চন্দ্রাভিযান সম্পর্কে অজানা তথ্য

মানুষ চাঁদে পা রেখেছে সেই ১৯৬৯ সালে। এর ৭ বছর আগে ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি চাঁদে মানুষ পাঠাবার কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন ছিল শীতল যুদ্ধের সময়, সেকারণে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সব রকম প্রতিযোগিতায় নিজেকে যোগ্য প্রমাণে মরিয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

চাঁদে মানুষ পাঠানো শুধু কেনেডির স্বপ্নের ফলেই সম্ভব হয়নি, এর পেছনে বহু লোকের শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্র-বিজয়ের অজানা বা কম আলোচিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।

চাঁদের মাটি দুর্গন্ধযুক্ত
নাসার যে দলটি অ্যাপোলো-১১’র চন্দ্রাবতরণের দায়িত্বে ছিল তাদের কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন ছিল- চাঁদের মাটি কেমন হবে? যানটি কি শক্ত মাটিতে নামতে যাচ্ছে, নাকি ডুবে যাবে তরল কিছুতে? দেখা গেল, চাঁদের তল কঠিন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- চাঁদের মাটির এক ধরণের গন্ধ রয়েছে।

চাঁদের মাটি অত্যন্ত আঠালো হওয়ায় তা ঝেড়ে ফেলা কঠিন। তাই নীল আর্মস্ট্রং ও অল্ড্রিন যখন লুনার মডিউলে ফিরে এসেছিল তখন তাদের পোষাকে লেগে থাকা চাঁদের মাটি কেবিনে ঢুকে যায়। ফলে নভোচারীরা কেবিনে অনুভব করা একধরণের দুর্গন্ধের কথা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যা অনেকটা পোড়া ছাইয়ের মতো।

তবে বিজ্ঞানীরা কখনো এই ঘটনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পাননি। চাঁদ থেকে নিয়ে আসা যে মাটি ও পাথর ল্যাবে পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হয়েছিল সেগুলোতে কোন গন্ধ ছিল না। এবিষয়ে ওয়ান জায়েন্ট লিপ’এর লেখক চার্লস ফিসম্যানের বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, “চাঁদের গন্ধ চাঁদেই থাকে।”

সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দেয়াই ছিল কেনেডির মূল লক্ষ্য
জনসাধারণের সম্মুখে চন্দ্র বিজয়ের কারণ হিসেবে কেনেডি বারবার জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের কথাই বলেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি ভিডিও থেকে জানা যায়, মহাশূন্য বিজয়ের থেকেও সোভিয়েত ইউনিয়নকে টেক্কা দেয়াই কেনেডির আগ্রহ ছিল বেশি।

ফাঁস হয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ১৯৬২ খৃষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদ ও নাসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মিটিংয়ে মি. কেনেডি মন্তব্য করেন, “আমি মহাকাশ সম্পর্কে অতটাও আগ্রহী নই”। কিন্তু তিনি শীতল যুদ্ধে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। তার শপথ গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাশূন্যে মানুষ পাঠিয়েছিল।

তখন মি. কেনেডি তার ভাইস প্রেসিডেন্টকে ডেকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, কীভাবে আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে? আর চাঁদের মাটিতে অবতরণের মধ্য দিয়ে আমেরিকা সত্যিকার অর্থেই সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন তার চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্মকর্তারাও পরিকল্পনা করছিলেন চাঁদে মানুষ পাঠানোর। কিন্তু সোভিয়েত কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনা লোকচক্ষুর সামনে আনতে চায় নি। তারাও অতি গোপনীয়তা বজায় রেখে সবার আগে এই সফলতার মুকুট পরতে চেয়েছিল। কিন্তু আমেরিকা তাদের বঞ্চিত করে।

সোভিয়েত পত্রিকা কোমসোমলকায়া পবদা’র ইয়ারোস্লাভ গোলোভানভ সাংবাদিক এ বিষয়ে বলেন, “মানুষ যাতে আমাদের থেকে খুব বেশি আশা না করে সে জন্য গোপনীয়তার প্রয়োজন ছিল।”

