বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগ এবং ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এসব দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা একজোট হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
বুয়েটের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ কে মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছুটির দিনেও সভায় বুয়েটের সর্বমোট ৪০০ শিক্ষকের মধ্যে অন্তত ৩০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি একেএম মাসুদ বলেন, 'বুয়েটের শিক্ষক পরিবার আবরারের পরিবারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। বুয়েটের আমরা শিক্ষক সমাজ এবং প্রশাসনের যারা রয়েছেন তারা ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আগে থেকে পদক্ষেপ নিলে আজকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না, এর দায় আমরাও নিচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত আইন ট্রাইব্যুনালে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।ছাত্রদের যে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম রয়েছে তা যেন এ সময়ের ভেতরেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবাসিক হলগুলো থেকে বহিরাগত অপসারণ এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা সরকারের হস্তক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।'
'আমরা বুয়েট থেকে ছাত্র এবং শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ রাজনীতির কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা রাজনৈতিক দলের কাছে অনুরোধ করব বুয়েট থেকে যেন রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে তারা সহযোগিতা করেন। ক্যাম্পাসের পরিবেশ উন্নতির জন্য আমরা নিজেরাও কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জড়িত হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ছাত্রদের র্যাগিং এবং নির্যাতনের সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং জরুরি ভিত্তিতে এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।'
তিনি আরো ও বলেন, 'বর্তমান উপাচার্যের কাজের অদক্ষতা নিষ্ক্রিয়তার কারণে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শিক্ষক সমাজ তার এ অদক্ষতা ও নির্লিপ্ততার কারণে বুয়েটের ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি এবং তিনি যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে সরকারের হস্তক্ষেপে যেন তাকে অপসারণ করা হয়।'
এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম বলে ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ১৪ তারিখের নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষাও স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে প্রতিবাদের মুখে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট মো. জাফর ইকবাল খান পদত্যাগ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার ও ডিএসডব্লিউ’র কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সমাবেশে তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে, সব অঞ্চলে দুর্নীতি লুণ্ঠন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্যমঞ্চ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করেছে ছাত্রলীগ। বুধবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় ছাত্রদলের সহসভাপতি মিজানুর রহমান নাহিদ এবং যুগ্ম-সম্পাদক মিজানুর রহমান শরীফ গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় জবি ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক আলী হাওলাদার ও ছাত্রদল কর্মী জাহিদকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
এছাড়া হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। বুধবার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশ’র পাদদেশে বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগ।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে ছাত্রশিবির। সকালে রাজধানীর কুড়িল এলাকায় ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার নেতাকর্মীরা মিছিল সমাবেশ করে।
এছাড়া বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী সকল চুক্তি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রংপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রদল।
অপরদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো। বুধবার রাজধানীতে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-ডিকাব আয়োজিত ডিকাব টক অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি জানান।
ডিকাব টক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে আমরা ব্যথিত। এই হত্যাকাণ্ডের আমরা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। এ বিষয়ে জাতিসংঘ থেকে একটি বিবৃতিও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের এক বার্তায় বলা হয়, ‘বুয়েটে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত। যুক্তরাজ্য বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রসঙ্গে নিঃশর্তভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ। এর জেরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
টাইমস/টিআর/এমএস/এসআই