রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা শনাক্তের পরীক্ষার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করছে স্থাস্ব্য বিভাগ। করোনাভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। তবে পুরোদমে শুরু হতে ৩-৪ দিন সময় লাগবে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে ৪০০টি করোনা শনাক্তকরণ কিট সরবরাহ করা হয়েছে।
পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
রংপুর মেডিক্যাল ও স্থাস্ব্য অধিদপ্তরের তথ্য অনূযায়ী বলা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত আরটি-পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে নমুনা বিশ্লেষণ চালু হয়নি।আরটি-পিসিআর চালু করতে আরো কিছু সময় লাগবে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর মেশিন এখনো ক্যালিব্রেটেড নয়, সে কারণে সেখানে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
মেশিনটি ক্যালিব্রেটেড হলে সেখানেও পূর্ণমাত্রায় পরীক্ষা চালু হবে। এটি টেকনিক্যাল বিষয়, অতিদ্রুত চালু করা হবে।
তবে সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অপ্রয়োজনে ভিড় এড়িয়ে চলা ও সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চলছে।
রংপুরে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোতে এ সংক্রান্ত রোগীর ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে মেডিসিন ও শিশু বিভাগে ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১০টি বেড প্রস্তুতের কাজ চলছে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপপরিচালক ডা. মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, রংপুর-দিনাজপুর দুই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে ৪০০ করে মোট ৮০০টি করোনা শনাক্তকরণ কিট সরবরাহ করা হয়েছে।
ধাপে ধাপে বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালেও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, আরটি-পিসিআর চালু করতে আরো কিছু সময় লাগবে। তবে কিটের মেয়াদ ও সরবরাহ সীমিত হওয়ায় ঢাকা থেকে অগ্রাধিকারে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করছে। প্রাথমিকভাবে এই দুই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা বা সিডিসি’র তথ্যমতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য ভাইরাস শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ ভাইরাস অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়, যা আসলে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এই টেস্টের মাধ্যমে মূলত একটি ভাইরাসের প্রোটিন অংশ শনাক্ত হয়। পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে যেমন ভাইরাসের নিউক্লিয়িক অংশ শনাক্ত করা হয়, ঠিক তেমন অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যখন একজন মানুষ অসুস্থ থাকবেন, তখন তার নমুনা সংগ্রহের পর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রেও নাক বা গলা থেকে সোয়াব বা নমুনা সংগ্রহ করে দেখা হয় সেখানে ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কিনা।
২০২২ সালের ৮ অক্টোবর থেকে রংপুর বিভাগে করোনা সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে থাকে। প্রায় তিন বছর ধরে এই অঞ্চলে করোনা শনাক্তের হার শূন্যের কোঠায় রয়েছে।
স্থাস্ব্য বিভাগ বলছে, রংপুর বিভাগে-বিগত সময়ে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৪ হাজার ৮৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৬৩ হাজার ৪৯৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯১ জনের। রংপুর বিভাগে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে দিনাজপুরে। এ জেলায় সর্বোচ্চ ৩৪১ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে রংপুর জেলায়।
এসএম/এসএন