চাঁদের জীবাণু পৃথিবীকে আক্রান্ত করতে পারে ভেবে ভীত ছিলেন বিজ্ঞানীরা
যদিও নিজের জীবন বিপন্ন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে বহু ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছিলেন আর্মস্ট্রং, অল্ড্রিন ও কোলিনস, তবুও পৃথিবীতে ফেরার পর তাদেরকে সন্দেহজনক চোখে দেখা হয়েছিল। আর বিজ্ঞানীরা এই ভেবে ভয় পাচ্ছিলেন যে, নভোচারীদের মাধ্যমে চাঁদ হতে কোনো ভয়ানক জীবাণুর প্রবেশ ঘটতে পারে পৃথিবীতে।

তাদের সঙ্গে মহাশূন্যে সৃষ্ট নতুন জীবনঘাতি কোনো প্ল্যাগ পৃথিবীতে ঢুকেছে কিনা, তা নিয়েও নাসার বিজ্ঞানীরা ছিলেন সন্দিহান। তাই এই তিন নভোচারীকে ২৪ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত মহাকাশ কেন্দ্রের বিশেষ সুরক্ষিত কক্ষে কাটাতে হয়েছিল। সেখানে তাদের উপর বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়।

মিশন ব্যর্থতার জন্য আলাদা বক্তৃতা প্রস্তুত ছিল নিক্সনের
যেহেতু এর আগে কখনো চাঁদের মাটিতে মানুষের পা পড়েনি, তাই এই মিশনের সফলতা সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত ছিলেন না। এমনকি এটাও নিশ্চিত করে বলার উপায় ছিল না যে, চাঁদ থেকে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে টেক অফ করা সম্ভব হবে। সুতরাং সব সম্ভাবনা মাথায় রেখে,
অ্যাপোলো-১১’র চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হলে জাতীর উদ্দেশ্যে কি বলতে হবে তা আগে থেকেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিক্সন। সূত্র হিস্ট্রিডটকম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইতিহাস গড়লেন দীপিকা, নাম উঠল হলিউড ওয়াক অফ ফেমে Jul 03, 2025
img
রুক্মিণীর হাত ধরে মুম্বাইয়ে নতুন ঠিকানা খুঁজছেন দেব Jul 03, 2025
img
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে বললেন ট্রাম্প Jul 03, 2025
img
ইউরোপজুড়ে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, তুরস্কে ভয়াবহ দাবানল Jul 03, 2025
img
কফি খাচ্ছিলাম, চিল করছিলাম, মুহূর্তেই দেখি পাঁচ উইকেট নেই : তাসকিন Jul 03, 2025
img
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি Jul 03, 2025
img
১০ জুলাই থেকে টিভিতে দেখা যাবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট সিজন ৫’ Jul 03, 2025
img
চাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার Jul 03, 2025
img
ইরানে আশুরা উদযাপন করা হয় যেভাবে Jul 03, 2025
img
ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ ঘিরে রিপাবলিকান দলে বিভাজন Jul 03, 2025
img
এক বছরেই মানুষ বিরক্ত, অনেকের মুখোশ খুলে গেছে : গোলাম মাওলা রনি Jul 03, 2025
img
বান্দরবানে সেনা অভিযানে দুই কেএনএ সদস্য নিহত Jul 03, 2025
img
৬ রানে ৭ উইকেট পতনের ব্যাখ্যা দিলেন মিরাজ Jul 03, 2025
img
এশিয়ান কাপে মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ায় শিষ্যদের প্রশংসায় বাটলার Jul 03, 2025
img
থাইল্যান্ডে ১ দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া Jul 03, 2025
img
সাবেক এমপি ও ক্রিকেটার দুর্জয় গ্রেফতার হলেন যে মামলায় Jul 03, 2025
img
ঢাকায় বৃষ্টির পর বায়ুমানের উন্নতি, দূষণের শীর্ষে কিনশাসা Jul 03, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অর্ধশতাধিক আরোহী নিয়ে ফেরিডুবি, নিখোঁজ ৪৩ জন Jul 03, 2025
img
উঠে গেল নিষেধাজ্ঞা, ভারতে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানি তারকাদের Jul 03, 2025
img
হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে: নাহিদ ইসলাম Jul 03, 2025