নির্বাচন পর্যন্ত টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ : ইকবাল হোসেন চৌধুরী

ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও জেসিএক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী (জুয়েল) বলেন, কয়েক বছর ধরেই দেশের আবাসন খাত ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারি থেকে এ পতনের শুরু। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা- সব মিলিয়ে খাতটি এক গভীর সংকটে পড়ে। যদিও বর্তমান সরকারের সাহসী কিছু পদক্ষেপ যেমন- রেমিট্যান্সে উর্ধ্বগতি, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধে সফলতা অর্থনীতিকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

আমরা আশা করি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে, তাদের নেতৃত্বে অর্থনীতি আরও গতি পাবে এবং আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে। তবে বর্তমানে খাতটির অবস্থা এতটাই নাজুক যে, নির্বাচন পর্যন্ত টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক মন্দায় গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে রড, সিমেন্ট, টাইলস, রংসহ সব নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে।
ফলে নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে। দেশের আবাসন বাজার মূলত মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর নির্ভরশীল। তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বিক্রির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমেছে।
তিনি বলেন, শুধু আবাসন নয়, সার্বিকভাবে ব্যবসায় খাতেই স্থবিরতা বিরাজ করছে।

অনেক ব্যবসায়ী কার্যক্রম সংকুচিত করতে বা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রিও আশানুরূপ হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের দুরবস্থার কারণে আবাসন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে। ঋণ প্রদানের হার কমে গেছে, আর সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে, ঋণ বিতরণে সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আবাসন খাতে ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যক্তিগত ও করপোরেট পর্যায়ে ট্যাক্সের বোঝা কমানো হয়নি বরং কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। অপ্রদর্শিত অর্থ শর্তহীনভাবে আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় এ খাতের সংকট গভীর হয়েছে। কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্থবিরতার কারণে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, আবাসন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। সরকারের নীতিমালার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিদেশি বিনিয়োগ এলে গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য রক্ষা সহজ হতো। এজন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি।

লুক্সেমবার্গ বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মডেল বিবেচনা করা যেতে পারে। নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহর গঠনে আবাসন খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু উচ্চ ব্যয় ও অনিয়মের কারণে সঠিক বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না, ফলে নিরাপত্তা ও বসবাসযোগ্যতা হুমকির মুখে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং সৎ ও মানসম্মত ডেভেলপারদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ড্যাপ বাস্তবায়নে ধীরগতি আবাসন খাতের আরেক বড় অন্তরায়। প্ল্যান অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা নির্মাণ ব্যয় বাড়ায়। দ্রুত ড্যাপ বাস্তবায়ন করে খাতে গতি ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। শ্রমিক সংকট মোকাবিলা, ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, নতুন নকশা উদ্ভাবন ও তথ্য বিশ্লেষণে এআই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নগদ অর্থের সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আবাসন খাত পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। তাই সরকারের এখনই বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। কারণ দেশের জিডিপিতে এ খাত বড় অবদান রাখতে পারে।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৬৩৬ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের খনির সন্ধান পাকিস্তানে Nov 05, 2025
img
সুনীল ছেত্রীকে ছাড়াই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে আসছে ভারত Nov 05, 2025
img
রোনালদো ও মেসির সমান হওয়া কঠিন, স্বীকারোক্তি হলান্ডের Nov 05, 2025
img
বিএনপির মিছিলে আওয়ামী লীগ নেতার স্লোগান! ভিডিও ভাইরাল Nov 05, 2025
img
বাংলাদেশের দিকে শোষণের দৃষ্টিতে কেউ তাকাতে পারবে না: সারজিস আলম Nov 05, 2025
img
আরপিও সংশোধনী বিএনপির জাতীয় সরকার গঠনে বাধা হবে : মাসুদ কামাল Nov 05, 2025
সব আলোচনাই ব্যর্থ, আন্তর্জাতিক সালিশে আদানির মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ Nov 05, 2025
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের টিপিং পয়েন্টে পৃথিবী, সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা Nov 05, 2025
''প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছর পুরো কাঠামোই বদলে দেবে'' -সাকি Nov 05, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

লুইসের জোড়া গোল, পিএসজিকে ২-১ গোলে হারিয়ে শীর্ষে বায়ার্ন মিউনিখ Nov 05, 2025
শেখ মুজিবুর রহমান ও খালেদা জিয়া'র শাসনামল নিয়ে যে সমালোচনা করলেন নাসীরুদ্দীন Nov 05, 2025
কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করল বিএনপি Nov 05, 2025
যে পদ্ধতি জানা থাকলে মৃত্যুপথযাত্রীকেও বাঁচানো সম্ভব! Nov 05, 2025
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাবিহীন ফিফপ্রোতে পিএসজি আধিপত্যের ছাপ Nov 05, 2025
পরিপাটি, ফর্সা, গোঁফ-দাড়ি কামানো পুরুষ আমার একেবারেই পছন্দ নয় : মালাইকা Nov 05, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

মিকেল মেরিনোর জোড়া গোলে সহজ জয় আর্সেনালের Nov 05, 2025
img

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

অ্যানফিল্ডে রিয়াল মাদ্রিদকে ১-০ গোলে উড়িয়ে দিল লিভারপুল Nov 05, 2025
img
মার্চ পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন নেইমার জুনিয়র, আভাস দিলেন ব্রাজিল কোচ Nov 05, 2025
img
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২ উইকেটে হারাল পাকিস্তান Nov 05, 2025
img
আমজনতার দলের নিবন্ধন না পাওয়া নিয়ে স্ট্যাটাস রাশেদের Nov 05, 2025