দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত গ্রেপ্তার হলেন সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতি

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হলেন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি। এবিএম খায়রুল হক—যিনি একসময় ছিলেন বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অভিভাবক, বৃহস্পতিবার সকালে ডিবির হাতে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে হত্যা এবং রায় জালিয়াতির মতো গুরুতর অভিযোগ। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তিনটি মামলার একটিতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

২০১১ সালের একটি রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেন তিনি। যদিও সংক্ষিপ্ত রায়ে দু’টি নির্বাচনের জন্য এ ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছিল, ১৬ মাস পর লিখিত রায়ে সে অংশ মুছে ফেলা হয়। অনেকেই মনে করেন, এ রায়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই দেশের রাজনীতিতে দলীয় সরকার অধীনে নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয় গভীর সংকট, যা এখনো চলছে।

এই বিতর্কিত রায়ের পরপরই খায়রুল হক পুরস্কৃত হন। দীর্ঘদিন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই পদে থাকার সময় প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ান তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে। তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে নিজের মেয়াদ বাড়িয়ে নেন—যা নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, প্লট জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নেয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি উঠেছে বহুবার। কিন্তু সব অভিযোগের পরেও তিনি ছিলেন আইনের ঊর্ধ্বে।

প্রয়াত নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, “বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতির অন্যতম স্থপতি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি—সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।” যদিও তিনি নিজেকে ‘লর্ড ড্যানিং’ ভাবতেন, বাস্তবে পদে পদে অনিয়মের স্বাক্ষর রেখেছেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর নেয়া হয় ডিবি কার্যালয়ে। এভাবেই বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রধান বিচারপতির হাতে পড়ল হাতকড়া। অবশেষে তিনি নিজেই যেন পড়লেন নিজের তৈরি ফাঁদে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্পের অব্যাহত চাপের মধ্যেই, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় এলপিজি চুক্তি করল ভারত Nov 17, 2025
img
ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করতে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : মাওলানা ইমতিয়াজ Nov 17, 2025
img
বন্ধু ছাঁটাই করার দিন আজ Nov 17, 2025
img
বেলিংহ্যামকে সতর্ক করলেন ইংল্যান্ড কোচ Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনা যাদের মায়া করে নাই, তাদের উচিত না তার জন্য মায়া দেখানো: রাশেদ খান Nov 17, 2025
img

মেহজাবীন চৌধুরী

‘ভাইরাল হওয়ার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা খুবই সহজ’ Nov 17, 2025
img
রাজস্থান রয়্যালসের হেড কোচের দায়িত্বে সাঙ্গাকারা Nov 17, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২-এর সামনে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, বুলডোজার সরানোর নির্দেশ Nov 17, 2025
img
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের আরো ২৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Nov 17, 2025
img
কুমিল্লায় জামায়াত কর্মীর গাড়িতে আগুন Nov 17, 2025
img
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বুলডোজার নিয়ে যাওয়া দলকে ‘রাজাকার’ আখ্যা অভিনেত্রী শাওনের Nov 17, 2025
img
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার Nov 17, 2025
img

বিবিসিকে চিফ প্রসিকিউটর

রায় ঘোষণায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগতে পারে, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি Nov 17, 2025
img
আইসিইউতে ভর্তি নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম Nov 17, 2025
img
আমি যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত সে কথা ভাবতেও পারিনি: মহিমা চৌধুরী Nov 17, 2025
img

রিজভী

ফ্যাসিস্ট আমলে যারা অপরাধ করেছে, তারাই বাসে আগুন দিচ্ছে Nov 17, 2025
img
বিচারকদের নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপ চায় রাজশাহী বিচার বিভাগ Nov 17, 2025
img
শাটডাউনের প্রভাব মুক্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক Nov 17, 2025
img
এবারের নির্বাচন দেশ রক্ষার নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা Nov 17, 2025
img
হাসিনার রায় ঘিরে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার : আইজিপি Nov 17, 2025