রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে কেন আবার সেই বিএনপি, আবার সেই আওয়ামী লীগ, আবার সেই তারেক রহমান, আবার সেই শেখ হাসিনার কথা আসছে।’
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিবের এক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘আজকের শিরোনামটি খুব অদ্ভুত বিষয়। এ রকম একটা শিরোনাম করতে হবে, এটি ঠিক এক মাস আগেও আমি কল্পনা করিনি।
অথচ ঠিক চার-পাঁচ মাস থেকেই সমাজের সাধারণ মানুষ কিংবা যারা ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার বা গণমাধ্যমে কথা বলেন, এ রকম অনেকেই টিটকারি করে ঠাট্টা করে মশকরা করে বলে ফেলেছিলেন দেখবেন, শেখ হাসিনা তারেক রহমান সাহেবের আগে বাংলাদেশে চলে আসবেন। এ কথা শুনে খুব সিরিয়াসলি বিএনপির লোকজন বলেছিল, কী সমস্ত কথা বলেন, সবাই তো বলার চেষ্টা করেছিলাম, আগস্ট মাসের ৫ তারিখে বাংলাদেশে আসবেন এবং জুলাই-আগস্ট যে সনদ ঘোষণ করা হবে ওই মঞ্চে তারেক রহমান উপস্থিত থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কথাবার্তা কিন্তু এই গত তিন-চার মাস ধরে বলাবলি হচ্ছিল। আমি আসলে কখনো রাগ করিনি গা করিনি।
কিন্তু এখন এই বাস্তবতাটা এত নির্মম হয়ে পড়েছে, এটা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এখন এই প্রশ্নটা খুব সিরিয়াসলি ভাবতে হবে, আগামীর রাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশে কে আগে আসবেন? শেখ হাসিনা আগে আসবেন, নাকি তারেক রহমান সাহেব আগে আসবেন?’
তিনি আরো বলেন, ‘এ রকম একটা অবস্থা কেন তৈরি হলো বা আমার এ রকম কেন মনে হলো? কেন এখানে জামায়াতের কথা আসছে না? কেন এখানে এনসিপির কথা আসছে না? নাহিদ-আসিফদের কথা আসছে না? ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা আসছে না? আগামীর বাংলাদেশে কেন আবার সেই বিএনপি আবার সেই আওয়ামী লীগ, আবার সেই তারেক রহমান, আবার সেই শেখ হাসিনার কথা আসছে।’
রনি বলেন, ‘রাজনীতিতে আসলে কোনো প্রফেসির কোনো স্থান নেই। ওয়ান পারসেন্টও এখানে কোনো প্রফেসি নেই।
আমরা যে বলি, অলৌকিকভাবে এখানে হয়, অমুক ঘরে রাজার জন্ম নেয়, শেষে সে আঁতুরঘরে বেড়ে ওঠে, গোয়ালে বেড়ে ওঠে। তারপর রাজ সিংহাসনের টানে আস্তে আস্তে চলে আসে। এগুলো গল্প বানানো হয় রাজাকে মহিমান্বিত করার জন্য। অথবা পরবর্তী প্রজন্মকে রাজনীতির ব্যাপারে বিমুখ করে পরিবারতন্ত্রকে এবং বংশতন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য এ ধরনের গল্প তৈরি হয়। আসলে রাজার ছেলেকে রাজা হতে হবে।
এ রকম একটা প্রফেসি গল্পতে থাকে। এ রকম অলৌকিক ঘটনা আসলে রাজনীতিতে ঘটে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করতে পারেন, এই রাজনীতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এলেন কী করে? তিনি তো অলৌকিকভাবে এসেছেন। তার তো কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল না, ইচ্ছা ছিল না। কোনো কিছু ছিল না। তিনি এলেন কী করে? এখন এটার জবাব কিন্তু ড. মোহাম্মদ ইউনূস নিজেই দিয়েছেন যে এটা ম্যাটিকুলাসলি হয়েছে, ওয়েল ডিজাইন। তিনি নিঃসন্দেহ ম্যাটিকুলাসের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনীতিতে আসলে বিজ্ঞান ও অঙ্কের বাইরে কোনো কিছু হয় না। এখন যা কিছু ঘটছে, এই সময়ের যে সফলতা, এই সময়ের যে ব্যর্থতা, এই সময়ে মানুষের যে ক্ষোভ হতাশ এবং মানুষের আহাজারি, সব কিছুকে আপনাকে একত্র করতে হবে। যোগ দিতে হবে। বিয়োগ দিতে হবে। বিয়োগ দিয়ে সমান সমান আপনি বলতে পারবেন, সরকার সফল কি ব্যর্থ। যদি দেখেন, সফল তাহলে বিএনপি-আওয়ামী লীগের নাম থাকবে না। আর যদি দেখেন ব্যর্থ, তাহলে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ চলে আসবে।’
এখন বাস্তবতা চিন্তা করুন যে ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে, জামায়াতের আমিরকে নিয়ে, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে, শিবিরকে নিয়ে, এনসিপিকে নিয়ে, এনসিপির নেতাদের নিয়ে সাধারণ আমজনতা যেসব কথাবার্তা বলছে, এটা আজ থেকে ছয় মাস আগে আমরা কল্পনাই করতে পারতাম না।
গত এক মাস ধরে সেই এনসিপির নেতাদের সঙ্গে শিবিরের নেতাদের যে বাগবিতণ্ডা চলছে, এখানে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যে বাগবিতণ্ডা চলছে, এটা আমরা এক মাস আগে কল্পনা করতে পারতাম না।
এমআর