দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির উত্তর সীমান্তসংলগ্ন গুয়াংহোয়া দ্বীপ থেকে ১ হাজার ৩০০টি প্লাস্টিক বোতল সমুদ্রে ফেলে উত্তর কোরিয়ায় পাঠানোর চেষ্টাকালে ছয়জন মার্কিন নাগরিককে আটক করেছে। বোতলগুলোর মধ্যে চাল, মার্কিন ডলার এবং বাইবেল ছিল বলে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানায়।
শুক্রবার ভোরে এক সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি সমুদ্র উপকূলে বোতলগুলো ফেলার সময় তাদের আটক করে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি উপকূলীয় সামরিক ইউনিট। এই এলাকাটি ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘বিপজ্জনক অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করে সাধারণ মানুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
ইয়োনহাপের খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার প্রচারণামূলক সামগ্রী যেমন—প্লাস্টিক বোতল ও বেলুনের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো—দক্ষিণ কোরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অঞ্চলটিতে পিয়ংইয়ং-বিরোধী প্রচারণা ছড়ানো নিষিদ্ধ বলে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক আদেশ জারি রয়েছে। এর আগেও ১৪ জুন এক দক্ষিণ কোরিয়ান অ্যাকটিভিস্টকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যিনি গুয়াংহোয়া দ্বীপ থেকেই উত্তর কোরিয়ায় বেলুন পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন।
দুই দক্ষিণ কোরিয়ান পুলিশ কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, তারা ছয়জন মার্কিন নাগরিককে আটক করেছে।
তবে তাদের পরিচয় বা উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত ২০২০ সালে পাশ হওয়া একটি বিতর্কিত আইন বাতিল করে, যেখানে উত্তর কোরিয়ায় প্রচারণামূলক লিফলেট বা সামগ্রী পাঠানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। আদালত একে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ’ বলে রায় দেয়।
তবে জুনের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমনে এবং সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নিরাপত্তাভিত্তিক আইন প্রয়োগে আগ্রহী।
তিনি সীমান্ত এলাকায় পিয়ংইয়ংবিরোধী লাউডস্পিকার প্রর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রচার সম্প্রচার শোনা যাচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট লি শান্তিপূর্ণ কোরীয় উপদ্বীপ গঠনের প্রত্যয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার দ্বার ফের খুলতে চান। তবে এখনো উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে পিয়ংইয়ং ঘোষণা দিয়েছিল, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে এবং শান্তিপূর্ণ পুনরেকত্রীকরণের লক্ষ্য পরিত্যাগ করছে।
উল্লেখযোগ্য যে, কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনাও ২০১৯ সাল থেকে স্থগিত রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা
পিএ/টিকে