সাবেক আইজিপির জবানবন্দি 'পুলিশের প্রাধান্য ছিল গোপালগঞ্জ'

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে ব্যালট বাক্স পূরণ করে রাখার পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারির। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে সাবেক আইজিপি ও র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দিতে।


সম্প্রতি তিনি মামলায় রাজসাক্ষী হন এবং তার আগেই ২০২৫ সালের মার্চে সিএমএম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে ঘটে যাওয়া নানা অবিচার, নিপীড়ন ও অপকর্মের বিবরণ দেন।


জবানবন্দিতে চৌধুরী মামুন বলেন, ঘুম, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর নির্দেশনা আসত সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে, আর এইসব দমন অভিযানে নেতৃত্ব দিতেন সামরিক উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী। এসব অভিযানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করত রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা।

মামুন জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা ব্যারিস্টার আরমানকে র‍্যাবের ‘কেএফআই সেল’-এ আটকে রাখা হয়েছিল, যার বিষয়টি তাকে জানিয়েছিলেন তৎকালীন আইজিপি ও র‍্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। তবে নিজে র‍্যাবের ডিজি থাকার সময় এসব জানলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি বলে স্বীকার করেন।

জবানবন্দিতে আরও উঠে আসে ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের কথাও। মামুন বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই ব্যালট বাক্স পূরণের ধারণা দেন তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি। সরকারের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এতে ডিসি, ইউএনও, এসিল্যান্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করা হয়। এইসব রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে দেয়া হতো বিআরএম ও পিপিএম পদক।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের বড় অংশের কর্মকর্তা ছিলেন গোপালগঞ্জ জেলার। এরা উর্ধ্বতন কমান্ড মানতেন না এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করতেন অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

তবে এই দুই কর্মকর্তার মধ্যেও ছিল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং গ্রুপিং। তারা নিজেদের প্রভাব বলয় ধরে রাখার চেষ্টা করতেন আলাদাভাবে।

এমআর/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাশিয়ায় ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি Sep 19, 2025
img
ওয়েলালাগের বাবা আর নেই শুনে ‘সরি’ বললেন নবি Sep 19, 2025
img
ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতিকালে আ.লীগের ১১ জন গ্রেপ্তার Sep 19, 2025
img
সুপার ফোরে কবে কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ Sep 19, 2025
img
দুনিথ ওয়েলালাগের বাবা আর নেই Sep 19, 2025
img
আফগানদের হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়েই সুপার ফোরে গেল শ্রীলঙ্কা Sep 19, 2025
img
চবি ভিসি-প্রোভিসির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা উপদেষ্টার মতবিনিময় Sep 19, 2025
img
কাশিমপুর থানা আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গ্রেপ্তার Sep 18, 2025
img
জ্যান ফ্রাইলিঙ্কের রেকর্ড ফিফটিতে জিম্বাবুয়েকে হারাল নামিবিয়া Sep 18, 2025
img
ইউরোপে ‘রোহিঙ্গা সংকট’ তুলে ধরার আশ্বাস দিল প্রতিনিধি দল Sep 18, 2025
img
রাবিতে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশ ও চীন হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবে: প্রধান উপদেষ্টা Sep 18, 2025
নাহিদ ইসলামকে জেরা শেষে যা বললেন আসামি পক্ষের আইনজীবী Sep 18, 2025
img
আসিফ মাহমুদের নতুন এপিএস রাহাত Sep 18, 2025
img
মিথ্যা বলেছিলেন টিউলিপ: দ্য টাইমস Sep 18, 2025
img
প্রথম প্রেম মনে করার দিন আজ Sep 18, 2025
img
হিমাচলে বন্যার্তদের তোপের মুখে কঙ্গনা Sep 18, 2025
img
ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির বিরোধিতা করলেন ট্রাম্প Sep 18, 2025
img
নেপালকে ৪ গোলে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ Sep 18, 2025
img
নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের সাজা বাড়ছে Sep 18, 2025