আ.লীগের সাথে সখ্যতা মেনে নেব না : হাসনাত আবদুল্লাহ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আপনি বিএনপি করতে পারেন আমার আপত্তি নাই। জামায়াত করতে পারেন আপত্তি নাই। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা মেনে নেব না। আমরা দেখেছি গতকাল যখন ঢাকা শহর আগুনে পুড়ছে, তখন সেখানে আওয়ামী লীগ এসেছে আলু পোড়া দিয়ে খেতে।

বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শেষে পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানাতে চাই। এই কুমিল্লাতে বিএনপিকে নির্যাতন করা হয়েছে। জামায়াতকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা আপনাদেরকে উদাত্ত আহ্বান জানাবো- কুমিল্লার স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য, অবশ্যই অবশ্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, অহংকার মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। আমরা সেটা প্রমাণ পেয়েছি হাসিনাকে ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। কুমিল্লা থেকে বাহারকে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে। সূচনাকে উৎখাত করার মধ্য দিয়ে। সেই প্রেস কনফারেন্সের কথা আমরা ভুলি নাই। হাসিনা দম্ভ করে বলেছিল কুমিল্লা নামের আগে যেহেতু কু রয়েছে এই কুমিল্লা বিভাগ হবে না। আমরা হাসিনাকে উৎখাত করে আবার বলছি- বিভাগ হবে, কুমিল্লা নামেই বিভাগ হবে।

কুমিল্লা রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, রাষ্ট্রীয় কোন উন্নয়নের ছোঁয়া কুমিল্লায় লাগে নাই। কুমিল্লার মানুষ নিজেরা বিদেশে থাকে, নিজ যোগ্যতায় চাকরি পায়। নিজেদের মাথাপিছু ইনকাম বেশি। কুমিল্লার অবকাঠামো নিজ উদ্যোগে স্ব-স্ব বিনিয়োগে তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের কোনো অর্থ দিয়ে সেগুলো হয়নি। কুমিল্লায় যেসব বিনিয়োগ হয়েছে সেগুলো একটি নির্দিষ্ট দলের পকেট ভারি করার জন্য হয়েছে। আপনারা কুমিল্লার ফ্লাইওভারের কথা দেখেন। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ অপচয়ের নিদারুণ নিদর্শন। এই ফ্লাইওভার কোনো কাজে আসে না। যেমন জ্যাম ছিল ঠিক তেমনই রয়েছে। কুমিল্লাকে যেভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে- এ ক্লাসিক এক্সামপল বাংলাদেশের আর কোনো জেলার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এনসিপির এই নেতা বলেন, কুমিল্লাকে যে রাষ্ট্রীয়ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে, আমরা এর অবসান চাই। সরকারকে অবশ্যই কুমিল্লার বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করতে হবে। আমরা সব সময় উত্তরবঙ্গকে কটাক্ষ করতাম। উত্তরবঙ্গ হচ্ছে মঙ্গা এলাকা। উত্তরবঙ্গ ঘুরে আমরা যখন কুমিল্লায় প্রবেশ করলাম, আমরা দেখেছি কুমিল্লার দুই কিলোমিটার রাস্তাও ঠিক নাই। সরকার যদি সিদ্ধান্ত দেয় যে আমরা কুমিল্লাকে দেখবো না, তাহলে স্ব উদ্যোগ এই রাস্তাগুলোকে ঠিক করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকেই ভাবছি আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে। আমাদের লড়াই শেষ হয় নাই। আমাদেরকে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এখানে যারা রয়েছেন সবাইকে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, প্রিয় মা-বোনেরা- কোনোভাবে যদি আওয়ামী লীগ ফিরে আসে আপনার ৪ কোটি সন্তানকে ওরা বাঁচতে দেবে না। আওয়ামী লীগের সময় আমরা দেখেছি অর্পিতভাবে মন্দিরে কোরআন রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হয়েছে। কুমিল্লাতে আর এগুলো হতে দেওয়া হবে না। কুমিল্লার প্রত্যেকটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে বাহারকে মোকাবিলা করবে, সূচনাকে মোকাবিলা করবে।

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এই সরকারকে বলতে চাই- মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত দেখতে চাই। আমরা এখন পর্যন্ত লাশের সঠিক হিসেব পাইনি। হতাহতদের সঠিক হিসাব দিতে হবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী হোক, রাষ্ট্রপ্রধান হোক, বাহিনী প্রধান হোক, সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে কুমিল্লার ছেলেরা পার্থক্য ভুলে যায় না। সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে সুস্পষ্ট যে ব্যবধান সেটা অবশ্যই আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আপনারা জানেন আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই সর্বপ্রথম প্রতিরোধ করা হয়েছিল কুমিল্লায়। কুমিল্লায় সর্বপ্রথম আক্রমণ করা হয়েছিল। হাসিনার যত দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল কুমিল্লা। হাসিনার নির্ঘুমের কারণ ছিল কুমিল্লা। অথচ ফেরাউন পয়দা হয়েছে ঢাকায়, মুসা পয়দা হয়েছে কুমিল্লায়, হাসিনা পালিয়েছে দিল্লি।

এ সময় এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুউদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিশরের কাছে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের Jul 25, 2025
img
গাজায় লাগামহীন ইসরায়েলি হামলা, নিহত ছাড়াল ৫৯ হাজার ৫০০ Jul 25, 2025
img
দিয়াবাড়ির দুর্ঘটনায় জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছে একাদশের শিক্ষার্থী রিয়া Jul 25, 2025
img
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সামরিক দিক থেকে কারা প্রভাবশালী? Jul 25, 2025
img
১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় Jul 25, 2025
img
ইসরায়েলের হৃদয়ে আগুন : যেখানেই চেয়েছে, সেখানেই আঘাত হেনেছে ইরান Jul 25, 2025
img
বিশ্বজুড়ে স্টারলিংক সেবা বিভ্রাট Jul 25, 2025
img
‘সইয়ারা’র অহানের সঙ্গে সুহানার পুরনো ভিডিও ঘিরে নতুন জল্পনা Jul 25, 2025
img
মিরপুরের মতো উইকেট কোথাও দেখিনি : সালমান আলী Jul 25, 2025
img
ঢাকায় বৃষ্টির আভাস, কমবে গরম Jul 25, 2025
img
সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স : ম্যাক্রোঁ Jul 25, 2025
img
‘ফেলুদা’র সঙ্গে তিলোত্তমার আবেগঘন সাক্ষাৎ Jul 25, 2025
"পঞ্চপান্ডবদের বিদায়ের পর নতুন দল নিয়ে খুশি ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ" Jul 25, 2025
নিজ বাড়িতেই হয়রানি করা হচ্ছে তনুশ্রী দত্তকে Jul 25, 2025
আমার সঙ্গে খারাপ কিছু হয়েছিল, কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি: তটিনী Jul 25, 2025
img
কুয়েটের নতুন উপাচার্য বুয়েট অধ্যাপক ড. মাকসুদ হেলালী Jul 25, 2025
৮৭ বার সময় নিয়েও তদন্ত অসম্পূর্ণ! রিজার্ভ চু/রি মা/ম/লা/য় আবারও তারিখ পেছাল Jul 25, 2025
আদালতে যে মা/ম/লা/য় উঠানো হলো খায়রুলকে Jul 25, 2025
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে থাকছে না দলীয় প্রতীক, জানালেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ Jul 25, 2025
img
দেশের ৭ অঞ্চলের নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত Jul 25, 2025