২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখা এক তরুণীর চোখে তখন ছিল স্বপ্ন, কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা আর পারফরম্যান্সে ছিল এক অমোঘ আকর্ষণ। কঙ্গনা রানাউতকে তখন বলা হয়েছিল বলিউডের অন্যতম সম্ভাবনাময় ‘আউটসাইডার’। সময়ের সঙ্গে তিনিই হয়ে ওঠেন নারী-কেন্দ্রিক সিনেমার মুখ। কিন্তু দুই দশকের মধ্যে আজ সেই কঙ্গনার অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন — তিনি এখন একা, বিতর্কিত, এবং প্রায় পুরো ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিচ্ছিন্ন।
শুরুর কেরিয়ার ছিল ঈর্ষণীয়। ‘ফ্যাশন’, ‘কুইন’, ‘তনু ওয়েডস মনু’ প্রভৃতি ছবির মাধ্যমে একাধিক জাতীয় পুরস্কার, সমালোচকদের ভালোবাসা এবং বক্স অফিস সাফল্য তাঁকে এনে দিয়েছিল অসাধারণ উচ্চতা। কিন্তু সেই উত্থান খুব ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে থাকে পর্দার বাইরের বিতর্কে।
২০১৯ সালে ‘মণিকর্ণিকা’ যেন এক মোড় ঘোরানো মুহূর্ত ছিল। সেখানে কঙ্গনা অভিনেত্রী ও পরিচালক দুই ভূমিকাতেই হাজির হন। কিন্তু পরিচালক কৃষ জাগারলামুদি অভিযোগ করেন, কঙ্গনা ছবির পরিচালনার দায়িত্ব একতরফাভাবে দখল করে নেন, নিজের নামে সব কৃতিত্ব তুলে নেন। এই অভিযোগ ছড়িয়ে পড়তেই ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই তাঁর সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে অস্বস্তি প্রকাশ করতে থাকেন।
এরপর তিনি বলিউডের “মুভি মাফিয়া” ও “নেপো কিডস”-এর বিরুদ্ধে একা হাতে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শুরুতে অনেকেই তাকে সমর্থন করলেও, পরে দেখা যায় তিনি সহ-অভিনেতা থেকে পরিচালক, সমালোচক — এমনকি নিজস্ব শিবিরের মানুষদেরও আক্রমণ করতে থাকেন। প্রায়শই ভিত্তিহীন অভিযোগ, সামাজিক মাধ্যমে তীব্র মন্তব্য এবং চরম অবস্থানের কারণে বলিউড থেকে ধীরে ধীরে সবাই দূরে সরে যান।
রাজনীতিতে প্রবেশের পর তিনি চলচ্চিত্রের বাইরেও বিভাজনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। সিনেমা আর শিল্পকে ব্যবহার করেন রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবে। নিজেকে একমাত্র “সত্য বলার সাহসী কণ্ঠ” হিসেবে দেখাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেন শ্রোতা ও সহানুভূতি।
আজ কঙ্গনার অবস্থান এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছেছে, যেখানে তাঁকে ঘিরে আর কোনো উন্মাদনা নেই, নেই ইন্ডাস্ট্রির আগ্রহও। নিজের সিদ্ধান্তে, নিজের পথেই তিনি যেন ধীরে ধীরে নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছেন।
একসময় যিনি ছিলেন বলিউডের কুইন, আজ তিনি যেন কেবলই একটি সতর্কবার্তা — প্রতিভা থাকলেই হয় না, সেই প্রতিভা যদি আত্মনিয়ন্ত্রণহীন হয়, যদি সত্য বলার কৌশল না থাকে, তবে তা শেষ পর্যন্ত নিজের বিপক্ষেই দাঁড়ায়।
এসএন