তাঁর জীবনটা যেন ছিল এক বিলাসী পরিকল্পনার খাতা—যার প্রতিটি পাতায় ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, স্বপ্ন আর দায়বদ্ধতা। কিন্তু ভাগ্যের খসড়া কে কখন ছিঁড়ে ফেলে, কে জানে!
১২ জুন, লন্ডনের এক ঘোড়দৌড়ের মাঠে যখন পোলো খেলতে খেলতে আচমকা থেমে গেল সঞ্জয় কাপুরের প্রাণ, তখন থমকে গেল একটা অধ্যায়ও। করিশ্মা কাপুরের প্রাক্তন স্বামী হিসেবেই অনেকের কাছে বেশি পরিচিত তিনি। তবে তাঁর পরিচয়ের গন্ডি এতটাও সরল ছিল না। তিনি ছিলেন সোনা কমস্টার সংস্থার কর্ণধার—৩৯,০০০ কোটি টাকার সাম্রাজ্য যাঁর হাত ধরে চলত।
তিনটি বিয়ে করেছেন সঞ্জয়। তবে করিশ্মার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বরাবরই ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দাম্পত্যজীবনের তিক্ততা থেকে উঠে এসেছিল গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ পর্যন্ত। কিন্তু সেই সম্পর্কের শেষবিন্দুতে এসে যখন শোকসভা বা শেষকৃত্য—সেখানেও করিশ্মা ছিলেন পাশে।
মৃত্যুর মাস কয়েক আগেই এক সাক্ষাৎকারে সঞ্জয়ের গলায় ঝরে পড়েছিল জীবন নিয়ে দারুণ আশাবাদ। অক্টোবরে নিজেই লিখেছিলেন নিজের জন্য ১০ বছরের পরিকল্পনা। সেটা ছিল কোনও কর্পোরেট টার্গেট নয়, বরং তাঁর নিজস্ব জীবনের ফোকাস লিস্ট—যাতে ছিল খেলাধুলা, পরিবার, ফিটনেস, কাজ আর ‘অ-কাজের’ প্রতিশ্রুতি। তিনি বলেছিলেন, “আমি কী করব এবং কী করব না, সে বিষয়ে আমি খুব স্পষ্ট।”
পোলো ছিল তাঁর প্রাণের খেলা, আর পরিবার ছিল হৃদয়ের ঠিকানা। বলেছিলেন, “আমি এমন ব্যক্তি নই, কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। নিজের মর্জির মালিক হওয়া একটি দুর্দান্ত বিলাসিতা।” কিন্তু কী অদ্ভুত নিয়তি! ঠিক সেই খেলাটাই তাঁর জীবন কেড়ে নিল—যা তিনি সবচেয়ে ভালোবাসতেন।
জীবন যে কোনও কাগজের ছেঁড়া কোণ থেকে কখন যে হারিয়ে যায়, তা বোঝা মুশকিল। সঞ্জয় কাপুরের গল্প আমাদের শেখায়—পরিকল্পনা করাই ভালো, কিন্তু শেষকথা বলে যায় সময়।
এসএন