গত ৫০ বছরে বিচার বিভাগ কখনোই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী অঙ্গ হয়ে ওঠেনি : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ কখনোই রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গে ওপর (নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা) আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়নি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মানে ‘বিচার বিভাগীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা নয়। বরং রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সমতা নিশ্চিত করা।’

প্রয়াত সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

রবিবার (১০ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ জে মোহাম্মদ আলী অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘৫০ বছর ধরে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের সাথে সমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠার চাওয়াকে সমতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত।

তিনি বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বিচার বিভাগ কখনোই রাষ্ট্রের প্রভাবশালী অঙ্গ হয়ে ওঠেনি। যদিও এই পুরো সময়টায় বিচার বিভাগ একটি কার্যকর অঙ্গ হিসেবে কাজ করে গেছে। রাষ্ট্রের একমাত্র কর্মক্ষম অঙ্গ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।’

বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার অধিকারকে বিচার বিভাগীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখাটা একেবারেই ঠিক না।
এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা, বিচার বিভাগ এমন কিছু চায় না। এমন ধরণা সম্পূর্ণ অমূলক।’

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা কোনো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যবাবে শক্তিশালী, দৃশ্যমান, জবাবদিহিমূলক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা।’

প্রধান বিচারপতি ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক সংস্কার আইনের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এই আইনটি সে দেশের ক্ষমতা বিভাজনের ভারসাম্যকে অক্ষুণ্ন রেখেছিল।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে সমন্বয়ের পথও খোলা রেখেছিল। এই আইনের ফলে প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সংযোগ আরো দৃঢ় হয়েছিল। স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রেখে বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।’

এ জে মোহাম্মদ আলীকে স্মরণ করে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করতেন অবকাঠামোগত ভিত্তি ছাড়া স্বাধীনতা একটি অলীক কল্পনা। তিনি মনে করতেন কোনো জাতি উন্নতি ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত এবং প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হয়।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। স্মরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি মো. শরিফউদ্দিন চাকলাদার। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

টিএ/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
স্বামী নয় প্রভু, স্ত্রী হতে পারে শ্রেষ্ঠ বন্ধু: স্বতন্ত্র চিরসখা Nov 07, 2025
"ঘি আমাদের লাগবেই" জামায়াত নেতা তাহেরের বক্তব্যে রিজভী যা বললেন | Nov 07, 2025
বিএনপি রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ নেবে: বিএনপি মহাসচিব Nov 07, 2025
‘নো হ্যাংকি প্যাংকি’, বিএনপিকে জামায়াতের হুঁশিয়ারি Nov 07, 2025
যে কারণে তিস্তা ব্যারেজ ও নিজ গ্রামের ইতিহাস টানলেন রিজভী Nov 07, 2025
চরফ্যাশনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন নুরুল ইসলাম নয়ন Nov 07, 2025
''মাদকমুক্ত এলাকা গড়ে তুলব'' Nov 07, 2025
ডর-এ রাভিনার না হওয়া চরিত্রের অজানা গল্প Nov 07, 2025
img
ডি ককের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে সমতায় ফিরলো দক্ষিণ আফ্রিকা Nov 07, 2025
img
রাজনীতিতে ইশরাককে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব: নুসরাত খান Nov 07, 2025
img
নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে: দুলু Nov 07, 2025
img
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক সম্পন্ন Nov 07, 2025
img
২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যুর সংক্ষিপ্ত তালিকা চূড়ান্ত Nov 07, 2025
img
দিল্লি নয়, ঢাকা থেকেই করা যাবে বেলজিয়ামের ভিসা আবেদন Nov 07, 2025
img
জাহানারার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করছে বিসিবি Nov 07, 2025
img
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আর নেই Nov 07, 2025
img
ধাক্কা খাওয়া ভয়ের নয়, অভিজ্ঞতা: শুভশ্রী গাঙ্গুলী Nov 07, 2025
img
নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা Nov 07, 2025
img
মির্জা ফখরুলকে জামায়াতের নায়েবে আমীরের কল Nov 07, 2025
img

ঐকমত্য কমিশনের ব্যয় নিয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ

ঐকমত্য কমিশনের মোট ব্যয় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা, আপ্যায়ন খাতে ৪৫ লাখ Nov 07, 2025