সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ : ড. কামাল

গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মোস্তফা মোহসীন মন্টু স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তার বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।

কামাল হোসেন বলেন, দেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সব আন্দোলনে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সর্বশেষ জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানেও মোস্তফা মোহসীন সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তিনি সব সময় স্বপ্ন দেখতেন, মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার। সে লক্ষ্যে তিনি সব সময় জাতীয় ঐক্যের জন্য কাজ করে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘এই ঐক্যের ভিত্তি হলো আমাদের জাতীয় চেতনা। এই চেতনা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধান ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে নিহিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের অঙ্গীকার ছিল, সাম্য, মানবিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু বিগত ৫৩ বছরে এই অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর আমরা যে পরিবর্তনের কথা বলছি, সেটার জন্য মাঠে ঐক্যের প্রয়োজন। বর্তমান যে সংকট চলছে, তা ঐক্যের মাধ্যমে নিরসন সম্ভব। তাই বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দৃঢ়প্রতিজ্ঞার মধ্য দিয়ে কেবল আমাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন অর্জন করা সম্ভব।’

প্রয়াত মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ বলে অভিহিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী অসংখ্য আন্দোলনে তারা একসঙ্গে রাজপথে লড়াই করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের বিষয়ে এই রাজনীতিবিদের কোনো আপস ছিল না। তাঁর প্রয়াণ দেশের জন্য বড় ক্ষতি। তিনি দেশপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন, তা বর্তমান রাজনীতিবিদদের ধারণ করা উচিত। তাহলে দেশ উপকৃত হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তনের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সরকারের সংস্কার আলোচনায় বিএনপি নিয়মিত প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটি মহল প্রচার করছে, বিএনপি নাকি সংস্কারকে আটকে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, বিএনপিই প্রথম সংস্কারের বাস্তবতা উপলব্ধি করেছিল।’

বর্তমান পরিস্থিতি দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সঠিক পথে না চললে আবারও সবাই বিপদের মুখে পড়বে। গণ-অভ্যুত্থানের বছর পেরোনোর আগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আবার অপেক্ষায় রয়েছি। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেটা নষ্ট করার জন্য একটি মহল মাঠে নেমেছে।’

শোকসভায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিভিন্ন মহল কিছু কিছু কাজ করছে, যেটা বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি করছে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের মধ্যে যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, এখন সেটার ছন্দপতন হয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে আমাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তবুও আমরা আশা করি, নতুনভাবে দেশ গড়তে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।’

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় শোকসভায় আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, মোস্তফা মোহসীন মন্টুর কন্যা শ্রাবণী মোস্তফা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল কাদের, বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, গণফোরামের সভাপতি ফোরাম সদস্য সুরাইয়া বেগম, এ কে এম জগলুল হায়দার, সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মুক্তি পেল ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র ট্রেলার, কবে আসছে এই ছবি? Jul 17, 2025
img
গুটখা খেতে দেখে পাপারাজ্জিকে ধমক দিলেন শিল্পা শেট্টি! Jul 17, 2025
img
জুলাই আন্দোলনে মূল ভূমিকা ছিল তারেক রহমানের: টুকু Jul 17, 2025
img
নীলফামারী থেকে ঢাকায় ফেরার পথে অবরোধের মুখে ২ উপদেষ্টা Jul 17, 2025
img
টেকসই আর্থিক কার্যক্রমে শীর্ষে ১০ ব্যাংক ও ২ আর্থিক প্রতিষ্ঠান Jul 17, 2025
img
অ্যাতলেটিকোয় যোগ দিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার থিয়াগো আলমাডা Jul 17, 2025
img
'নিজের এবং দলের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল'- সিরিজ জয়ের পর লিটন Jul 17, 2025
img
কক্সবাজারে আহত ছাত্রদল নেতা অভির পাশে বিএনপি Jul 17, 2025
img
১৬ জুলাইতেই কেন এনসিপিকে গোপালগঞ্জে যেতে হল?- প্রশ্ন মাসুদ কামালের Jul 17, 2025
img
গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধ আরেক যুবক ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি Jul 17, 2025
img
গোপালগঞ্জের ঘটনায় সিলেটে এনসিপির ব্লকেড কর্মসূচি Jul 17, 2025
img
মেহেদীর বোলিংয়ের প্রশংশা করলেন আসালাঙ্কা Jul 17, 2025
img
সড়কে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জামায়াত-বিএনপি সংঘর্ষ Jul 17, 2025
img
কলম্বোতে মেহেদীর খেলার বিষয়টি আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন লিটন Jul 17, 2025
img
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Jul 17, 2025
img
দ্রুতই আবু সাঈদ হত্যার বিচার হবে, তাঁর বাবা এ বিচার দেখে যেতে পারবেন: আইন উপদেষ্টা Jul 17, 2025
img
গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং Jul 17, 2025
img
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন রাসেল Jul 17, 2025
img
গোপালগঞ্জে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়নি: মন্ত্রণালয় Jul 17, 2025
img
চলতি বছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ, আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা Jul 17, 2025