জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ৮ দফা অঙ্গীকারনামা

৮৪ দফা সম্বলিত জাতীয় (জুলাই) সনদ-২০২৫ এবং তার বাস্তবায়নে ৮ অঙ্গীকারনামাসহ সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐক্যমত কমিশন। এই খসড়ার ভাষায় কোনো শব্দ, বাক্য গঠন বা কোনও বিষয়ে মন্তব্য থাকলে আগামী ২০ আগস্ট বিকেল ৪টার মধ্যে কমিশনের কার্যালয়ে জমা দেওয়া অনুরোধ করা হয়েছে।

শনিবার (১৬ আগস্ট) এই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

অঙ্গীকারনামায় বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশের সাংবিধানিক কনভেনশনের অংশ হিসাবে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কার্যত কোনো সংবিধান না থাকা সত্ত্বেও ওই সময়ের সব কার্যাবলি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সন্নিবেশিত করে এর আইনি ও সাংবিধানিক বৈধতা প্রদান করা হয়।

একইভাবে যেহেতু ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণঅভ্যুত্থানোত্তর সময়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করে উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ, অতঃপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণ এবং পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়া সংক্রান্ত কোনো আইনি কাঠামো না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহের রূপরেখা ও অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ওই ধরনের কার্যাবলিকে বৈধতা দিয়ে পরবর্তী সংসদ গণ-অভ্যুত্থানে প্রদত্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে সাংবিধানিক কনভেনশন এবং গণতন্ত্রকে সংহত করে;

সুতরাং উল্লেখিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সাংবিধানিক কনভেনশন বজায় রেখে ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে-

১) জনগণের অধিকার ফিরে পাওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবন ও রক্তদান এবং অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত সুযোগ এবং তৎপ্রেক্ষিতে জন-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন হিসেবে দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দলিল হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করব।

২) এই রাষ্ট্রের মালিক জনগণ; তাদের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের অভিপ্রায় প্রতিফলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে, এমতাবস্থায় আমরা রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহ সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট ও সর্বোচ্চ অভিব্যক্তি হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ প্রণয়ন করেছি বিধায় এই সনদের সকল বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানে অন্তর্ভুক্তকরণ নিশ্চিত করব এবং বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সেই ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

৩) এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

৪) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ ’-এর প্রতিটি বিধান, প্রস্তাব ও সুপারিশ সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ হিসেবে গণ্য হবে বিধায় এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, কিংবা জারির কর্তৃত্ব সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

৫) ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ ’-এ বাংলাদেশের সামগ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার বিষয়ে যেসব প্রস্তাব/সুপারিশ লিপিবদ্ধ রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধন করব।

৬) আমরা ঐকমত্যে স্থির হয়েছি যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম এবং বিশেষত; ২০২৪ সালের অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

৭) আমরা সম্মিলিতভাবে ঘোষণা করছি যে, রাষ্ট্র ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও শহীদ পরিবারসমূহকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

৮) আমরা এই মর্মে একমত যে, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর যে সকল প্রস্তাব/সুপারিশ অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য বলে বিবেচিত হবে সেগুলো কোনো প্রকার কালক্ষেপণ না করেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে।

এমকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিলেটে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ Nov 28, 2025
img
জনসেবা যাদের পেশা-নেশা, তাদের হাতেই জামায়াতের পতাকা: ডা. শফিকুর Nov 28, 2025
img

গবেষণা

পেশি যত বেশি, মস্তিষ্ক তত তরুণ Nov 28, 2025
img
প্রতিহিংসার রাজনীতির কবর রচনা হয়েছে, ফ্যাসিবাদীরা হারিয়ে যাবে : ডা. খালিদুজ্জামান Nov 28, 2025
img
ভর্তিযুদ্ধ শব্দটি সমীচীন নয়: ঢাবি উপাচার্য Nov 28, 2025
img
লাস ভেগাসে ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ বিয়ে করলেন তনুশ্রী Nov 28, 2025
img
বাংলাদেশে পাটভিত্তিক উৎপাদনে বড় বিনিয়োগে আগ্রহী চীন Nov 28, 2025
img
‘কিস কিসকো প্যায়ার কারু টু’-তে কপিলের ৩ বিয়ে Nov 28, 2025
img
জানা গেলো পপির সঙ্গে ভগ্নিপতির ঝামেলা কারণ Nov 28, 2025
img
নতুন পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে সিলেটের ট্রাফিক পুলিশ Nov 28, 2025
img
‘তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো’ থেকে স্থায়ীভাবে অভিবাসন বন্ধ করছে যুক্তরাষ্ট্র! Nov 28, 2025
img
ছুটির দিনে আজও ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ Nov 28, 2025
img
ব্রিসবেনেও নেই কামিন্স, স্কোয়াড অপরিবর্তিত অস্ট্রেলিয়ার Nov 28, 2025
img
হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করছে ভারত: শফিকুল আলম Nov 28, 2025
img
পরীক্ষা চলাকালে হলে ঢুকে ছাত্রদল নেতার কলম ও চকলেট বিতরণ Nov 28, 2025
img
আয়ারল্যান্ডের জয়ের পেছনের কৌশল জানালেন টাকার Nov 28, 2025
img
ইমরান খানের মৃত্যুর গুঞ্জন, যা জানাল পাকিস্তান সরকার ও পিটিআই Nov 28, 2025
img
অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সরকার ব্যবসায়ীদের চিৎকার শুনছে না : বিসিআই সভাপতি Nov 28, 2025
img
চালু হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম মাংসের খামার Nov 28, 2025
img
বিরল খনিজের সন্ধানে নজর ভারতের Nov 28, 2025