জুলাই আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিলেন চিকিৎসক

‘জুলাই আন্দোলনকারীদের গুলি করা হয়েছিল উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে। এসব গুলি কারও কারও মাথায় লেগে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় বাধা দেন তৎকালীন সরকার-সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ তথা স্বাচিপের চিকিৎসকরা। এমনকি ‘‘সন্ত্রাসী’’ আখ্যা দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের সেবা দিতে বারণও করা হয়।’

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীর ডায়াসে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেন ডা. মোস্তাক আহমেদ। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এই চিকিৎসক। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

জবানবন্দিতে ডা. মোস্তাক বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্ট সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গুলিবিদ্ধকে চিকিৎসা দিই আমরা। ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চাকরির সুবাদে আগেও অনেক গুলিবিদ্ধের সেবা দিয়েছি। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতদের ধরন ছিল কিছুটা ভিন্ন। তাদের গুলির ডিরেকশন ছিল ওপর থেকে নিচের দিকে। সাধারণত ডিরেকশন থাকে নিচ থেকে ওপরে বা সমান্তরাল।’

এ সাক্ষী বলেন, রোগীদের কোনো উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। কোনো কোনো আহতের মাথায় গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। এছাড়া আন্দোলন চলাকালে একদিন একটি পরিবারের বাবা-ছেলে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা যান। এতে ছেলে আক্ষেপ করে বলেন- ‘বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।’ এমন ঘটনার সাক্ষী তিনি নিজেই হয়েছেন বলে জবানবন্দিতে তুলে ধরেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আহতদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ২০-৩০ বছরের মধ্যে। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মেডিকেলের শহীদুল্লাহ হল-সংলগ্ন গেট দিয়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে পরিচয় জানতে চাইতেন ছাত্রলীগের ছেলেরা। ছাত্র পরিচয় পেলে ঢুকতে বাধা দিতেন তারা। এছাড়া চিকিৎসা চলাকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা হাসপাতালে ঢুকে খোঁজখবর নিতেন আহত কারা। তখন গুলিবিদ্ধ ছাত্ররা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য আমাদের অনুরোধ করেন।’

স্বাচিপ চিকিৎসকদের নিয়ে ডা. মোস্তাক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে আমাদের অতিউৎসাহী হতে বারণ করেন আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত স্বাচিপের কতিপয় চিকিৎসক। তারা বলেন, ‘‘এরা সন্ত্রাসী। এদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।’’ এমনকি গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ায় গত বছরের ২৫ জুলাই আমাদের পাঁচজন চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করা হয়। আহতদের চিকিৎসায় বাধার উদ্দেশ্যেই তাদের বদলি করা হয়েছে।’

এ সময় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নৃশংসতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দায়ী করেন ঢামেক হাসপাতালের এই চিকিৎসক। একইসঙ্গে সেই সময়ে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালে আজ সাক্ষী দিয়েছেন আরও দুজন। তাদের একজন মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান এবং আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মনিরুল ইসলাম। আরও দুজনের সাক্ষ্য নেওয়ার কথা রয়েছে আজ। সবমিলিয়ে নবম দিনের মতো মোট ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ধার শোধ না করায় এসপি থেকে অতিরিক্ত এসপি হলেন নিহার রঞ্জন Aug 26, 2025
img
মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনকে পুশইন করল বিএসএফ Aug 26, 2025
img
সংবিধান পরিবর্তন মানবে না বিএনপি: মির্জা ফখরুল Aug 26, 2025
img
ব্যক্তিগত বাড়ির ছবি ফাঁস হওয়ায় ক্ষুব্ধ আলিয়া ভাট Aug 26, 2025
img
আগামী জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে : চরমোনাই পীর Aug 26, 2025
img
সিলেটে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়ে স্থগিত করল এনসিপি Aug 26, 2025
জীবনের শ্রেষ্ঠ কিছু মুহূর্ত Aug 26, 2025
img
প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে আনলেন লামিনে ইয়ামাল Aug 26, 2025
ফিক্সিংয়ে ধরা পড়লেন ; ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হচ্ছেন সাব্বির! | Aug 26, 2025
নরপিশাচ চারপাশে” উত্তরার ঘটনার প্রতিবাদে ইরফান সাজ্জাদ Aug 26, 2025
img
রুমিন ফারহানা হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন : আতাউল্লাহ Aug 26, 2025
img
বিশ্ব বাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম Aug 26, 2025
ছোট শহর থেকে বলিউডে, সালমানের ‘চুল কাটতে গিয়েই’ তারকা দর্শন Aug 26, 2025
পুরনো ভিডিও নিয়ে বিতর্কে প্রভার সাহসী বক্তব্য! Aug 26, 2025
যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে খুশি সিরিয়ার সরকার! Aug 26, 2025
বাগছাস নেত্রীকে ঘিরে ছাত্রদলের খুনসুটি কৌশল! Aug 26, 2025
দূর থেকে সালাম দিয়ে ভোট চাইলেন ছাত্রদল Aug 26, 2025
দেড় দশক ধরে ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে আছে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান Aug 26, 2025
শ্বশুরের বিচারপতি হওয়া নিয়ে মুখ খুললেন সারজিস আলম Aug 26, 2025
সাত মাসে ২২ প্রাণহানি! সীমান্তে নিরাপত্তার প্রশ্ন চরমে Aug 26, 2025