সিলেটে ভয়ংকর দুই হ্যাকার, প্রতিমাসে আয় দেড় লাখ টাকা!

মামুন মিয়া ও আফজাল হােসেন রিমনের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে এবং ইউটিউব থেকে দেখে দেখে তারা ভয়ংকর হ্যাকার হয়ে উঠে। তাদের টার্গেট লন্ডন প্রবাসীদের ফেইসবুক একাউন্ট। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন একাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তারা প্রতিমাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গত ৮ মাসে প্রায় ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই ভয়ঙ্কর সাইবার প্রতারকচক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, এ চক্রের প্রধানসহ দুজনকে পাকড়াও করেছে র‌্যাব। আরেক প্রতারককে ধরতে চলছে অভিযান।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতো প্রতারক চক্রটি। একসময় হ্যাকিং করা এ প্রতারক চক্রের নেশা ও এর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ পেশা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে অর্থ কামিয়ে উন্নত জীবনযাপন করা এবং অল্প সময়ে ধনী হওয়াই তাদের লক্ষ্য ছিলো।

সিলেটে গড়ে উঠা এই সাইবার প্রতারক চক্রটি প্রবাসী, বিত্তশালী ও সমাজে প্রতিষ্ঠিতদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে ইতোমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। তীক্ষ্ম নজরদারি আর গভীর তদন্তের মাধ্যমে অবশেষে এ চক্রের প্রধানসহ দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৯।

র‌্যাব জানায়, সাইবার প্রতারকচক্রের প্রধান মাে. মামুন মিয়া (২০) ও তার অন্যতম সহযোগী আফজাল হােসেন রিমনকে (২০) আটক করা হয়েছে। মামুন সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মান্নারগাঁও গ্রামের মাে. মিরাশ আলীর ছেলে। সে নগরীর চৌকিদেখি ১নং রােডের ২৩/১ নং বাসার ৪র্থ তলায় ভাড়াটে থাকতো। মামুনের সহযোগী রিমন একই থানার গোপালপুর গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে।

এদিকে, এ চক্রের আরেক প্রতারক জাবের আহম্মেদ (২৯)-কে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি র‌্যাব। তবে তাকে ধরতে অভিযান চলছে। জাবের দোয়ারাবাজার থানার বসরপুর গ্রামের মাে. তফসির উদ্দিনের ছেলে।

র‌্যাব-৯ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে একটি সাইবার প্রতারকচক্র ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকের মাধ্যমে প্রবাসী, দেশের বিত্তশালী ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো। সে টাকাগুলো জমা হতো প্রতারকচক্রের সদস্যদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এ বিষয়ে তদন্তে নামে র‌্যাব-৯। তীক্ষ্ম নজরদারী আর গভীর তদন্তের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় বিকাশের টাকা উত্তোলনের সূত্র ধরে র‌্যাবের একটি দল নগরীর চৌকিদেখিতে অভিযান চালিয়ে সাইবার প্রতারকচক্রের প্রধান মামুন মিয়াকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টায় সুনামগঞ্জ থেকে মামুনের অন্যতম সহযােগী আফজাল হােসেন রিমনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানায়, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেটে এবং ইউটিউব থেকে হ্যাকিং বিষয়ক ভিডিও দেখে সে হ্যাকিং শিখে। একপর্যায়ে মামুন হাকিংয়ে দক্ষ হয়ে উঠে এবং একের পর এক প্রবাসী, বিত্তশালী ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে থাকে।

হ্যাক করার পর ওই অ্যাকাউন্টের ফ্রেন্ড লিস্ট পর্যবেক্ষণ করে আইডি'র মূল মালিকের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুর কাছে অতি প্রয়োজন দেখিয়ে, আকস্মিক কোনো সমস্যা অথবা কোনো দরিদ্র লােকের চিকিৎসার কথা বলে টাকা চাইতো এবং বিকাশের মাধ্যমে সে টাকা নিয়ে আসতো। পরে সে টাকা মামুন তার দুই সহযোগী রিমন ও জাবেরের মাধ্যমে সিলেট এবং সুনামগঞ্জের বিভিন্ন বিকাশ পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করতাে।

প্রতারণার লক্ষ্যে মামুন, রিমন ও জাবের প্রায় দুইশ জনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মেসেজ দিতো। যারা তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতেন তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো বড় অংকের টাকা। এভাবে তারা মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on: