সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, প্রত্যেকে চায় তার নিজের মতামতই দেশের সবাই মেনে নিক। আর তাতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন সেই লোকজনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে, যারা আগে ঐক্যবদ্ধ ছিল। সবাই এমনকি ড. ইউনূস উনার তো কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য থাকার কথা না, কারণ উনি তো রাজনীতি করেন না।
উনার কোনো রাজনৈতিক দলও নাই। উনিও কিন্তু সবার সঙ্গে মিলে চলছেন না। নিজের মতো নিজে একটা মত দিচ্ছেন আগে, সেই মতে সবাইকে মিলতে বলছেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম আইটিভি নিউজে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সম্পর্কে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন নানান প্রশ্নের উত্তরে।
বিশেষ করে গত এক বছরে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিকভাবে নাটকীয় পরিবর্তন চলছে সে বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।
বুধবার (২৫ জুন) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এ সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলেন মাসুদ কামাল।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে গ্রামীণের বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন ড. ইউনূস। গ্রামীণের নানারকম প্রকল্প নতুন নতুন চালু করতেন তিনি।
সেগুলো নিয়ে থাকতেন। আবার সরকারের সঙ্গে লড়াই করতেন। মানে সরকার উনাকে নানাভাবে অপদস্ত করার জন্য হেনস্থা করার চেষ্টা করত। হাসিনা সরকার। তারপরে উনি ফাইট করেছেন, কিন্তু কখনো উনি ঝিমিয়ে পড়েননি, থেমে যাননি, যে কারণে উনাকেও আমার কাছে উনার বয়সের তুলনায় অনেক সচল মনে হয়।
এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক একটা বিষয়।
মাসুদ কামাল বলেন, কিছুদিন আগে ড. ইউনূস যখন জাপান গিয়েছিলেন, সেখানে মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে উনার দেখা হয়েছিল এবং সেখানেও ড. ইউনূসের সঙ্গে মাহাথির মোহাম্মদ বেশ সময় নিয়ে আলাপ করেছেন এবং আমার মত আরো অনেকেরই জানার ইচ্ছা হয়েছিল নিশ্চয়ই যে মাহাথির মোহাম্মদ কি উনাকে কোনো পরামর্শ দেবেন যে কীভাবে দেশটা পরিচালনা করা যায়, কীভাবে বাংলাদেশটাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সবার মধ্যে ঐক্য তৈরি করে সামনের দিকে অগ্রসর করা যায়।
তিনি আরো বলেন, জানতে পেরেছি সেরকম কোন পরামর্শ উনি ড. ইউনূসকে দেননি। কেন দেননি, সে কথা উনি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আসলে এটা দেওয়ার ক্ষমতাই আমার নাই। আমি মনে করি, উনার দেশ কীভাবে চলবে- এটা বলার মত যোগ্যতা আমার মধ্যে নাই। এটা আত্মোপলব্ধি, অতি উত্তম আত্মোপলব্ধি মাহাথির মোহাম্মদের।
এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন যে হাসিনাকে উৎখাতের সেই ঐক্য বাংলাদেশে কই? মাহাথির মোহাম্মদ একটু হতাশ হয়েছেন যে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে হাসিনাকে তাড়ালো, সে ঐক্যটা টিকল না কেন? এখন সবাই যার যার দিকে আল্লাহ আল্লাহ কথা বলছে। কেন এখনো তারা ঐক্যবদ্ধভাবে ঠিক করতে পারছে না যে তারা কী ধরনের সরকার চায়- উনি এই প্রশ্নটাই করেছেন।
তিনি বলেন, আপনি যদি বিএনপি করেন, আপনি মনে করছেন- সবাই আপনাকে অসহযোগিতা করছে; আপনি যদি জামায়াত করেন, আপনি বলবেন- বিএনপি আপনাদেরকে অসহযোগিতা করছে; আপনি যদি এনসিপি করেন, এনসিপি বলবে- সবাই তাদেরকে অসহযোগিতা করছে। তারা একা ফাইট করছে। সাধারণ মানুষ কী ভাবছে যে আমরা যা চেয়েছিলাম তা কেন পাচ্ছি না, আমরা যা চেয়েছিলাম তা কেন ড. ইউনূসের মধ্যেও পাচ্ছি না- এই প্রশ্ন কিন্তু আসছে। দায়ী করবেন কাকে?
মাসুদ কামাল আরো বলেন, প্রত্যেকে চায় তার নিজের মতামতই দেশের সবাই মেনে নিক। আর তাতেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এখন সেই লোকজনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিচ্ছে, যারা আগে ঐক্যবদ্ধ ছিল। সবাই এমনকি ড. ইউনূস উনার তো কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য থাকার কথা না, কারণ উনি তো রাজনীতি করেন না। উনার কোনো রাজনৈতিক দলও নাই। উনিও কিন্তু সবার সঙ্গে মিলে চলছেন না। নিজের মতো নিজে একটা মত দিচ্ছেন আগে, সেই মতে সবাইকে মিলতে বলছেন।
আপনার দায়িত্ব হলো সকল রাজনৈতিক দল, যত ভিন্ন মত আছে, রাজনৈতিক ভিন্নমত যত আছে- সবার সঙ্গে বসে মিলে একটা জায়গায় এনে দাঁড় করানো। বলা যায়- আপনি কী চান, আপনি কী চান, আপনি কী চান- আসেন, আমরা একটা পর্যায়ে আসি। উনি তা করছেন না। সবাই যা চাচ্ছেন, তার বিপরীতে গিয়ে নিজে একটা মত দিচ্ছেন। দিয়ে বলছেন, সবাই এটা মানুক। তো এটা কিন্তু ঐক্য প্রতিষ্ঠার কোন সাইন্টিফিক পদ্ধতি নয়।
এজন্য হয়ত উনার ব্যাপারে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না এই মাহাথির মোহাম্মদ। তবে মাহাথির মোহাম্মদের কথাকে আত্মবাক্য মনে করার কোনো কারণ নাই। উনি যে সবজান্তা সব জানেন তাও না।
আরএম