তামিলনাড়ুর কোটা গিরিতে জন্ম নেওয়া এক মেয়ের গল্প, যিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করে ডাক্তার হতে পারতেন, কিন্তু বেছে নিলেন সিনেমার জগৎ—যেখানে নিজের সরলতা, প্রতিভা আর আত্মবিশ্বাস দিয়ে জয় করে নিয়েছেন লাখো হৃদয়। তিনি সাই পল্লবী।
৯ মে ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া সাই পল্লবীর শৈশব কেটেছে পড়াশোনা আর নাচের মধ্যে। ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন জর্জিয়ার তিবলিসি। ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ২০২০ সালে পাশ করেন ভারতের এফএমজিই পরীক্ষা। তবে হোয়াইট অ্যাপ্রনের বদলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
তাঁর ভাষাজ্ঞানও বিস্ময়কর—তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, ইংরেজি থেকে শুরু করে শিখেছেন জর্জিয়ানও। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে নিয়ে যায় বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে। সেখান থেকেই শুরু সিনেমার দিকে যাত্রা।
প্রেমাম ছবিতে মালার মিসের চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি হয়ে ওঠেন জাতীয় ক্রাশ। প্রথম ছবিতেই জিতে নেন ফিল্মফেয়ার সাউথের সেরা নবাগত অভিনেত্রী পুরস্কার। এরপর একে একে ‘ফিদা’, ‘গার্গি’, ‘ভিরাটা পারভম’, ‘লাভ স্টোরি’, ‘শ্যাম সিংহা রায়’, ‘কালী’—সব ছবিতেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন দুর্দান্ত অভিনেত্রী হিসেবে।
তিনি শুধু অভিনয়েই নয়, নিজের সহজ-সরল ব্যক্তিত্ব দিয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। যেখানে রঙিন, চাকচিক্যময় ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই গ্ল্যামার বাড়াতে ব্যস্ত, সাই পল্লবী সেখানে মেকআপ ছাড়া নিজের প্রকৃত রূপেই পর্দায় হাজির হন। তাঁর এই ভিন্নতা নারীদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলে দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা।
এখন সাই পল্লবী আর দক্ষিণের গণ্ডিতে নেই। বলিউডেও পা রাখছেন তিনি। নিতেশ তিওয়ারির ‘রামায়ণ’ ছবিতে সীতার চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। যেখানে রামের চরিত্রে থাকছেন রণবীর কাপুর আর রাবণের চরিত্রে ইয়াশ। এই বড় বাজেটের ছবির পাশাপাশি আরও কয়েকটি বড় প্রজেক্টে কাজ করছেন তিনি।
এই সাফল্যের পথে তিনি পেয়েছেন একের পর এক স্বীকৃতি। ১০ বার ফিল্মফেয়ার সাউথে মনোনয়ন পেয়ে ৬ বার জিতেছেন। ২০২০ সালে ফোর্বস ইন্ডিয়ার ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় জায়গা করে নেন একমাত্র অভিনেত্রী হিসেবে।
সাই পল্লবী আজ কেবল অভিনেত্রী নন—এক প্রজন্মের জন্য কালচারাল আইকন। সরলতা, শিক্ষা, বিনয় আর আত্মবিশ্বাসের এমন সমন্বয় খুব কমই দেখা যায়। যখন একজন ডাক্তার নিজের সমস্ত সুরক্ষিত পথ ছেড়ে চলচ্চিত্রের সীতার চরিত্রে রূপ নেন, তখন বোঝা যায়—ভারতীয় সিনেমা পেয়েছে এক সৎ, প্রতিভাবান আর প্রকৃত শিল্পীর প্রতিচ্ছবি।