ডাকসু সংশোধনে শুধু রাজনৈতিক নয়, একাডেমিক নিয়েও ভাবতে হবে : উমামা ফাতেমা

‘ডাকসুকে সংশোধন করতে হলে শুধু রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে হবে না, একাডেমিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে কি-না।’ বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ‘মঙ্গলবারের গপ্পোসপ্পো’র আয়োজনে ‘ডাকসু নির্বাচন : অধিকার নাকি আনুমানিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন উমামা ফাতেমা।

‘মঙ্গলবারের গপ্পোসপ্পো’র সংগঠক সজীব হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদুজ্জামান শিপন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আরমানুল হক, ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসু।

এ সময় উমামা ফাতেমা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাতীয় নির্বাচনের চাপে পড়ে এখন ডাকসু নির্বাচনের তড়িঘড়ি করছে। যখন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল না তখন ডাকসুর কথা মনে করে নাই। কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে পরীক্ষা। যার ফলে অনেকেই এই ডাকসু থেকে দূরে থাকবে। ডাকসুকে সংশোধন করতে হলে শুধু রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে হবে না, একাডেমিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে কি-না।

তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্ররা যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে ভোগে। যারা ছাত্র নেতারা আছেন তারা অধিকাংশই ডিপার্টমেন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে, এই দিকগুলো রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও ভাবতে হবে‌। ডাকসুকে একটা একাডেমিক ক্যালেন্ডারে আনতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের জন্য ডাকসু অধিকার। গত ডাকসু নির্বাচনে আমি একটা হলের ভিপি পদে নির্বাচন করেছিলাম। নির্বাচনের দিন আমাকে বলা হয় আপনি এখান থেকে চলে যান। তখন আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে ডাকসুকে অধিকার হিসেবে চেয়েছে ছাত্রদল। ডাকসুতে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমরা প্রশাসনকে নানা প্রস্তাবনা দিয়েছি। যেখানে শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা চিন্তা করে ডাকসু নির্বাচনের কথা বলেছি। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে যে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে তাকে ছাত্রদল সাদরে গ্ৰহণ করবে।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের বলেন, করোনার মধ্যে কর্মচারীদের নির্বাচন হয়। শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়। অথচ ডাকসু হতে গেলে কত বাধা। আমাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা ক্যাম্পাসে আমূল পরিবর্তন চাই। আর এটা তখন‌ই নিশ্চিত হবে যখন ডাকসু প্রতিনিধি থাকবে।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, বিগত ১৫ বছর এই ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক মত ছিল না। এই অবস্থাকে দূরীকরণের জন্য ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আগের প্রশাসন বাদ দিয়ে নতুন প্রশাসন নিয়োগ করা হয়েছে। প্রশাসন যখন শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে কাজ করে না তখন শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে প্রশাসনকে প্রশ্ন করে। প্রশাসন যে একচেটিয়া সিদ্ধান্ত নিতে না পারে সেদিকে কাজ করে ডাকসু নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা।

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আরমানুল হক বলেন, এবারের ডাকসুতে সকল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রস্তাবনা হচ্ছে, সভাপতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত করতে হবে। একাডেমিক ভবনগুলো নির্বাচন কেন্দ্র দিতে হবে। কিন্তু এই ব্যাপার প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ দেখছি না‌।

ছাত্র ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিট দিতে হবে। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ক্যান্টিন থাকবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রাত ৯টা পর্যন্ত বাস চালু করতে হবে, রুট বৃদ্ধি করতে হবে।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ডাকসু প্রয়োজন, কারণ রাষ্ট্রের একটা ক্ষমতা কাঠামো থাকে। রাষ্ট্র যদি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখন প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

এসএম/টিকে   

Share this news on:

সর্বশেষ

জাতীয় দলে ফিরতে পারছেন না মোসাদ্দেক; কেন এই অবহেলা Jun 25, 2025
img
এবার ড. ইউনূস ও দুদকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ টিউলিপের Jun 25, 2025
img
‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ টেকসই করতে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে’ Jun 25, 2025
img
মে মাসে ৫০১টি সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৪৯০ Jun 25, 2025
img
ঢাকায় হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা, তাপমাত্রা কমবে কিছুটা Jun 25, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলা, নিহত আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি Jun 25, 2025
img
প্রথম টেস্টের একাদশ প্রকাশ করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া Jun 25, 2025
img
পরমাণু ইস্যুতে সমঝোতার জন্য ইরানের সহযোগিতা চায় আইএইএ Jun 25, 2025
img
আজ থেকে শুরু হচ্ছে পরিবেশ ও বৃক্ষমেলা Jun 25, 2025
img
দিনাজপুরে ছড়াচ্ছে করোনা, শনাক্ত ২ জন Jun 25, 2025
img
ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’ চান না ট্রাম্প Jun 25, 2025
img
ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে ককটেল নিক্ষেপ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল Jun 25, 2025
img
ঢাকার বায়ু আজ সহনীয়, দূষণের শীর্ষে জাকার্তা Jun 25, 2025
img
যে কোনো মুহূর্তে ‘ট্রিগার টানতে’ প্রস্তুত ইরান: মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ Jun 25, 2025
img
গাজায় অতর্কিত হামলা, পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত Jun 25, 2025
img
পর্দায় নয়, 'বাস্তবেও কাভি খুশি কাভি গামের' অঞ্জলির মত মা কাজল Jun 25, 2025
যে অঙ্গ নষ্ট হলে আপনি নষ্ট | ইসলামিক জ্ঞান Jun 25, 2025
আপাতত আ/ন্দো/লন স্থগিত করলো বিডিআর নেতারা! Jun 25, 2025
জুলাইকে কেন্দ্র করে কোনো কোটা দেওয়া যাবে না Jun 25, 2025
দলীয় প্রতীক পেয়ে যা বলছেন জামায়াত সেক্রেটারি Jun 25, 2025