‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ভালো মানুষ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে আমার নাম দেখে আদালতে হাজির হতে যাই। কিন্তু সে সময় আদালতের গেইট থেকেই আমাদের অপহরণ করা হয়। পরে গুম করে চলে অমানুষিক নির্যাতন।’
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়েরের পর এমন অভিযোগ করেন সাঈদীর মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি।
তিনি আরও বলেন, পাক হানাদার বাহিনীরা আমার ভাইকে যখন হত্যা করে তখন আমি এবং আমার মা বাথরুমে লুকিয়ে সব দেখি। খুব কষ্ট পাচ্ছিলো আমার ভাই। বাড়ি-ঘরে আগুন দিলে পাক-বাহিনী চলে যাওয়ার পরে দৌড়ে যে বুকে জরিয়ে ধরি ভাইকে, আমার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। তবে এ ঘটনার সময় কোথাও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ছিলেন না। তাকে তো আমি তখন চিনতামও না।
সুখরঞ্জন বালি বলেন, এ ঘটনার অনেক পরে তিনি যখন আমাদের এলাকার এমপি হয়ে আসেন তখন আমি তাকে চিনেছি। অনেক ভালো লোক ছিলেন তিনি। আমি জানতামও না আমাকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলা হয়েছে। তার মত একটা ভালো মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে আমাকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে বলা হয়। তখন তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি আদালতে হাজির হয়ে সত্য সামনে আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালতের গেইট থেকেই সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ মারধর করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, পরে আমার চোখ বেধে কোথায় নিয়ে যায় আমি জানি না। পরে বুঝতে পারি তারা আমাকে বিএসএফের হাতে তুলে দিচ্ছে। ওরা আমাকে অনেক নির্যাতন করে। এক মামলায় আমাকে আসামি করে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখা হয়। নির্যাতনের জন্যে আমার এখন কিছু মনে থাকে না, হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে বলা হয়, তাকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছিল, গুম ও নির্যাতন করা হয়, এবং দীর্ঘদিন ভারতের কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়েছিল।
সুখরঞ্জন বালি ছিলেন সাঈদী মামলার রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি আদালতে সাঈদীর পক্ষে বক্তব্য দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আদালত চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে, তাকে ভারতের একটি কারাগারে পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
অনেক দিন নিখোঁজ থাকার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর দীর্ঘ সময় পর তিনি প্রকাশ্যে এসে নিজের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দায়ের করলেন।
টিকে/