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামরিক সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় তেহরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে অনিচ্ছুক বলেই মনে করা হয়। এই সংঘর্ষ কিংবা পূর্ববর্তী ইলেকট্রনিক বিঘ্নসংক্রান্ত রিপোর্ট নিয়ে ইরান এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
এসএম/টিকে