রাশিয়ার সঙ্গে কোনও আঁতাত করেননি ট্রাম্প

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো যোগসাজশের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এ সংক্রান্ত বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলার। মার্কিন নির্বাচনে রুশ সংযোগ নিয়ে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই উল্লেখ করেছেন তিনি। ২৪ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেওয়া মুলারের তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে এমনটাই উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সোমবার বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে মুলারের তদন্ত বিষয়ে দাখিল করা এক সারসংক্ষেপের বরাত দিয়ে এ কথা জানানো হয়।

তবে রবার্ট মুলারের তদন্তে ট্রাম্প বাধা দিয়েছিলেন কি না, প্রতিবেদনে সে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। এ ধরনের কোনও ঘটনায় তাকে দায়ী করা হয়নি কিংবা কোথাও তার দায়মুক্তির কথাও বলা হয়নি।

বিবিসি জানায়, রোববার দেশটির কংগ্রেসে ওই তদন্তের সারসংক্ষেপ দাখিল করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার কংগ্রেসম্যানদের কাছে সেই সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন।

বিবিসি আরও জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পদকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে এ তদন্ত বাধাগ্রস্ত করেছেন কিনা- সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কোনো উপসংহার টানেননি মুলার। আবার ট্রাম্পের কোনো দায় ছিল না- এমন কথাও সেখানে বলা হয়নি।

উইলিয়াম বার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে ‘স্পেশাল কাউন্সেল (রবার্ট মুলার) বিগত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা ট্রাম্পকে রাশিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করার প্রমাণ পাননি।’

এদিকে ট্রাম্প বিগত দুই বছর ধরে চলা মুলারের তদন্ত পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, এর আগে এমন অভিযোগও তোলা হয় বিরোধী পক্ষসহ বিভিন্ন মহল থেকে।

সেই প্রসঙ্গে উইলিয়াম বার আরও জানান, এ বিষয়ে যা উপাত্ত পাওয়া গেছে ‘তা মি. প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) তদন্ত পরিচালনায় বিঘ্ন বা হস্তক্ষেপ করেছেন তা প্রমাণে যথেষ্ট নয়।’

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ট্রাম্প লেখেন, ‘কোনো যোগসাজশ নেই, কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’

বিগত দুই বছর ধরে নানা সময়ে ট্রাম্প এ প্রতিবেদন পরিচালনা না করার ব্যাপারে আহ্বান জানাচ্ছিলেন। তিনি বারবার নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে তার কোনো যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময়ে এটিকে তিনি ‘উইচ হান্ট’ বলে মন্তব্য করেন।

রোববার টুইটারে এ প্রসঙ্গেই ট্রাম্প লেখেন, ‘এটা লজ্জার যে আমার দেশকে এ প্রতিবেদনের ভেতর দিয়ে যেতে হলো।’ এটি একটি ‘অবৈধ পদক্ষেপ ছিল, যা বিফল হয়েছে।’

অন্যদিকে মুলারের এ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ছোটখাটো বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমালোচনা শুরু হয়েছে ট্রাম্পের বিরোধী শিবিরে।

২০১৬ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। অভিযোগ রয়েছে, এই নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে মস্কো প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল, যাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পালন করেছিল বড় ভূমিকা। সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর এ বিষয়ক তদন্তে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ উঠেছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে।

এবার তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা না হলেও নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, মুলারের তদন্তে ট্রাম্পের আধা ডজন সহযোগী অভিযুক্ত হয়েছেন। এদের কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিতও হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর মধ্যে অসত্য সাক্ষ্য দেওয়াটাই প্রধান। বাকিদের বিরুদ্ধে থাকা তদন্ত কার্যক্রম অন্যান্য তদন্তকারীদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। ট্রাম্পের সহযোগী ছাড়াও রুশ প্রতিষ্ঠান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও অন্যান্য নাগরিকরা মুলারের তদন্তে অভিযুক্ত হয়েছেন।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের’ (এফবিআই) জেমস কোমিকে অপসারণের পর বিশেষ তদন্তকারী রবার্ট মুলারকে ২০১৭ সালের মে মাসে দায়িত্ব দেওয়া হয় মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনার জন্য। আগে তিনি তদন্তটির তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিলেন। মুলার এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান। মার্কিন আইন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের পদেও কাজ করেছেন তিনি। শুক্রবার (২২ মার্চ) মুলার তার তদন্ত প্রতিবেদন আইনমন্ত্রী উইলিয়াম বারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। তিনি প্রতিবেদনের বিষয়ে কংগ্রেসকে দ্রুত অবহিত করার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার এর সারসংক্ষেপ জানিয়ে কংগ্রেসের কাছে চিঠি লিখেছেন।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১৭ দিন ভারতের স্কুলে স্কুলে চলবে মোদির জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র Sep 18, 2025
img
যারা বাঁশ দিয়েছ এবং নিয়েছ সবাইকে শুভেচ্ছা : কুদ্দুস বয়াতি Sep 18, 2025
img
বিশ্ব বাঁশ দিবস আজ Sep 18, 2025
img
১৭ বিয়ে করা বন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিলো পুলিশ Sep 18, 2025
img
মাসিক ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সে কমবে ঋণ নির্ভরতা Sep 18, 2025
img

অপেক্ষাকাল কমছে

সরকারি কর্মচারীদের অবসরে বাড়ছে সুবিধা Sep 18, 2025
img
ডিএসইতে প্রথম ঘণ্টায় লেনদেন ১৫০ কোটি টাকা Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলের সন্তোষ প্রকাশ Sep 18, 2025
img
সম্মেলনের আগে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ ফজলুর রহমানের Sep 18, 2025
img
‘বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানকে পাকাপোক্ত করতে হবে’ Sep 18, 2025
img
পাইক্রফটকে ‘ভারতের প্রিয় ম্যাচ রেফারি’ বললেন রমিজ রাজা Sep 18, 2025
img
পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি Sep 18, 2025
img
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো নিষিদ্ধ হয়ে যাক : ঐশী Sep 18, 2025
img
প্রতিটি ভোটারের আস্থা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব : তারেক রহমান Sep 18, 2025
img
দ্বিতীয় দিনের মতো ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছেন নাহিদ Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশে সবচাইতে আগে জরুরি জাতীয় নির্বাচন : জিল্লুর রহমান Sep 18, 2025
img
মেটা উন্মুক্ত করলো নতুন ডিসপ্লে স্মার্ট গ্লাস Sep 18, 2025
img
গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল: বার্নি স্যান্ডার্স Sep 18, 2025
img
ঢাকায় আজ বিক্ষোভ করবে জামায়াতসহ ৭ দল Sep 18, 2025
img
জয়পুরহাটে ছাত্রদলের সম্মেলন ব্যর্থ, ৭ নেতাকে বহিষ্কার Sep 18, 2025