কোনো দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর নেই : সেনা সদর

বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি সেনাবাহিনীর আলাদা নজর নেই। গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের জীবননাশের হুমকি থাকায় তাদের সহযোগিতা করেছে সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস ‘এ’-তে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদক ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার ৫৭৬ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছি। চাঁদাবাজ বা অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব আইনশৃঙ্খলা এজেন্সিগুলোর সর্বাগ্রে দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা যদি কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে আরও কমে আসবে বলে আশা করি। সাথে সাথে আমাদের যে আভিযানিক দায়িত্ব আছে আমরা সেটা সর্বদা পালন করছি। আমরা সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি একসঙ্গে কাজ করি তাহলে চাঁদাবাজির মতো অপরাধ কমে আসবে বলে বিশ্বাস করি। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার পর বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করার পর আমাদের আর কিছু করার থাকে না।

পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের সংঘাতকে সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে— প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীরা এইটা করে থাকে। আমাদের কার্যক্রম ও অভিযান জারি রেখেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

বান্দরবানের আর্মি ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া, কুকি চিন, আরাকান আর্মি ও বান্দরবানে অস্ত্র কেনা-বেচা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রটেকশন দিয়ে যাচ্ছে এবং ভালোভাবে দিয়ে যাচ্ছে। আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে যদি আমাদের ক্যাম্পের প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা টেম্পরারি অপারেটিং বেইস করে আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমেও খবর এসেছে সেনাবাহিনীর মেজর সাদিক আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে— এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারব।

এনসিপি যখন ঝামেলায় পড়েছে তখন সেনাবাহিনী প্রটেকশন দিয়েছে, আবার এখন শোনা যাচ্ছে সেনাবাহিনী তাদের আর প্রটেকশন দেবে না— এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে বিশেষভাবে কখনো সহায়তা করিনি। আমাদের দায়িত্বের মধ্যে কাউকে বিশেষভাবে দেখি না। গোপালগঞ্জে যেটা হয়েছে ওইখানে ওই রাজনৈতিক দলের অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল। তাদের জীবন বাঁচানোর জন্যই সেনাবাহিনী সহযোগিতা করেছে। এখানে জীবন বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিলো অন্য কিছু না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল কোথায় সমাবেশ করবে, এটা ক্লিয়ারেন্স দিতে হবে স্থানীয় প্রশাসন থেকে। আমাদের কাছে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না। গোপালগঞ্জে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ছিল। শুধুমাত্র ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়নি, ককটেলও নিক্ষেপ করা হয়েছে। যখন সেখানে জীবননাশের হুমকি ছিল তখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বল প্রয়োগ করে। এখানে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়নি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী গুলি করেছে— এই বিষয়ে অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে কী হয়েছিল সেটার সত্যতা উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি এই কমিটি সত্য এবং সঠিক ঘটনা উন্মোচন করতে পারবে।

বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি কি সেনাবাহিনীর দুর্বলতা আছে— এমন প্রশ্নের জবাবের কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশেষ কোনো দলের প্রতি আলাদা নজর নেই। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর কাছে সবাই সমান। যেখানে জনদুর্ভোগ ও জীবননাশের হুমকি থাকে, সেখানে আমরা কঠোর হই বা জনসাধারণকে সহযোগিতা করি। গোপালগঞ্জে যদি আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করতাম তাহলে সেখানে অনেক হতাহত বা জীবননাশের ঘটনা ঘটতে পারত।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জন্মদিনে ‘দাবাং’ স্টাইলে কেক কাটলেন সালমান খান Dec 27, 2025
img
চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা বদল নিয়ে ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া কী? Dec 27, 2025
img
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
ইসিতে গিয়ে আজ ভোটার হবেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
ফরিদপুরে ট্রাক-অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে ভাই-বোনসহ নিহত ৩ Dec 27, 2025
img
মহেশপুরে প্রাইভেট কার দুর্ঘটনায় আহত ৩, নিহত ১ Dec 27, 2025
img
নারী ফুটবল লিগে দলবদলের সময় বৃদ্ধি পেয়েছে একদিন Dec 27, 2025
img
ভিয়েতনামে বাস উল্টে প্রাণ গেল ৭ জনের Dec 27, 2025
img
হাদির কবর জিয়ারত করতে রওনা হলেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা : ১৪ হাজার পদে বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী করবেন ১০ লাখ প্রার্থী Dec 27, 2025
img
কিশোরগঞ্জে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতদের মিছিলে অংশ নিয়ে প্রাণ গেল কর্মীর Dec 27, 2025
img
'দ্য কিউরের' গিটারিস্ট পেরি ব্যামন্ট আর নেই Dec 27, 2025
img
১০ ব্যান্ডের নতুন গান নিয়ে ব্যান্ড উৎসব Dec 27, 2025
img
ভারতীয় ক্রিকেটারদের সমালোচনায় সরব পাক অভিনেতা কুমৈল Dec 27, 2025
img
সালমান খানের জন্মদিন আজ, ৬০ বছর বয়সে কত সম্পত্তির মালিক হলেন তিনি? Dec 27, 2025
img
অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলো কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড Dec 27, 2025
img
কুড়িগ্রামে বিয়ের গেটে উঠল ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবী Dec 27, 2025
img
সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজে আগুন, ১ জনের প্রানহানি Dec 27, 2025
img
বছর শেষে আলোচনায় ঢালিউডের এই ৫ সিনেমা Dec 27, 2025
img
৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শ্বশুরের জানাজায় আ. লীগ নেত্রী নিতু Dec 27, 2025