এক চাঁদাবাজ খেদাই, আরেক চাঁদাবাজ হাজির হয় : হান্নান মাসউদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেছেন, ‘এক চাঁদাবাজ খেদাই, আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয়। যেই বিমান আমাদের দেশকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেই মেয়াদোত্তীর্ণ বিমান এসে আমাদের হত্যা করে।’

বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল ৫টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত শোকসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে একটি শোক র‌্যালি বের হয়।

শোক র‌্যালিতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে টাউনহল মাঠে এসে শেষ হয়।

এনিসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা ২০০ বছর ধরে লড়াই করে ব্রিটিশ খেদিয়েছে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ জীবন উপহার দেওয়ার জন্য। আমাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করেছে যাতে করে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটি নিরাপদ বাংলাদেশে বসবাস করতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৯০ সালে জীবন দিয়ে ব্রিটিশ খেদিয়েছে পরবর্তীতে মানুষ যেন নিরাপদে বাঁচতে পারে।

ব্রিটিশ খেদানোর ৭৫ বছর পরে, পাকিস্তানি হানাদার খেদানোর ৪৫ বছর পর, এরশাদ খেদানোর প্রায় ৩০ বছর পরেও আজও আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’

তিনি বলেন, ‘রাস্তায় নিরাপত্তা নেই, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি আমাদের চাপা দিয়ে চলে যায়। আমাদের হাসপাতালে নিরাপত্তা নেই, আমরা ভালো চিকিৎসা পাই না, শ্রেণিকক্ষে নিরাপত্তা নেই, বিমান এসে আমাদের ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের হত্যা করে চলে যায়। আমাদের নিরাপত্তা ঘরে নেই, সেখান থেকে ধরে নিয়ে গুম করে ফেলা হয়।

আমাদের ব্যবসায়ীরা নিরাপদে নেই, তাদেরকে চাঁদা না দিলে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা এ নিরাপত্তার জন্য বারবার লড়াই করেছি, জীবন দিয়েছি! কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারিনি।’

হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আমাদের ডাক্তাররা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ-ভ্যাকসিন দিয়ে আমাদের হত্যা করে। পুরো দেশটাই দুর্নীতিতে ভরে গেছে। যত ঘটনা ঘটে প্রতিটা ঘটনার পরে আমরা একটি শোকযাত্রা করে শোক র‌্যালি করি, এরপরে শেষ।

রানা প্লাজায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিরাপদ ছিল না, আইন অমান্য করে রানা প্লাজা তৈরি করা হয়েছিল। আমরা তাজরীন গার্মেন্টসের কথা ভুলে যায় নাই, সেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকার কারণে শত শত গার্মেন্টকর্মী নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের রাস্তায় প্রতিদিন মানুষ দুর্ঘটনায় নিহত হয়।’

স্থানীয়দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশকে নিরাপদ করে গড়ে তুলতে আমরা এই প্রজন্ম আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে যে প্রজন্ম দাঁড়িয়ে আছে এই প্রজন্ম বাংলাদেশকে ৫০ বছর ধরে জিম্মি করে রাখা একটি পরিবার থেকে মুক্ত করেছে। আগামী দিনে এ নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের প্রতিটি প্রজন্মকে লড়াই করতে হবে। এই এনসিপির নেতৃত্বে আগামীর এই বাংলাদেশে যেন আর শোকযাত্রা করতে না হয়, আমরা বারবার শোকযাত্রা করতে চাই না। আমরা নিরাপত্তা চাই, স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চাই। যেভাবে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমরা প্রতিদিন ঘর থেকে বের হই, ঘরে ফিরব কি না এই নিশ্চয়তা আমাদের নাই। গাড়ি এসে মেরে দেয়, বিমান এসে মেরে দেয়। রাস্তায় ইট-পাথর দিয়ে হত্যা করা হয়। আজ থেকে আমাদের দাবি একটাই—এই বাংলাদেশে আমার আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদিন শিশির, কুমিল্লা অঞ্চলের সমন্বয়ক নাভিদ নওরোজ শাহ, কেন্দ্রীয় সদস্য হাফসা জাহানসহ অন্য নেতারা।

এফপি/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গোপালগঞ্জে দুধ দিয়ে গোসল করে ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগ Jul 25, 2025
img
সীমান্তবর্তী এলাকায় সংঘর্ষের পর সামরিক আইন জারি থাইল্যান্ডের Jul 25, 2025
img
বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে ৩২ বিঘা পুকুরের মাছ লুটের অভিযোগ Jul 25, 2025
img
নিকুঞ্জে অটো চলাচল বন্ধের তিন মাস পূর্তি: স্বস্তি শান্তিতে এলাকাবাসী Jul 25, 2025
img
সামরিক সহযোগিতায় ভারত-ইসরায়েলের বৈঠক Jul 25, 2025
img
বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৫ জনের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন Jul 25, 2025
img
মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহানুভূতি ও শোকপ্রকাশ Jul 25, 2025
img
পাকিস্তানকে জয়ের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ, মন্তব্য দেশটির সাবেক ওপেনারের Jul 25, 2025
img
বন্ধুত্ব নয়, এবার প্রেমের খবরে জনি-অ্যাঞ্জেলিনা Jul 25, 2025
যে কাজ করলে আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসবেন | ইসলামিক টিপস Jul 25, 2025
রিল দুনিয়ায় ঝলক দেখাচ্ছেন বিদ্যা বালান Jul 25, 2025
নাটকের শুটিং নিষিদ্ধের আহ্বান শামীম সরকারের Jul 25, 2025
থাইল্যান্ড-কাম্বোডিয়া সীমান্তে দ্বিতীয় দিনেও গোলাগুলি Jul 25, 2025
img
ভোট সামনে রেখে ঐক্যে আরো দৃঢ়তা আনতে চায় ইসলামী ৪ দল Jul 25, 2025
img
‘সাতকানিয়া ঐক্যবদ্ধ বিএনপিকে কেউ হারাতে পারবে না’ Jul 25, 2025
img
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩ হাজার কোটি ডলার Jul 25, 2025
img
বিরামপুরে কলেজছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার Jul 25, 2025
img
এশিয়া কাপের ভেন্যু ও শুরুর সময় চূড়ান্ত! দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের Jul 25, 2025
img
কারাগার পরিদর্শনে কোন ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ দেবেন না ধর্ম উপদেষ্টা Jul 25, 2025
img
শেহজাদের মা যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, ছেলেকে এবার সময় দিতে পারব: শাকিব খান Jul 25, 2025