ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্তে নতুন আইন প্রস্তাব করল ভারত সরকার

ভারতে কোনো শীর্ষ রাজনীতিককে যদি গ্রেপ্তার করে ৩০ দিনের জন্য আটক রাখা হয়, তবে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে- এমন একটি বিল বুধবার উপস্থাপন করেছে সরকার। তবে বিরোধীরা একে সাংবিধানিক সুরক্ষাকে ধ্বংস করার এক ‘ভয়ংকর প্রচেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা অপরাধমূলক তদন্ত বা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন, যার মধ্যে গত বছর দুজন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও আছেন। তাদের একজন হলেন দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যিনি তার প্রশাসনের মদ লাইসেন্স বণ্টনে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কয়েক মাস কারাগারে ছিলেন।

তবে তিনি যেকোনো অনিয়ম অস্বীকার করে অভিযোগগুলোকে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে আখ্যা দেন।

অন্য আরেকজন হলেন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধীদলীয় রাজনীতিক হেমন্ত সোরেন। তাকেও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়। তিনিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বিলটি উত্থাপন করে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, সরকার চাইছে ‘নৈতিকতার গুরুত্ব বাড়ুক’।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো রাজনীতিককে যদি এক মাসের জন্য আটক রাখা হয় ও তার বিরুদ্ধে অন্তত পাঁচ বছরের সাজাযোগ্য অপরাধের অভিযোগ থাকে, তবে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মন্ত্রিত্ব হারাবেন।

ভারতের নির্বাচনসংক্রান্ত সংস্কার কাজে নিয়োজিত সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রিফর্মস হিসাব করেছে, ভারতের জাতীয় সংসদের মোট ৫৪৩ জন নির্বাচিত সদস্যের প্রায় অর্ধেকের বিরুদ্ধেই অপরাধমূলক মামলা আছে। এর মধ্যে ২১৫টি মামলার ১৭০টি গুরুতর অভিযোগ- যেমন ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা ও অপহরণ।

অমিত শাহ সংসদে বলেন, ‘আমরা এতটা নির্লজ্জ হতে পারি না যে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে আর আমরা তখনো সাংবিধানিক পদে থাকব।’

তবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্কসবাদী (সিপিআই-এম) নেতা জন ব্রিটাস সতর্ক করে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যুগে, যেখানে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো ব্যবহার করা হয়, সেখানে এ বিধানগুলো গোপন উদ্দেশ্যে অপব্যবহার হবে।’

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিলটিকে ‘বিচারিক পর্যবেক্ষণকে স্তব্ধ করা, সাংবিধানিক সুরক্ষা ধ্বংস করা ও জনগণের অধিকার পিষ্ট করার এক ভয়ংকর চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘এ কঠোর পদক্ষেপ ভারতের গণতন্ত্র ও ফেডারেল ব্যবস্থার মৃত্যুর সংকেত হয়ে আসছে।’

মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ফ্রিডম হাউস গত বছর বলেছিল, ‘মোদির বিজেপি ক্রমবর্ধমানভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছেন।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

সেই নাঈম আজ নিজের ঘরই রক্ষা করতে পারল না Nov 27, 2025
গাজীপুর-১: কর্মী সমর্থকদের আস্থার প্রতীক হুমায়ুন কবির খান Nov 27, 2025
গাজীপুরে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির প্রার্থনায় ভক্ত সমর্থকদের দোয়া Nov 27, 2025
img
নির্বাচনে দাঁড়াবো না, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার কোনো পরিকল্পনাও নেই : প্রেস সচিব Nov 27, 2025
এরশাদ হাসিনা গণতন্ত্র হত্যাকারী, দাবি রিজভীর Nov 27, 2025
img
জুলাই আন্দোলনে রাজনীতির নতুন ধারা শুরু হয়েছে : সাদিক কায়েম Nov 27, 2025
img
বাজে কথায় কান দিই না: সোলাঙ্কি রায় Nov 27, 2025
img
তামীরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় ৩০ নভেম্বর থেকে ক্লাস চালুর নির্দেশ Nov 27, 2025
img
ঢাকায় এলাকাভিত্তিক বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে দেবে ডিএনসিসি : প্রশাসক Nov 27, 2025
img
ধর্মজিকে হারিয়ে শূন্যতায় হেমা মালিনী Nov 27, 2025
img
তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: মিন্টু Nov 27, 2025
img
ব্যস্ততার মাঝে মা-বাবার অনুভূতি মনে রাখতে রুক্মিণীর পরামর্শ Nov 27, 2025
img
শেখ হাসিনার সাজা বাড়াতে আপিল করবে প্রসিকিউশন Nov 27, 2025
img
জাতিসংঘ ড. ইউনূসের সঙ্গে বেঈমানি শুরু করেছে : গোলাম মাওলা রনি Nov 27, 2025
img
ধারাবাহিকে ফিরছেন অভিনেত্রী অনামিকা চক্রবর্তী! Nov 27, 2025
img
কারওয়ান বাজারে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৩ ইউনিট Nov 27, 2025
img
সব কথা সন্তানদের বলা সম্ভব নয়: রুক্মিণী Nov 27, 2025
img
মগবাজারের দিলুরোডে বহুতল ভবনে আগুন Nov 27, 2025
img
ভারতের জমকালো বিয়েতে গান গেয়ে ২৩ কোটি পেলেন জেনিফার লোপেজ Nov 27, 2025
img
সেনা অভিযানে সারাদেশে আটক ৪৪ Nov 27, 2025