জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা দিলদারের সহশিল্পী হিসেবে যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় তিনি অভিনেত্রী নাসরিন। এ দেশের চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকা জুটির বাইরে গিয়ে প্রথমবারের মতো আলোচিত জুটি হয়েছিলেন দিলদার-নাসরিন জুটি। এই জুটি সিনেমাপ্রেমীদের নিকট যেমন গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল, তেমনই বেশ বিনোদিত করেছিল।
কিন্তু খুব বেশি প্রলম্বিত হয়নি নাসরিন-দিলদার জুটির।
তার পরও এ দেশের মানুষ তাদের মনে রেখেছে। নায়ক-নায়িকার বাইরে গিয়ে কিভাবে এই জুটি তৈরি হয়েছিল? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল নাসরিনকে। রবিবার বিকেলে কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আসলে আমাদের একসঙ্গে খুব বেশি সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি। কিন্তু আমাদের জুটিটা আলোচিত হয়েছিল কিংবা এ দেশের সিনেমাপ্রেমী দর্শকের চোখে ভালো লেগে গিয়েছিল।
এ কারণেই হয়তো তারা মনে রেখেছে। আর দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে সিনেমায় আমার গান থাকত। দুজনের এই গানের কারণে আমাদের জুটিটা হিট হয়ে যায়।’
নাসরিন ও দিলদার জুটির সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ছিল ‘স্বপ্নের ঠিকানা।
নাসরিন বলেন, “এই সিনেমায় ‘যদি সুন্দর একটা বউ পাইতাম দিবানিশি তারে আমি ভালোবাসিতাম’ এই শিরোনামের পাঁচ মিশালি গান করার পর আমাদের জুটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই গানের শুটিং হয়েছিল এফডিসিতে। আমরা শুটিং শেষ করলাম, সিনেমা মুক্তির পর গানটা রেডিওতে সারা দিন বাজত, মানুষজন গান শুনে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখত। এভাবেই খুব দ্রুত পরিচিতি বেড়ে গেল নাসরিন-দিলদার জুটি।’’
নাসরিন-দিলদার জুটি ভেঙে যায় অল্প কিছুদিন পরই।
এ বিষয়ে অবশ্য নাসরিন বিস্তারিত বললেন না। তবে দায়ী করলেন এফডিসির ভেতরের রাজনীতিকে। আলোচিত এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এফডিসি তে আমাদের জুটি যখন হিট হয়ে যায়, তখন অনেকেই এটাকে ভালোভাবে নিতে পারছিল না। ফলে পেছন থেকে তারা নানা রকম ষড়যন্ত্র করতে শুরু করে। এভাবেই একটা সময় দিলদার ভাই আমার সঙ্গে সিনেমা করা বন্ধ করে দেন। সিনেমা না করলেও দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হতো। তিনি আমার শুটিং সেটে চলে আসতেন। কথা বলতেন।’
নাসরিনের দেখা দিলদার ছিলেন শিশুসুলভ মানুষ। রাগ করতেন আবার খুব দ্রুতই রাগ পড়ে যেত এমনটাই জানালেন অভিনেত্রী নাসরিন। তিনি বলেন, ‘দিলদার ভাই খুবই শিশুসুলভ মানুষ ছিলেন। হুট করে রেগে যেতেন। আবার সেই রাগ পড়ে যেত। একদিন শুটিং করছিলাম। কী নিয়ে যেন রাগ করলেন। আমার ওপর রাগ করে বোতল ছুড়ে মারলেন। ভাগ্যিস লাগেনি। অবশ্য দিলদার ভাই সেভাবেই মেরেছিলেন, যেন না লাগে।’
দিলদার যখন মারা যান সেটা বিশ্বাসই করতে পারেননি নাসরিন। আজ দিলদারের প্রয়াণের ২২ বছর। নাসরিন বললেন, ‘দিলদার ভাই চলে গেছেন। এখনো বিশ্বাস হয় না। মনে হচ্ছে এই তো সেদিনের ঘটনা, আমতলায় শুটিং করছি, দিলদার ভাই এসে দাঁড়ালেন। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছেন। আমিও হাসলাম। আসলে দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে জুটি হলেও তাঁকে আমি আমার বাবার মতো শ্রদ্ধা করতাম। তিনি ও তাঁর স্ত্রীও আমাকে মেয়ের মতো মনে করতেন। তাঁর সঙ্গে আরো বেশ কিছু ছবি করা যেত, হয়তো আমার ক্যারিয়ারের গতিপথই বদলে যেত। কিন্তু সে সময়ের এফডিসির ভেতরের রাজনীতি আমাদের জুটিটা ভেঙে দেয়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন ভালো থাকেন।’
এমকে/টিএ