বাংলাদেশে কিছুদিন আগেই চালু হয়েছে মোবাইলের ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধা। কিন্তু বিশ্বে এর মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট বা ফাইভ-জি নিয়ে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ফাইভ-জি গ্রাহক এক বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। এটি গ্রাহককে শুধু দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং চালকবিহীন গাড়ি, ড্রোন, ইন্টারনেট অব থিংসসহ নানা প্রযুক্তিও এগিয়ে যাবে এর সুবাদে। বলা হচ্ছে, ফাইভ-জি বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনবে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় ইতিমধ্যে চালু হয়েছে উচ্চগতি সম্পন্ন পঞ্চম প্রজন্মের মুঠোফোন নেটওয়ার্ক ফাইভ-জি। তবে নতুন এই নেটওয়ার্ক যত বিস্তৃত হচ্ছে, তা সম্পর্কে মানুষের মনে তত ভুল ধারণার জন্ম নিচ্ছে। এ নিয়ে মানুষের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
ফাইভ-জি কতটা নিরাপদ?
প্রচলিত একটি ধারণা হলো- ফাইভ-জি’র বেতার তরঙ্গের তেজস্ক্রিয়তা নিরাপদ নয়, এটি মানব দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। আর এই দুশ্চিন্তা একেবারেই অমূলক নয়। ২০১১ সালে প্রকাশিত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে সেলফোনের তেজস্ক্রিয়তা “মানবদেহের সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী” হিসেবে বলে উল্লেখ করেছিল।
২০১৬ সালে মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে বেতার তরঙ্গের তেজস্ক্রিয়তা ও ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক দেখিয়েছিল। যদিও ক্যান্সার ও সেলফোনের সম্পর্ক অনেক সময় অতি রঞ্জিত করা হয়।
এবিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত করে বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ অনেকে একে নিরাপদ বলেও মনে করেন। ছয় বছর গবেষণার পর এফসিসি পরিচালক অজিত পাই সেলফোনসহ যেসব ফোনে ফাইভ-জি রয়েছে সেগুলিকে নিরাপদ বলে মন্তব্য করেছেন।
ফাইভ-জি কি ফোর-জি প্রযুক্তিকে অচল করে দেবে?
ফাইভ-জি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে ফাইভ-জি ফোন প্রয়োজন পড়বে। তার মানে এই নয় যে, নতুন ফোন ছাড়া আপনি কোনো সুবিধাই পাবেন না। বরং পরবর্তী প্রজন্মের ফাইভ-জি পুরোদমে প্রচলন হয়ে গেলে যে কেউ ফোর-জি কিংবা থ্রি-জি ফোনেও দ্রুতগতির এই ইন্টারনেট সেবা পেতে পারেন।
এছাড়া ফাইভ-জি প্রযুক্তি সম্পূর্ণরূপে ফোর-জি প্রযুক্তিকে অচল করে দেবে না, যেমনটা ফোর-জি প্রচলনের পর থ্রি-জির ক্ষেত্রে হয়েছিল।
ফাইভ-জি কি আনলিমিটেড প্ল্যান কিনতে বাধ্য করবে?
খুব সম্ভবত হ্যাঁ। যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যারিজন কোম্পানির ৪টি ফাইভ-জি আনলিমিটেড প্ল্যান রয়েছে। এর মধ্যে তিনটিতে মাসে মাত্র ১০ ডলার অতিরিক্ত খরচা করেই মাসজুড়ে উচ্চগতির আনলিমিটেড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে ফোর-জি ইন্টারনেটেরও আনলিমিটেড প্ল্যান প্রচলিত আছে। যেমন, ভারতের জিও ফোনে মাত্র ১৪৯ রুপি খরচা করে সারা মাস আনলিমিটেড ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায়। সুতরাং ধারণা করা যায় যে, নতুন এই ইন্টারনেট সেবার প্ল্যানগুলি হবে আনলিমিটেড।
ফাইভ-জি কি সত্যিকার অর্থেই দূর থেকে সার্জারি এবং যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে?
২০১৯ সালে সিএনইটি এর সিনিয়র রিপোর্টার শারা তিবকেন ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দূর থেকে বিশ্বের প্রথম সরাসরি সার্জারি প্রত্যক্ষ করেছেন। এসময় একজন ডাক্তার অন্য অবস্থান থেকে সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করছিলেন। তাই, এবিষয়ে সন্দেহ নেই যে ফাইভ-জি স্বাস্থ্য সেবায় বিপ্লব আনতে চলেছে।
এছাড়াও স্বয়ংক্রিয় গাড়ী এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে ফাইভ-জি প্রযুক্তির দ্রুতগতির ইন্টারনেট অনেক বেশি সহায়ক হবে বলেই মনে করা হয়।
টাইমস/এনজে/জিএস