মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সিবিএর সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াত নেতা নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তারের পর বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে চাঁদা না পেয়ে ‘মব’ তৈরি করে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) নগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে একটি অভিযোগে দিয়েছেন নওশেদ জামালের স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত। এতে ঘটনার পেছনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনকে দায়ী করছেন। সবশেষ শনিবার সন্ধ্যায় নিজামকে শোকজ করা হয়েছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশিদ) এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনামের নির্দেশনায় এবং সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলামের সই করা নোটিশে বলা হয়, নিজাম উদ্দিন সংগঠনের নীতিমালা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কিছু কার্যকলাপে জড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন তাকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না- তা লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে আগামী তিন কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে সিএমপি কমিশনারের বরাবরে জমা দেওয়া অভিযোগে রিয়াজুল জান্নাত অভিযোগ করেন, তার স্বামী নওশেদ জামাল চট্টগ্রামে মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকার পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীর একজন রুকন। তিনি জামায়াতের বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠিনিক ওয়ার্ডে সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি তার স্বামীর কাছে চাঁদা দাবি করে আসছেন। দুই কোটি টাকা চাঁদা না দেওয়ায় তার স্বামীকে ফাঁসাতে নানা চক্রান্ত করা হয়।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পতেঙ্গা ইস্টার্ন কেবলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে বসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তার স্বামীকে ফাঁসিয়ে দিতে চক্রান্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আগ্রাবাদে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অফিসের উদ্দেশ্যে যাওয়াকালে পথে ১০ থেকে ১৫ জন তার স্বামীকে ধরে মারধর ও মব তৈরি করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পরে তড়িঘড়ি করে পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এই ঘটনায় কোতোয়ালি ওসি ও নিজাম উদ্দিন মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বৈছাআর মহানগর কমিটির সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, যিনি পুলিশের কাছে এই অভিযোগ করেছেন তিনি যদি আমার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির নূন্যতম কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমি স্বেচ্ছায় নিজেকে আইনের হাতে সোপর্দ করব। প্রয়োজনে আমার নামে একাধিক মামলা হবে। আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। আর উনি যদি কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারেন তাহলে এমন অভিযোগের জন্য আমি আইনের আশ্রয় নেব। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহানগরের একজন নেতা হিসেবে আমার সম্মানহানি অর্থ পুরো বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্মের সম্মানহানি করা হবে। এরজন্য আমি অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকব।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে নিজাম উদ্দিন দাবি করেছেন তিনি চাঁদা চাননি। এ ছাড়া ওই নারীর উল্লিখিত ভিডিওটি পুরোনো। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ভিডিওটি পতেঙ্গা থানা এলাকার, তা–ও চার থেকে পাঁচ মাস আগের। অথচ ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র দুই দিন আগে কোতোয়ালি থানার একটি মামলায়। ভিডিওতে কোথাও টাকা দাবির তথ্য না থাকার পরও এটিকে চাঁদাবাজির তকমার ঢাল হিসেবেই ব্যবহার করছে একটি চক্র।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) নগরের ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ এলাকায় মেঘনা পেট্রোলিয়াম কার্যালয়ের সামনে থেকে নওশেদ আলমকে ধরে কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। পরে তাকে কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
ইউটি/টিকে