যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, ‘পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান রাখতে চাচ্ছে সরকার। এই অজুহাতে জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।’
আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিলেকটিভ প্রতিবাদ করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া শুরু করেছে। বিএনপি এরই মধ্যে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।’
মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে যাতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে এবং এই অজুহাতে জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণ চায় না তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে। তারা চায়, দেশে আরো অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। সরকারের একটি অংশ তাদের এই দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনার অংশ হয়ে অপরাধ দমনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার অনুরোধ করার পরও দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সমর্থনসহ নানা বিষয়ে তরুণদের মাঝে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, যারা নিজেদের তারুণ্যের একমাত্র স্টেকহোল্ডার হিসেবে দাবি করেন, জরিপে তাদের সেই দাবি বুমেরাং হয়েছে। বরং এ দেশের তরুণেরা বহু লড়াই ও সংগ্রামের পরীক্ষিত বাংলাদেশপন্থী শক্তি বিএনপিতেই তাদের আস্থা ও বিশ্বাস রাখে বলে প্রতিভাত হয়েছে। আগামীতে বিএনপিকেই এ দেশের অধিকাংশ তরুণ ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এরপরই একটি গুপ্ত সংগঠন ও তাদের দিকনির্দেশনায় পরিচালিত একটি আনাড়ি দলের নেতাকর্মীরা উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছে এবং নতুন করে নানা ষড়যন্ত্র ও ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হয়েছে।’
মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আপনারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কার্যকর পদক্ষেপ নেন। এখানে আমাদের যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে প্রস্তুত আছি। একই সঙ্গে দেশের জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা সতর্ক থাকুন। আইন-শৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোনো সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বা অগণতান্ত্রিক শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেই বিষয়ে অনুগ্রহপূর্বক সতর্ক থাকুন।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মইনকে প্রকাশ্যে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এমন নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সমগ্র জাতি স্তম্ভিত। আমরা এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই যুগে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।’
এ প্রসঙ্গে যুবদল সভাপতি বলেন, ‘এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ও ইন্ধনদাতা হিসেবে যে সব যুবদল ও ছাত্রদল কর্মীদের নাম এসেছে তাদের সবাইকে আমরা সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি। কিন্তু এই ঘটনায় যাদের সরাসরি সংশ্লিষ্ট হিসেবে ভিডিও ফুটেজ ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে তারা গ্রেফতার হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা গণমাধ্যমসূত্রে জানতে পেরেছি, মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজনকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার পর ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, খুনিদের খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যবধি কেন মূল আসামিদের গ্রেফতার করা গেল না, এটা এক বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।’
মুন্না বলেন, ‘গত প্রায় এক বছরেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের জীবনের নূন্যতম নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়নি। আপনারা দেখেছেন, শুক্রবার খুলনায় যুবদলের একজন বহিষ্কৃত নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা জাতীয় গণমাধ্যমে কোনো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। চাঁদপুরে খুতবা দেওয়ার সময়ে একজন ইমামের ওপর নারকীয় কায়দায় প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, গত সপ্তাহে কুমিল্লায় মব তৈরি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামীয় এক যুবককে এবং পরবর্তীতে ছাত্রদল নেতা সাম্যকে বর্বর কায়দায় হত্যা করা হয়। ইতিপূর্বে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা পারভেজকে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামধারী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।’
আরআর/টিকে