চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন সামরিক সংঘাত চলছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিল বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘাত থামাতে সাহায্য করেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ‘ইডব্লিউটিএন’-এর দ্য ওয়ার্ল্ড ওভার অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কো রুবিও বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান যখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন আমরা সরাসরি হস্তক্ষেপ করি এবং প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) এই শান্তি নিশ্চিত করতে সক্ষম হন।”
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প শান্তির পক্ষে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিজেকে “শান্তির প্রেসিডেন্ট” হিসেবে তুলে ধরতে চান।
এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও আরও কিছু সংঘাতের কথা তুলে ধরেন, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন শান্তি আনার কথা জানিয়েছে। যেমন— কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, আজারবাইজান-আর্মেনিয়া এবং ডিআর কঙ্গো-রুয়ান্ডা। এর মধ্যে ডিআর কঙ্গো-রুয়ান্ডার মধ্যে ৩০ বছরের সংঘাতে ৭০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে আগ্রহী, বিশেষ করে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের ক্ষেত্রে।
এর আগে গত ১০ মে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাতভর দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি “সম্পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে” সম্মত হয়েছে। যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সেটিই ছিল প্রথম ঘোষণা। এর কয়েক ঘণ্টা পর সত্যি সত্যিই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
এর পর থেকে ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানকে বোঝানোর মাধ্যমে সংঘাত ও উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রেখেছেন এবং দুই দেশ যুদ্ধ না করলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য করবে— এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
কিন্তু ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। নয়াদিল্লির দাবি, দুই দেশের সেনাবাহিনীর আলোচনা থেকেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কোনও মধ্যস্থতার কারণে নয়।
গত মাসে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লোকসভায় বলেন, “এটি সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন যে কোনও চাপের কারণে ভারত সামরিক অভিযান বন্ধ করেছে”। তিনি দাবি করেন, সংঘাত শুরুর আগে ও চলাকালে যেসব রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, সেগুলো পূরণ হওয়ার পরেই ভারত নিজ উদ্যোগেই অভিযান বন্ধ করে।
তিনি আরও দাবি করেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও (ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন্স) ভারতকে যুদ্ধবিরতির জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, ভারত ট্রাম্পকে যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিতে দেয়নি বলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার অজুহাতে ভারতের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক কুগেলম্যান ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেন, “চীন ট্রাম্পকে এভাবে রুখে দেয়নি। চীনের কোনও শীর্ষ নেতা তাকে ফোন করে কী ঠিক আর কী ভুল, সেই নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু এসবই ঘটেছে ভারতের ক্ষেত্রে।”
নয়াদিল্লির বক্তব্য, তারা দেশের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপকে “অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এসএন