এনসিপির অনুরোধে সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে ছাত্রদল কাঁটার পরিবর্তে ফুল এবং উসকানির পরিবর্তে সহাবস্থানের বার্তা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রাকিবুল বলেন, চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ২০২৫ সালের জুলাই মাস শুরুর পূর্বেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সর্বাধিক শহীদের সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী সংগঠন হিসেবে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান স্মরণ, শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন, ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণ, সব অংশীজনের অবদানের স্বীকৃতি ও ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার দীর্ঘ ধারাবাহিক লড়াইয়ের বীরোচিত বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমরা মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করি।
তিনি বলেন, এই পূর্বঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচি ছিল ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-সমাবেশ। জুন মাসেই ঘোষিত এই কর্মসূচি পালনের জন্য আমরা ২২ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত আবেদন করি। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস আমাদের ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সমাবেশের অনুমতি দেয়। তবে আমাদের কর্মসূচি ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে এনসিপিও একইদিনে একই স্থানে সমাবেশ করার কথা আমরা প্রথমে গণমাধ্যম মারফত অবগত হই। পরে নাগরিক পার্টির নেতারা ব্যক্তিগতভাবে বারবার আমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করে সমাবেশের স্থান পরিবর্তনের অনুরোধ জানান। এই বিষয়ে আমাদের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেন।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, এ ধরনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করার পর, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর কর্মসূচিটি ভিন্ন কোনো স্থানে সরিয়ে নেওয়া খুবই বিব্রতকর ও কষ্টসাধ্য কাজ। কর্মদিবসে আমাদের কর্মসূচির কারণে যেন কোনো জনভোগান্তি তৈরি না হয়, সমাবেশটি শহীদ মিনারে করতে চাওয়ার এটিও ছিল একটি অন্যতম কারণ। তাছাড়া আমরাই যেহেতু কর্মসূচিটি প্রথমে ঘোষণা করি এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিও লাভ করি, তাই ওই স্থানে সমাবেশ করার আমরাই একমাত্র বৈধ দাবিদার। তারপরও একটি উদার, গণতান্ত্রিক, সহাবস্থানে বিশ্বাসী, পরমতসহিষ্ণু, গ্রহণযোগ্য সব মত ও পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংগঠন হিসেবে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির অনুরোধকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের ছাত্র-সমাবেশের স্থানটি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের ৩ আগস্টের সমাবেশটি সেদিন শহীদ মিনারের পরিবর্তে শাহবাগে অনুষ্ঠিত হবে। একান্তই উদারনৈতিক রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে এই স্থান পরিবর্তনের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে যদি কোনো ধরনের ভোগান্তি তৈরি হয়, এই অনিচ্ছাকৃত সমস্যার জন্য আমরা নগরবাসীর কাছে অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি তারা এই দিনটির তাৎপর্য ও আমাদের স্থান পরিবর্তনের উদারতাকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন।
ছাত্রদল সভাপতি আরও বলেন, আমরা চাইলে সমাবেশটি ঘোষিত স্থানেই করতে পারতাম। কিন্তু আমরা কাঁটার পরিবর্তে ফুল দিলাম; আমরা উসকানির বিপরীতে শান্তি ও সহাবস্থানের বার্তা দিলাম। আমরা মনে করি, আমরা অকারণ উত্তেজনা ছড়ানোর বদলে উদারতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম। এই ঘটনা বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসে শান্তি, সম্প্রীতি, উদারতা ও সৌহার্দ্যের অনন্য নজীর হয়ে থাকবে। যারা সফল অভ্যুত্থানের পর অভ্যুত্থানের একক মালিক হয়ে উঠতে চাইছেন, আশা করি এই উদারতার পর তারা নিজেদের সম্বিত ফিরে পাবেন এবং সঠিক ও সুস্থ ধারায় নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। অন্য সব মত ও পথের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা পোষণ করবেন। সব বিষয়ে হঠকারিতার রাস্তা পরিত্যাগ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কেএন/এসএন