বলিউডের ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ এবং প্রবীণ অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর জীবনে অনেক উত্থান-পতন গিয়েছে। শূন্য থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শিখরে নিজেকে নিয়ে গেছেন এই অভিনেতা। মাথার ওপর ছিল না কোনো নির্ভরযোগ্য হাত। তারপরেও সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে মিঠুন বলিউডের বিশাল সাম্রাজ্যে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন।
এমনও সময় গিয়েছে ক্যারিয়ারে, টানা ৩৩টি সিনেমা ফ্লপ হয়েছে অভিনেতার। তবে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় বলিউডে যখন নতুন স্টাইল, নতুন হিরোদের উত্থান, ঠিক তখনই মিঠুন পেরোচ্ছিলেন তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮—এই পাঁচ বছরে একটানা ৩৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল তার, যেগুলোর একটিও বক্স অফিসে সফল হয়নি।
এমন ধাক্কায় অনেকেই হয়ত ক্যারিয়ারের ইতি টানতেন। কিন্তু মিঠুন ছিলেন সেই বিরল অভিনেতাদের একজন, যিনি ব্যর্থতাকে ভয় পান না। এই দুঃসময়েই তিনি করেছিলেন ‘চিতা’, ‘জল্লাদ’ কিংবা ‘রাবণ রাজ’-এর মতো চলচ্চিত্র, যেগুলো প্রশংসিত হয়েছিল গণমানুষের কাছে। অর্থাৎ ছবি ফ্লপ হলেও তার ব্যক্তিত্ব, তার স্ক্রিন প্রেজেন্স কখনো ম্লান হয়নি। বরং তিনি হয়ে উঠেছিলেন সেই অভিনেতা, যিনি কখনোই হাল ছাড়েন না।
মিঠুনের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হলো তাঁর রূপান্তর। একসময়ের মূলধারার হিরো, পরে হয়ে ওঠেন পার্শ্বচরিত্রের অন্যতম বিশ্বস্ত মুখ। ‘গুরু’, ‘ওহ মাই গড!’, ‘হাউসফুল ২’, কিংবা ‘দ্য তাসখন্দ ফাইলস’-এর মতো ছবিতে তাঁর সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিও দর্শকদের মনে আলাদা প্রভাব ফেলেছে। এইসব চরিত্র প্রমাণ করে, একটি দৃঢ় অভিজ্ঞতা কখনো পর্দায় হালকা হয়ে যায় না।
মিঠুনের প্রতিভা কেবল বাণিজ্যিক ছবিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ১৯৭৭ সালে ‘মৃগয়া’ ছবির জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার—সেই প্রথম। এরপর ১৯৯৩ সালে ‘তাহাদের কথা’ এবং ১৯৯৮ সালের ‘বিবেকানন্দ’ ছবির জন্যও পেয়েছেন জাতীয় স্বীকৃতি। তাঁর অভিনয়ের পরিসর এতটাই বিস্তৃত যে জনপ্রিয়তা ও প্রজ্ঞা—দুটিই নিজের করে নিয়েছেন সমান দক্ষতায়।
তারকা খ্যাতির বাইরে, মিঠুন চক্রবর্তী ছিলেন একটি আন্তর্জাতিক ফেনোমেনন। ১৯৮২ সালে ‘ডিসকো ড্যান্সার’-এর মাধ্যমে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বহু দেশে হয়ে উঠেছিলেন এক সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি। সেখানে আজও তার জনপ্রিয়তা কিংবদন্তির মতো বলা হয়। এই দীর্ঘ ও বিচিত্র যাত্রার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ প্রদান করে—দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান। এটি কেবল একজন অভিনেতাকে নয়, একজন লড়াকু শিল্পীকে কুর্নিশ জানানো।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে মিঠুনকে দেখা গেছে ‘শ্রীমান ভার্সেস শ্রীমতী’ ছবিতে। এছাড়াও রয়েছে তার ‘দ্য দিল্লি ফাইলস’ (পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী) এবং একটি দক্ষিণী অ্যাকশন ফিল্ম ‘ফৌজি’, যা আগামী বছর মুক্তি পাবে।
ইউটি/এসএন