জাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মত লড়বেন নেপালি শিক্ষার্থী

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-জাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মত কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে তার বন্ধু ও বিভাগের প্রাক্তণরাও বেশ উচ্ছ্বসিত। নেপালের নাগরিক মো. আবিদ হুসাইন জাকসুতে স্বতন্ত্রভাবে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ছেন। ফার্মেসি বিভাগের এই শিক্ষার্থী থাকেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে।

আবিদের বাড়ি নেপালের বারা জেলায়। তারা তিন ভাই ও দুই বোন। নির্বাচিত হলে তিনি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন।

নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে বলতে গিয়ে আবিদ হুসাইন বলছিলেন, “জাহাঙ্গীরনগরে আপনি দেখবেন, অনেকেই পড়াশোনা শেষ করেও বেকার। ফলে শুধু ডিগ্রি নয়; সঙ্গে দক্ষতাও দরকার। যেমন বাইরে যাওয়ার জন্য আইএলটিএস, জিআরই। এগুলোর জন্য ছাত্ররা বাইরে গিয়ে অর্থ খরচ করে কোর্স করছে। কিন্তু সবার অর্থনৈতিক অবস্থা তো এক না। কিন্তু দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। “সেগুলো এখানে জাকসুর অধীনে করার চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে তাদের লাভ হবে। যারা অর্থের অভাবে করতে পারবে না, তাদের জন্য প্রয়োজনে তহবিল সংগ্রহের কথাও ভাবতে পারেন।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শিক্ষার্থীকে মানবসম্পদে পরিণত করা- এমন মন্তব্য করে আবিদ বলেন, “কিন্তু এখানে তার ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে দিন দিন আমরা শিক্ষিত হচ্ছি কিন্তু দক্ষতা ছাড়াই শিক্ষিত হচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন, তাদের সংগঠন আছে, এসবকে ‘ডিজিটাল’ প্রক্রিয়ায় আনতে চান বলেও জানান আবিদ।

পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সবার নিরাপত্তার বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে চান জাকসুর এই প্রার্থী। তার ভাষ্য, “বন্ধের দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ইকোপার্ক হতে দেওয়া যাবে না।”
জাকসুর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক পদে মোট আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে আবিদ হুসাইনের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের আবরার হক বিন সাজেদ।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক আবরার অবশ্য নেপালি শিক্ষার্থী আবিদের প্রার্থিতাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছেন।

তিনি বলছিলেন, “তিনি বিদেশি। অন্য দেশের নাগরিক জাকসুতে নির্বাচন করছে, আমরা পজিটিভলি দেখছি। জাহাঙ্গীরনগর যে বৈশ্বিক, জাহাঙ্গীরনগর যে সবার, তার প্রমাণই আবিদ। উনার প্রার্থী হওয়াকে আমি এবং আমার সংগঠন থেকে স্বাগত জানাই। উনার যে স্পিরিট, সেটা প্রশংসনীয়। আমি তাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে না।”

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী বলেন, “আবিদকে আমরা বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে দেখছি না। অন্যান্য ছাত্রদের মত সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমাদের দেশের অনেক ছাত্র দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে থাকে।”

আবিদ হুসাইন আর সন্তোষ চৌধুরী উভয়ই নেপালের বারা জেলার বাসিন্দা। সন্তোষও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখন নেপালের একটি ওষুধ কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি এক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন , “আবিদ আর আমার বাড়ি একই জেলায়। ওকে নিয়ে আমি গর্বিত।”

ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ওর সাহসী পদক্ষেপ মন্তব্য করে সন্তোষ চৌধুরী বলেন, “নেপাল থেকে যারা জাবিতে যাবে তাদের একটি ভরসার জায়গা হয়ে উঠবে আবিদ। এ ছাড়া জাবিরও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আবিরকে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখলাম। আবিদের সাহসেরও প্রশংসা করতে হয়। ভিন্ন দেশ, নতুন জায়গায় আসলে নানা সমস্যা তৈরি হয়, সে জায়গায় নেপাল থেকে জাবিতে কেউ গেলে আবিদ ভরসার একজন হবে। আবিদের জন্য শুভকামনা রইলো।”

