ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের ঝড়ো ইনিংসে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৭ রান, উইকেটে ছিলেন ব্রেভিস ও জর্জ লিন্ডা। তবে নাটকীয় মোড় নেয় ম্যাচ, যখন ম্যাট হেনরি শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে দুজনকেই ফিরিয়ে দেন। তার বোলিং নৈপুণ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়ে শিরোপা তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
জিম্বাবুয়েতে শনিবার ত্রিদেশীয় সিরিজের রোমাঞ্চকর ফাইনালে ৩ রানে জিতেছে কিউইরা। ১৮০ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে ১৭৭ রানে থামিয়ে দিয়েছে তারা।
ফাইনালের নায়ক নিশ্চিতভাবেই হেনরি। দল যখন হারের শঙ্কায়, তখন বল হাতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন তিনি। শেষ ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ডট দিয়ে পরের বলে ব্রেভিসকে ড্রেসিংরুমে পাঠান তিনি। বাউন্ডারিতে দারুণ ক্যাচ নেন মাইকেল ব্রেসওয়েল।
তৃতীয় বলেও উইকেট পেতে পারতেন হেনরি। কিন্তু এবার কর্বিন বশের ক্যাচ নিতে পারেননি ব্রেসওয়েল। উল্টো ২ রান পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের বলে একটি সিঙ্গেল এলে শেষ দুই বলে তাদের লাগে ৪ রান। পঞ্চম বলে ড্যারিল মিচেলের অসাধারণ ক্যাচে ফিরে যান লিন্ডা। শেষ বলটি ব্যাটেই লাগাতে পারেননি সেনুরান মুথুসামি।
৩ ওভারে ১৯ রান ওই ২ উইকেটই নেন হেনরি। ম্যাচ সেরা তো বটেই, সিরিজ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। চার ম্যাচে ১০ উইকেট নেন তিনি।
হতাশায় ম্যাচ শেষ করা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস ও রিজা হেনড্রিকসের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় তারা। দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯২ রান।
দশম ওভারে তাদের যুগলবন্দি ভাঙে প্রিটোরিয়াসের বিদায়ে। ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৫ বলে ৫১ রান করে ব্রেসওয়েলের বলে স্টাম্পড হন এই ওপেনার। কয়েক ওভার পর ফেরেন থিতু হেনড্রিকস (৪টি ছক্কায় ৩৭)।
রাসি ফন ডার ডাসেন, রুবিন হারমান পারেননি দলকে টানতে। শেষ দিকে যখন হারের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল, আশা হয়ে ওঠেন ব্রেভিস। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে ৩৭ রানের সমীকরণ মেলানোর লক্ষ্যে ছোটেন তিনি।
১৮তম ওভারে জ্যাক ফউকসকে একটি ছক্কায় ওড়ান ব্রেভিস। পরের ওভারে জ্যাকব ডাফিকে হাঁকান দুই ছক্কা। তাতে জয়ে খুব কাছে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
কিন্তু ৬ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ওভারে হেনরির সামনে ৭ রানের সমীকরণ আর মেলাতে পারেনি দলটি। ৩ ছক্কা ও ১ চারে ১৬ বলে ৩১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন ব্রেভিস।
হারারে স্পোর্টস ক্লাবে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউ জিল্যান্ডের শুরুটাও ছিল দারুণ। টিম সাইফার্ট ও ডেভন কনওয়ের উদ্বোধনী জুটিতে ৭৫ রান পায় তারা।
দুই ওপেনারের কেউই অবশ্য করতে পারেননি ফিফটি। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ৩০ রান করেন আগের দুই ম্যাচে পঞ্চাশ করা সাইফার্ট। কনওয়ে ফেরেন ১ ছক্কা ও ৬টি চারে ৩১ বলে ৪৭ রান করে।
তার সমান ৪৭ রান করেন রাচিন রাভিন্দ্রাও। তবে তিনি খেলেন ২৭ বল, মারেন ২ ছক্কা ও ৪টি চার। এরপর বাকিদের টুকটাক অবদানে লড়ার মতো পুঁজি গড়ে কিউইরা। চমৎকার বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৮০/৫ (সাইফার্ট ৩০, কনওয়ে ৪৭, রাভিন্দ্রা ৪৭, চ্যাপম্যান ৩, মিচেল ১৬*, ব্রেসওয়েল ১৫, স্যান্টনার ৩*; এনগিডি ৪-০-২৪-২, বার্গার ৪-০-৪১-১, মাফাকা ৪-০-৩৫-১, লিন্ডা ১-০-৯-০, মুথুসামি ৩-০-২৭-১, বশ ৪-০-৩৮-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৭৭/৬ (প্রিটোরিয়াস ৫১, হেনড্রিকস ৩৭, ফন ডার ডাসেন ১৮, হারমান ১১, ব্রেভিস ৩১, লিন্ডা ১০, বশ ৩*, মুথুসামি ০*; হেনরি ৩-০-১৯-২, ডাফি ৪-০-৩৬-১, ফউকস ৩-০-৩৬-১, মিল্ন ৪-০-২৭-১, স্যান্টনার ৩-০-২৯-০, ব্রেসওয়েল ৩-০-২৯-১)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ম্যাট হেনরি
ম্যান অব দা সিরিজ: ম্যাট হেনরি