দেশের স্মার্ট লাইসেন্স প্রকল্প ভারতীয় ফেরারী কোম্পানীর কব্জায়

মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। স্মার্টকার্ড, এনআইডি কার্ড, ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরির কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি নিজ দেশেই আধার কার্ড প্রকল্পে অংশ নেয়ার ব্যাপারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে।

এছাড়া মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের ৯ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ঘুষ লেনদেন, কাজে অনিয়ম, চুক্তি ভঙ্গসহ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে রয়েছে ডজনখানিক অভিযোগ। শ্রীলঙ্কাতেও কালো তালিকাভুক্ত এই কোম্পানি।

কিন্তু এত কিছু জানার পরও অজানা এক রহস্যজনক কারণে বিতর্কিত এই কোম্পানীর ওপরেই ভরসা রেখেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)।

জানা গেছে, বিআরটিএ’র মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ডিজিটাল স্মার্টকার্ড প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। বিতর্কিত এই কোম্পানী কিভাবে বাংলাদেশের কাজ পেয়েছে তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

বিআরটিএর একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানিয়েছে, মোটর সাইকেলের ডিজিটাল স্মার্ট লাইসেন্স কার্ড সরবরাহের জন্য প্রথম ২০১৯ সালে টেন্ডার আহ্বান করে বিআরটিএ। কিন্তু তারপরে নানা অজুহাতে চারবার টেন্ডার চুড়ান্ত করার দিন পাল্টানো হয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় বিতর্কিত ওই কোম্পানীকে কাজ পাইয়ে দিতেই মুলত চারবার টেন্ডার বাতিল করে বারবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।

সূত্রটি বলছে, বিআরটিএর দরপত্রের শর্ত ছিল, বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে দরদাতার বিরুদ্ধে কোনো মামলা থাকা চলবে না। কিন্তু মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের নামে কেনিয়ায় মামলায় থাকায় তারা ২০১৯ সালে বিআরটিএর টেন্ডারে অংশ নিতে পারেনি। আর তাই, বিআরটিএর একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভারতীয় বিতর্কিত কোম্পানীকে কাজ পাইয়ে দিতে নানা অজুহাতে দফায় দফায় টেন্ডার বাতিল করেছে। পরে শর্ত অনুযায়ী মামলার পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর নামমাত্র টেন্ডারে বিআরটিএর কাজ পেয়ে যায় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি)।

সূত্রটি আরও জানায়, বিআরটিএর ওই টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল ফরাসি কোম্পানী সেল্প এসএএস। কিন্তু ভারতীয় কোম্পানীটি অবৈধ উপায় অবলম্বন করে সর্বনিম্ন দরের বিষয়টি অবগত হয়ে যায়। জানা গেছে, ভারতীয় কোম্পানীটি ফরাসি কোম্পানীর সমস্ত তথ্য কৌশলে হাতিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় বিআরটিএ-কে ফ্রান্সের সেল্প এসএএস চিঠি দিয়ে জানায়। কিন্তু বিআরটিএ সেই অভিযোগ আমলে নেয়নি।

এব্যাপারে সেল্প এসএএস-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি কাজী আশিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে নিশ্চয় গোপন কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে। প্রথম যখন টেন্ডার হলো তখন আমরা লোয়েস্ট ওয়ান হয়েছিলাম। সে সময় মাদ্রাজ সিকিউরিটির নামও আসেনি। এভাবে তিনবার টেন্ডার বাতিল হয়ে যায়। চতুর্থবারে এসে মাদ্রাস প্রিন্টার্স কাজ পেয়ে যায়। যা বিআরটিএ-র কারসাজি ছাড়া কিছু না।

এদিকে টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো স্মার্ট কার্ড পাননি গ্রাহক। এতে সেবা বঞ্চিতদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভারতের আধার কার্ড প্রকল্পের কাজ পেয়েছিলো মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি)। কিন্তু নাগরিকদের তথ্য পাচারের অভিযোগে ওই কোম্পানির ওপর আজীবনের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার।

এমনকি ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের সামাজিক সুরক্ষা সেবা ‘মি সেবা’ থেকেই মাদ্রাজ প্রিন্টার্সকে বের করে দেয়া হয়। ভারতীয় সরকার নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ্য করে, বিতর্কিত কোম্পানিটি ভবিষ্যতে ভারতে কোনো ধরণের টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না।

শুধু ভারতেই নয়, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের বিরুদ্ধে অনিয়ম, জালিয়াতি, তথ্য পাচার ও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়াতে। এরই মধ্যে কেনিয়া সরকার মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের শীর্ষ ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করেছে।

এব্যাপারে বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, শর্তে বলা আছে, পাঁচ বছরের মধ্যে মামলা থাকলে টেন্ডারে অংশ নিতে পারবে না। আমরা দেখেছি, যারা টেন্ডারে অংশ নিয়েছে তাদের গত ৫ বছরে কোনো মামলা নেই। এছাড়া আমাদের ইভাল্যুয়েশন কমিটি তো আছেই। তারা খুব বেশি সময় দিতে চান না। তাই আমাদের অল্প সময়ের মধ্যেই সব করতে হয়। মহামারীর কারণে অনেক সদস্যই সময় দিতে পারেনি।

শীতাংশু শেখর বিশ্বাস আরও বলেন, বিশদ কমিটি অনুমোদন দেয়ার পরই মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সকে কাজ দেয়া হয়েছে। এখানে কিছু করার নেই। তবে পার্ফরমেন্স করতে গিয়ে যদি মাদ্রাজ প্রিন্টার্স কোনো ঘাটতি করে, তাহলে আমরা শর্ত মতে ব্যবস্থা নেবো।

 

টাইমস/আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘তদন্ত ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের শাস্তি দেওয়া যাবে না’ Jul 04, 2025
img
মাম্মুট্টির অভিনয় যাত্রা এখন কলেজের পাঠ্যসূচিতে Jul 04, 2025
img
নির্বাচন পদ্ধতি বদল নিয়ে রাজনীতিতে জটিল সমীকরণ, বাড়ছে মতবিরোধ Jul 04, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযানে চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড Jul 04, 2025
img
জোতার মৃত্যুতে কাঁদছে ফুটবল বিশ্ব Jul 04, 2025
img
হঠাৎ অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি স্বস্তিকা দত্ত Jul 04, 2025
img
ভিয়েতনামের পণ্যে শুল্ক ছাড়, আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা Jul 04, 2025
img
ওয়ানডে ও টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা তারকাদের দলে গিল Jul 04, 2025
img
গাজার মানুষ নিরাপদে থাকুক, এটাই চাই : ট্রাম্প Jul 04, 2025
img
দেশের বাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম Jul 04, 2025
img
পাবনায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩ Jul 04, 2025
img
কেন পরিচালকের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন পরেশ রাওয়াল? Jul 04, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৪ হাজার ৮৬৪ হাজি Jul 04, 2025
img
ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমলেও বেড়েছে রপ্তানি ও রাজস্ব আয় Jul 04, 2025
img
বার্সা-রিয়ালের দুই মহারণ চূড়ান্ত, আবারও প্রাণ ফিরছে ক্যাম্প ন্যুতে Jul 04, 2025
img
ঢাকায় এক দিনে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা Jul 04, 2025
img
মুগদায় জনতার পিটুনিতে তরুণের মৃত্যু Jul 04, 2025
img
অবশেষে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব নিচ্ছে নৌবাহিনী Jul 04, 2025
img
তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলো রাশিয়া Jul 04, 2025
img
না ফেরার দেশে জোটা, স্তব্ধ লিভারপুল Jul 04, 2025