ফার্মেসি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের নেপালি শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আনসারী এখন বসবাস করছেন কাতারে। সেখানে একটি প্রথম সারির ওষুধ কোম্পানিতে তিনি চাকরি করছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে জাকসু হলে ভালো লাগত। আমরা তো জাকসু পাইনি। শুনেছি, ৩৩ বছর জাকসু হচ্ছে। আর আবিদ শুধু নেপালি শিক্ষার্থীদের নয়; অন্যান্য দেশ থেকে কেউ আসলেও তাদের ভরসা হয়ে উঠবে বলে আশা রাখছি। আর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তো আবিদকে তাদের একজন করে আগেই নিয়েছে।

“আমি অনেক খুশি হয়েছি। আবিদের বক্তব্য শুনেছি। আবিদ নেপালি শিক্ষার্থীসহ পুরো জাবি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে বলে বিশ্বাস করি। আশা করি, ও নির্বাচনে জয়লাভ করবে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও ওর পাশে রয়েছে।”

নেপাল থেকে জাহাঙ্গীরনগরে এসে পড়াশোনা করছেন শামি। তিনিও জাকসু নির্বাচনের আবিদের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।

২৯ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে জাকসুর নির্বাচনি প্রচার। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গণনা শেষে সিনেট হল থেকে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এসএস/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
প্রেম করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন Dec 21, 2025
img
জানাজা শেষে ৬ শান্তিরক্ষী সেনার প্রতি রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা Dec 21, 2025
img
আচমকা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নোরা ফাতেহি Dec 21, 2025
img
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ Dec 21, 2025
img

বিবিএসের জরিপ

দেশের ৪৩ শতাংশ মানুষের নিজস্ব ফোন নেই Dec 21, 2025
img
আমি আপনাদের এলাকার জামাই, ভালোবাসা দিবেন : গিয়াস উদ্দিন তাহেরি Dec 21, 2025
img
কুয়াশার চাদরে ছেয়ে গেছে তেঁতুলিয়া, ফের কমল তাপমাত্রা Dec 21, 2025
হাদির জানাজায় এসে যা বললেন আহমাদুল্লাহ Dec 21, 2025
img
ভোট দেওয়ার জন্য সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি প্রবাসীর নিবন্ধন Dec 21, 2025
সোনাক্ষীর স্পষ্ট সিদ্ধান্তে নবদম্পতির সম্পর্কের সুস্থতা Dec 21, 2025
img
সম্পদ অর্জনে ইতিহাস গড়লেন ইলন মাস্ক, অঙ্ক ছুঁয়েছে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলারে Dec 21, 2025
img
জেমস বন্ডকে দেখা যাবে নেটফ্লিক্সে Dec 21, 2025
img
মিরপুরে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা Dec 21, 2025
img
বাড়ছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড সংঘর্ষ, বাস্তুচ্যুত লাখো মানুষ Dec 21, 2025
img
বিশ্বের দীর্ঘতম রাস্তা : ইউ-টার্নহীন ৩০ হাজার কিলোমিটারের বিস্ময়কর সড়ক Dec 21, 2025
img
২ ম্যাচ হাতে রেখেই অ্যাশেজ নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া Dec 21, 2025
img
মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্তি নিয়ে ঘোষণা আসতে পারে: মার্কো রুবিও Dec 21, 2025
img
কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ Dec 21, 2025
img
পুয়ের্তো রিকোতে মার্কিন সেনা মোতায়েন জোরদার Dec 21, 2025
img
বীর সন্তানকে সম্মাননা জানানো সবার দায়িত্ব : জামায়াতে আমির Dec 21, 2025