কাতার সরকার চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উপহার হিসেবে একটি বিলাসবহুল বোয়িং 747-8 উড়োজাহাজ দিয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও রাজনৈতিক তোলপাড়।
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এই বোয়িং বিমানটিকে যুক্তরাষ্ট্র এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, কাতার বিমানটি “বিনা শর্তে” উপহার হিসেবে দিয়েছে, এবং সবকিছুই মার্কিন আইন অনুযায়ী করা হয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনে বলা আছে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা ৪৮০ ডলারের বেশি মূল্যের উপহার বিদেশি সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এটি কি রাষ্ট্রীয় উপহার নাকি প্রভাব বিস্তারের ‘গোপন ঘুষ’?
হোয়াইট হাউস জানায়, বিমানটির বাজারমূল্য ঘোষিত মূল্যের চেয়েও কম, এবং প্রেসিডেন্টের পথ ছাড়ার পর এটি ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল লাইব্রেরিতে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, পেন্টাগনের সঙ্গে কাতারের একটি সমঝোতা অনুযায়ী, বিমানটি যেমন আছে তেমনভাবেই হস্তান্তর করা হবে। পেন্টাগন এর নিরাপত্তা যাচাই ও রূপান্তরের দায়িত্ব নেবে। নথিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই হস্তান্তর “ঘুষ, প্রভাব বিস্তার বা দুর্নীতির প্রমাণ নয়।”
বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে দুটি পুরনো বোয়িং 747-200 মডেল ব্যবহার করেন, যেগুলো ১৯৯০ সাল থেকে চালু রয়েছে। প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তাজনিত কারণে নতুন উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পও তাঁর প্রেসিডেন্সির সময় একাধিকবার নতুন ডিল নিয়ে কথা বলেছেন।
তবে এই নতুন উড়োজাহাজটিকে এয়ারফোর্স ওয়ানে পরিণত করতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হতে পারে কয়েক শো মিলিয়ন থেকে শুরু করে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আকাশপথে জ্বালানি ভরার সুবিধা, এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস থেকে সুরক্ষা।
সিবিএস নিউজকে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, এই বিপুল ব্যয়ের অর্থ ‘সেন্টিনেল’ নামক আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্প থেকে সরিয়ে আনা হতে পারে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাজেট থেকেই অর্থ কেটে এনে এই বিতর্কিত উপহারকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন।
এমকে/টিএ