ময়মনসিংহের ভালুকায় ২ শিশু সন্তানসহ মাকে গলাকেটে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেবর জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। এই অবস্থায় তাকে ধরতে র্যাব, ডিবিসহ পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম কাছে এই সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, নিহতের দেবর নজরুল ইসলাম এর আগের একটি হত্যা মামলার অজ্ঞাত আসামি হয়ে ২ বছর জেল খেটেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নানা তথ্য রয়েছে। তাকে ধরতে পারলে এই হত্যাকাণ্ডে মূল রহস্য স্পষ্ট হয়ে যাবে।
পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গফরগাঁও সার্কেল) মনতোষ বিশ্বাস, ভালুকা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর, জেলা ডিবির ওসি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন ঘাতক নজরুলের বড় ভাই ও নিহত ময়নার স্বামী মো. রফিকুল ইসলাম।
এদিন বিকেল ৫টায় ভালুকা মডেল থানায় বসে থাকা অবস্থায় রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল আমার সহোদর ভাই। সে এর আগে ঢাকার জয়দেবপুর থানার একটি মামলায় দুই বছর জেল খেটেছে। এরপর আমি একটি সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ করে তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে গত দুই মাস আগে আমার সঙ্গে রেখেছিলাম। বাসা ভাড়াটাও আমি দিতাম। এর আগেও সে মানুষের গাড়ি চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু সে আমার এত বড় ক্ষতি করবে কখনো ভাবতে পারিনি।
জানা যায়, রফিকুল ইসলামের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকায়। বাবা সলতু মিয়া মানসিক বিকারগ্রস্ত। মা মুন্সীগঞ্জে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরপর কেন্দুয়া তেলিগাতি এলাকার ফুফু রাসুর বাসায় বড় হয় সলতু মিয়ার দুই ছেলে রফিকুল ও নজরুল ইসলাম। সেখানে থেকে কৈশর বয়সে মানুষের বাসায় কাজ করত নজরুল। সেখান থেকে নজরুল এক সময় পালিয়ে গিয়ে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে ঢাকায় এসে মামলার আসামি হয়। এরপর গত দুই মাস আগে ছোট ভাই নজরুলকে জেল থেকে ছাড়িতে এনে ভালুকায় নিজের বাসায় রেখেছিল বড় ভাই রফিকুল ইসলাম। সেখানে সে রিকশা চালাতো।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, গত দুই মাস আগে ভালুকা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক হৃদয় হাসান হাইয়ুমের বাসায় পরিবার নিয়ে দুটি রুমে ভাড়ায় উঠেন স্থানীয় রাসেল স্পিনিং কারখানার শ্রমিক মো. রফিকুল ইসলাম। তাদের সঙ্গে থাকত গত দুই মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পাওয়া ছোট ভাই নজরুল ইসলাম।
ভাড়া বাড়ির মালিক হৃদয় হাসান হাইয়ুম বলেন, গত দুই মাস আগে ওরা আমার বাসায় ভাড়া উঠেছিল। এক রুমে ছোট ভাই নজরুল থাকত। আর আরেক রুমে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে থাকত রফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে কখনো ঝগড়া হতে দেখিনি। আজ হঠাৎ এই ঘটনা ঘটেছে।
ভালুকা মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির জানান, নিহত ময়নার স্বামী রফিকুল ইসলাম স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানসহ ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে এই ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় রাসেল স্পিনিং কারখানায় চাকরি করতো। গতরাতে সে কর্মস্থলে ছিল। তবে আজ সকাল ৯টার দিকে রফিকুল ইসলাম কর্মস্থল থেকে বাসায় গিয়ে দেখেন দরজায় তালা ঝোলানো। এ সময় ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া না পেয়ে তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখেন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান গলাকাটা অবস্থায় পড়ে আছে। এরপর পুলিশ খবর পেয়ে মৃতদেগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
নিহতরা হলেন, ময়না আক্তার (২৫) এবং তার দুই সন্তান রাইসা (৭) ও নিরব (২)।
নজরুলের রিকশার গ্যারেজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন ভোর ৬টার দিকে নজরুল গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে যায়। এ সময় সে তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল স্থানীয় একজনের কাছে বিক্রি করে চম্পট দেয়।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম বলেন, নিহতের দেবর নজরুল কথা কম বলত। লোকজনের সঙ্গে মিশত কম। এসব কারণে ভাবির সঙ্গে তার টানাপোড়েন চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি পারিবারিক কারণে ঘটেছে। কারণ এ ঘটনার পর থেকে দেবর পলাতক রয়েছে। তবে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং খুনি গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত ঘটনাটি স্পষ্ট হবে।
প্রসঙ্গত, নিহত ময়না ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের কুল্লাবর গ্রামের বাসিন্দা মৃত আফতাব উদ্দিনের মেয়ে। গত কয়েক বছর আগে কর্মসূত্রের পরিচয়ে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
এসএন