পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঁধাকপি, যা পাতাকপি নামে বাংলাদেশে বেশি প্রচলিত। বহু গুণসম্পন্ন এই বাঁধাকপি শুধু সবজি হিসেবে নয়, জুস হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে আছে ভিটামিন-এ, বি১, বি২, বি৬, ই, সি, কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, পটাশিয়াম, সালফারসহ আরও নানা ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, প্রাচীন গ্রিক দেশে একাধিক রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হত বাঁধাকপির রসকে। বিশেষত কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমাতে গ্রিক চিকিৎসকেরা এই সবজির উপরই মূলত ভরসা করতেন। একই রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলতেন মিশরীয় মানুষরাও। তারাও শরীরে টক্সিনের পরিমাণ কমাতে প্রায় প্রতিদিনই বাঁধাকপি খেতেন।
আধুনিক চিকিৎসায় এই সবুজ গোলাকার সবজিটির প্রবেশ ঘটে ইংরেজদের হাত ধরে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশরাই সারা বিশ্বে বাঁধাকপির জয়গান গেয়ে বেড়িয়েছে। পুষ্টিগুণে ঠাসা এই সবজিটি খেলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। রক্তে সুগারের মাত্রাকে বেঁধে রেখে ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকার পথকেও প্রশস্ত করে।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে ১.৩ গ্রাম প্রোটিন, ৪.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি ও ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। তা ছাড়া ক্যালসিয়াম ০.৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ৬০০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যারোটিন ও ২৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি।
ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, বাঁধাকপি পাকস্থলীতে গিয়ে যখন হজম হতে থাকে, তখন এগুলো থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধী রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয়।
ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটের এই গবেষকরা বলছেন- বাঁধাকপি, ব্রোকোলি বা কেইল শাকের মত কিছু সবজি বাউয়েল বা মলাশয়ের ক্যান্সার ঠেকাতে পারে।
চলুন জেনে নিই নিয়মিত বাঁধাকপি খাওয়ার উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে যেসব রোগ এড়ানো যায়-
রোগ প্রতিরোধক
বাঁধাকপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
আলসার নিরাময়
বাঁধাকপি আলসার নিরাময়ে উপকারী। পাকস্থলীর আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপি বিশেষভাবে সহায়ক। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাঁধাকপির রস আলসারের জন্য সবচেয়ে উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ।
ওজন কমায়
বাঁধাকপিতে আছে টারটারিক অ্যাসিড। চিনি ও শর্করা রূপান্তর হয়ে শরীরে যে চর্বি জমে, টারটারিক অ্যাসিড এই চর্বি জমতে বাধা দেয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাঁধাকপি রাখুন।
মাথাব্যথা দূর করতে সহায়তা
যাদের মাঝেমধ্যেই মাথা ধরে, তারা প্রতিদিন অন্তত একবেলা বাঁধাকপি খাদ্য তালিকায় রাখুন। এটি মাথাব্যথা দূর করতে সহায়তা করবে।
হাড়ের ব্যথা দূর করতে সহায়তা
বাঁধাকপির রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ। যা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা প্রশমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
রক্তস্বল্পতা দূর করে
বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর আয়রন। তাই যাদের রক্তস্বল্পতা আছে, বাঁধাকপি তার জন্য অবশ্য খাদ্য।
ত্বকের সুরক্ষায়
বাঁধাকপি সব ধরনের ত্বকের সুরক্ষা দেয়। একদিকে যেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, তেমনি ত্বকের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
তারুণ্য ধরে রাখে
বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিনগুলো শরীরের রক্তনালী সবল ও শক্তিশালী রাখে। এ জন্য মুখে বয়সের ছাপ পড়ে খুব ধীরে।
টাইমস/জিএস