প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে খুবই সিরিয়াসলি নির্বাচন চাইছেন : জাহেদ উর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান জানান, গতকাল সারা দিন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল নানা গুজব, আলোচনা ও উত্তেজনায় ভরপুর। মূলত, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও ধারাবাহিক সংঘর্ষমূলক ঘটনার সূত্র ধরে দেশজুড়ে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি জানান, প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে তিনটি বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠক নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়-  তিনি কী বলেছেন, দলগুলো কী প্রতিক্রিয়া দিয়েছে- এসব বিষয়ে বিশ্লেষণ জরুরি।

এই বৈঠকের পরপরই হঠাৎ করে গুঞ্জন ছড়ায়, সেনাপ্রধান নাকি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই খবর ছড়ানোর পর রাজনীতিতে নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম হয়। অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, প্রধান উপদেষ্টা কি তবে পদত্যাগ করছেন? তিনি তো এর আগেও একবার পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তাহলে কি সেনাপ্রধান এখন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করছেন পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে? এসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ঘটনা ঘটতে থাকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ব্যক্তিগত ঘটনার সূত্র ধরে ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আহত হন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও বহিরাগতদের হামলার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালতে গোলযোগ ও সংঘর্ষ হয়।

ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ফেনীতে আওয়ামী লীগ মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। সম্প্রতি তার ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব নিয়ে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এইসব ঘটনাগুলো একত্র করলে বোঝা যায়, দেশে যেন একটা সুপরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে। এর পেছনে কে বা কারা রয়েছে, সেটা এখনো স্পষ্ট না হলেও, উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার- রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা।

তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যেই ছড়ানো হয় যে, সেনাপ্রধান ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে বৈঠক হয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি- কেউ বলছে হয়েছে, আবার কেউ বলছে হয়নি। সব মিলিয়ে প্রশ্ন ওঠে, সরকার কি এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারছে না? এত গোলযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতা- এসব ঠেকানো যাচ্ছে না কেন? ড. ইউনূস কি এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছেন, না কি তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন? অনেকেই মনে করছেন, এই গুজব ও পরিকল্পিত গোলযোগের পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে- ড. ইউনূসকে বিতর্কিত ও দুর্বল দেখানো। যেন তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার নেতৃত্বে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষমতা যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অন্যদিকে, কিছু মহল চাইছে নির্বাচন পেছাতে। এজন্য তারা নানা গুজব ও অস্থিরতা তৈরি করছে।’

তিনি বলেন, ‘১৩তম সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিও আবার আলোচনায় এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, আদালতের শুনানির মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা হবে, যদিও এটা আইনি বাস্তবতায় সম্ভব নয়। কারণ সংসদের মাধ্যমেই নতুন কাঠামো নির্ধারিত হতে পারে, আদালতের পক্ষে সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।’

সবশেষে জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘এখন সবচেয়ে জরুরি হলো- ড. ইউনূস যেন দায়িত্বে থাকেন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে তারপর দায়িত্ব ছাড়েন। কেউ যাতে তাকে জোরপূর্বক সরাতে না পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তারা আসলে দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধেই কাজ করছেন। তাই দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন তারেক রহমান Dec 22, 2025
img
রিমান্ডে নেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু Dec 22, 2025
img
১৬ বছরের দাম্পত্যের ইতি টানলেন অভিনেত্রী শ্রীনন্দা Dec 22, 2025
img
ব্রুনোর চোটের পরে স্বস্তির বার্তা, হতাশা সত্ত্বেও লড়াই অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন আমোরিম Dec 22, 2025
img
ওসমান হাদি হত্যার ঘটনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে : জাবের Dec 22, 2025
img
বিবাহিত হিরো ও হিরোইনের সিনেমায় আবেদন থাকে না : শাকিল খান Dec 22, 2025
img
হাদিকে স্মরণ করে বাংলাদেশ রেবেলসের নতুন দুই গান প্রকাশ Dec 22, 2025
img
আরশের সঙ্গে কাজ করতে চাই : তাসনুভা তিশা Dec 22, 2025
img
যদি তাদের অবস্থান জানতাম, ধরে ফেলতাম : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 22, 2025
img
নিজের জীবনের ডিপ্রেশন থেকেই তারা এই সব মন্তব্য করে: কোয়েল Dec 22, 2025
বরকতময় সকাল পাওয়ার উপায় | ইসলামিক টিপস Dec 22, 2025
img
বাবার বয়সী নির্মাতা, ভাবিনি তিনি জোরপূর্বক এমনটা করবেন: মালতি চাহার Dec 22, 2025
img
নতুন ৩ দফা ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের Dec 22, 2025
img
ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীকে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ Dec 22, 2025
img
বড়োদিন ও থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো ধরনের আতশবাজি ফোটানো যাবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 22, 2025
img
ক্যারিবীয় অঞ্চলে তেল ট্যাংকার জব্দ করল মার্কিন কোস্টগার্ড Dec 22, 2025
img
মব তৈরি করে প্রতিষ্ঠানে হামলা গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড: রিজভী Dec 22, 2025
img
এনসিপির মনোনয়ন সংগ্রহ করলেন জুলাই শহীদের বাবা Dec 22, 2025
img
বাইডেন-যুগের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করছে ট্রাম্প প্রশাসন Dec 22, 2025
img
২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর বন্ধ থাকবে জার্মান দূতাবাস Dec 22, 2025