সম্প্রতি বাংলাদেশ, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ আলোচনায় এসেছে। বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি খুব বেশি দিন স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে, দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে একজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ দুই জন দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
তবে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর পিএইচডি করা গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল গণমাধ্যমকে বলেন, “একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, আক্রান্তের শরীরে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়।”
এই বিজ্ঞানীর মতে, “করোনাভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি গবেষণা হচ্ছে চীনে। পৃথিবীর কোথাও এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি যে, কেউ দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাংলাদেশে যেহেতু গবেষণা নেই, সে কারণে নানা রকমের সংবাদের জন্ম হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান বা চীনে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সংবাদ আসার পর তারা গবেষণা করে মোটামুটি সিদ্ধান্তেও পৌঁছে গেছেন যে, কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হননি।”
দ্বিতীয়বার আক্রান্তের যে সংবাদ এসেছে সে বিষয়ে ড. বিজন বলছিলেন, “এক্ষেত্রে দুটি ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। প্রথমবার পরীক্ষায় যখন একজন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছিলেন, তখন হয়তো তিনি পজিটিভ ছিলেন না। রিপোর্ট ভুল এসেছিল। অথবা তিনি আসলেই পজিটিভ ছিলেন। কিছুদিন পর দ্বিতীয়বারের পরীক্ষায় যখন তার নেগেটিভ আসলো, তখন হয়তো তিনি নেগেটিভ ছিলেন না। এ ক্ষেত্রেও ভুল রেজাল্ট এসে থাকতে পারে।”
ড. বিজন বলেন, “এই ভাইরাসটি নতুন। কিন্তু, আমার কাছে নতুন নয়। করোনাভাইরাসের সঙ্গে সার্স ভাইরাসের ৮২ শতাংশ মিল আছে। সার্স ভাইরাস আমরা সিঙ্গাপুরের ল্যাবে তৈরি করেছি, গবেষণা করেছি, শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করেছি ২০০৩ সালে। এখন করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছি, কিট উদ্ভাবন করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখন পর্যন্ত কেউ দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবে করোনাভাইরাস ও শনাক্তের পদ্ধতি নিয়ে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করছেন। অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিট ছাড়াও আরও কিছু পদ্ধতি ইতিমধ্যে উদ্ভাবন করেছেন। যার ঘোষণা দিতে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। তবে ড. বিজন মনে করছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
টাইমস/জিএস