গাজা ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ গেল আরও ৮১ জনের

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় একদিনে কমপক্ষে আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন।

রোববার (৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, রোববার সারাদিন ধরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং একাধিক পরিবারের সদস্য রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন।

এর মধ্যে গাজার শেখ রাদওয়ান ও আল-নাসর এলাকায় দুইটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। সেখানে বাস্তুচ্যুত বহু পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। এতে অন্তত ২৫ জন নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অধিকাংশ মানুষ তখন ঘুমাচ্ছিলেন, যাদের অনেকেই ছিলেন শিশু ও নারী। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকেই আটকা পড়ে আছেন।

ওয়াদি গাজার দক্ষিণে এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী গোলাবর্ষণ করলে ৪ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হন বলে আল-আউদা হাসপাতালের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। গাজা শহর ও মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলায় ৬ জন নিহত হন।

উত্তর গাজার আল-সাফতাওয়ি এলাকায় এক বেসামরিক গাড়িতে ড্রোন হামলায় তিন ভাই মারা যান। শেখ রাদওয়ানে এক আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে ড্রোন হামলায় আরও ৩ জন নিহত হন। গাজার পশ্চিমের শাতি শরণার্থী শিবিরে, একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ওপর বিমান হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।

আল-শিফা হাসপাতাল জানায়, নিহতদের মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় এসেছে এবং আহতদের সংখ্যা ছিল অনেক। খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় দুটি অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে শিশু ও এক গর্ভবতী নারী রয়েছেন।

আল-আলবানী মসজিদের কাছে অপর এক ড্রোন হামলায় ৪টি মরদেহ উদ্ধার হয়, তাদের তিনজনই শিশু। গাজার আল-তুফাহ ও আল-দারাজ এলাকায় আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এক পরিবারের ৮ সদস্য ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন, অন্য একটি হামলায় আরও ৩ জনের প্রাণ গেছে।

এদিকে ইসরায়েলের অবরোধে খাদ্য ও পানি সংকটে থাকা মানুষজন যখন ত্রাণের আশায় লাইন দিচ্ছেন, তখনই এই হামলাগুলো চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদকরা।

যদিও আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে, তবুও ইসরায়েল গাজায় গণহত্যার ধারা অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এমন অবস্থায় গত নভেম্বরেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নেতার ছেলের অশালীন আচরণ, থানায় গেলেন অভিনেত্রী রাখি সাওয়ান্তের বান্ধবী! Jul 07, 2025
img
রিয়ালের ‘গোলমেশিন’কে দলে নিতে ১০ ক্লাবের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই Jul 07, 2025
img
ইউরোপ নয়, নেপাল-ভুটানেই সীমাবদ্ধ বাংলাদেশ ফুটবল দল Jul 07, 2025
img
জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চায় না, সুষ্ঠু পরিবেশ চায় জামায়াত: গোলাম পরওয়ার Jul 07, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া Jul 07, 2025
img
সরকারের সুচিন্তিত কৌশলের ফলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমছে : প্রেস সচিব Jul 07, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে কোনো কথা আমরা বলিনি: নাহিদ Jul 07, 2025
img
মাস শেষে ‘উৎসব’-এর টিকিট বিক্রি ছাড়াল ৫ কোটি টাকা! Jul 07, 2025
img
সংরক্ষিত নারী আসনেরও দরকার নেই: পাপিয়া Jul 07, 2025
img
‘এক কথায় দুর্দান্ত’, ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’ প্রসঙ্গে অস্কারজয়ী অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি Jul 07, 2025
img
রাতে ঢাকায়, সকালে ভুটান- ঋতুপর্ণা ও মনিকার ক্লান্তিহীন যাত্রা Jul 07, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকার ড. ইউনূস সার্কেলের একটা পুনর্বাসন কেন্দ্র : রাশেদ খাঁন Jul 07, 2025
img
এজবাস্টন টেস্টে বাংলাদেশি আম্পায়ারের প্রশংসা করলেন হার্শা ভোগলে Jul 07, 2025
img
সিনেমার স্বার্থে ৮ কেন, ১২ ঘণ্টা কাজ করা যায়- দীপিকাকে খোঁচা রাশমিকার! Jul 07, 2025
img
সংশোধনী প্রস্তাব আনছে ঐকমত্য কমিশন: ড. আলী রীয়াজ Jul 07, 2025
গর্বের ইতিহাস পেছনে, এবার মিশন অস্ট্রেলিয়া: তাবিথ আউয়াল Jul 07, 2025
বাংলাদেশি মেয়েরা জানে কঠিন পরিস্থিতিতে ফাইট করতে: ঋতুপর্ণা চাকমা Jul 07, 2025
তুপর্ণাদের সংবর্ধনায় যা বললেন কোচ পিটার বাটলার! Jul 07, 2025
রাজশাহীতে মাওলানা ভাসানীকে ম্বরণ করে যা বললেন নাহিদ ইসলাম Jul 07, 2025
প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার কে কড়া হুঁশিয়ারি Jul 07, 2025